সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বাবার পরিচয়ের আশায় আদালতপাড়ায় সাড়ে তিন বছরের আফিয়া

জেলা প্রতিনিধি, মাদারীপুর
প্রকাশিত: ০১ জুন ২০২৫, ১০:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

বাবার পরিচয়ের আশায় আদালতপাড়ায় সাড়ে তিন বছরের আফিয়া

সাড়ে তিন বছরের অবুঝ শিশু আফিয়া। জন্মের পর থেকেই পিতৃপরিচয়ের আশায় মায়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে আদালতপাড়ায়। তবে ছোট্ট আফিয়া জানে না—সে আদৌ কোনোদিন তার বাবার পরিচয় পাবে কি না। আফিয়ার মা বিউটি আক্তারও আজ পর্যন্ত জানেন না তার সন্তানের পিতার পরিচয়।

বিউটি আক্তার (ছদ্মনাম) ২০১৯ সালে তার সৎ মা কাজল বেগমের দ্বারা বিক্রি হয়ে যান একটি যৌনপল্লীতে। সেখানেই তিনি গর্ভবতী হন। পরবর্তীতে যৌনপল্লীর লোকজন তাকে ফেলে দিয়ে যায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের কলাবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে। ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি রাত ১২টার দিকে সদর মডেল থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিউটিকে পাঠানো হয় ফরিদপুরের একটি ‘সেইফ জোনে’।
সেখানে সিজারিয়ানের মাধ্যমে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক কন্যাশিশু, যার নাম রাখা হয় আফিয়া। ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে আফিয়া। কিন্তু আজও তার বাবার পরিচয় অজানা।


বিজ্ঞাপন


এদিকে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে বিউটির। তিনি নিজেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান, চান একটি কর্মসংস্থান—যাতে নিজের ও মেয়ের জন্য নিরাপদ জীবন গড়তে পারেন।

অন্য শিশুদের মতো আফিয়াকেও সুরক্ষা ও ভালোবাসায় বড় করতে এবং তার মাকে পুনর্বাসন দিতে ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আদালত। মাদারীপুর শিশু আদালত জানিয়েছে, মা-মেয়ের দায়িত্ব নিতে চাইলে কেউ আবেদন করলে যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রোববার বিকেলে শিশু আদালতের বিচারক শরীফ এএম রেজা জাকের-এর নির্দেশে পুলিশি নিরাপত্তায় আফিয়া ও বিউটি আক্তারকে বরিশালের সেইফজোনে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেখানে বিউটি আপাতত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন, যাতে ভবিষ্যতে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

বিউটি আক্তার বলেন, ‘আমি ও আমার মেয়েও অন্যদের মতো বাঁচতে চাই। প্রয়োজনে কাজ করে খাব, কিন্তু বন্দিজীবনে আর ফিরতে চাই না। আমার সৎ মা আমাকে বিক্রি করে দেওয়ার পর থেকেই আমার জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে। আদালতের সহায়তায় সেই অন্ধকারে একটু আলো দেখতে চাই। আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা হয়—তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’


বিজ্ঞাপন


ফরিদপুর জেলা পুলিশের এএসআই মোহাম্মদ আব্দুর সবুর মিয়া বলেন, ‘ফরিদপুর সেইফজোন থেকে মা-মেয়েকে মাদারীপুর আদালতে নিয়ে আসা হয়। তাদের দেখে সত্যিই মায়া লাগে। যদিও বিষয়টি জটিল, তারপরও শিশুটির পিতাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বিভিন্ন মাধ্যমে।’

মাদারীপুর শিশু আদালতের পেশকার জালাল মোল্লা বলেন, ‘মা ও মেয়ের জন্য বিশেষ কিছু করার চিন্তা করছে আদালত। মেয়েটিকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেউ যদি তাদের দায়িত্ব নিতে চান, আদালতে আবেদন করতে হবে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ss

মাদারীপুর আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এই ঘটনায় মেয়েটির মা ও বাবাকে আইনের আওতায় আনা উচিত। মেয়েটি তার জেলার নাম বলতে পারলেও পুরো ঠিকানা বলতে পারছে না। অল্প বয়সে তার মা তাকে যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দিয়েছিল। এতে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক একটি ঘটনা।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর