নড়াইল জেলায় ছোট-বড় ১৩–১৪টি হাটে কোরবানির পশুর বেচাকেনা জমে উঠতে শুরু করেছে। ঈদুল আজহা সামনে রেখে জেলার খামারিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন পশুর পরিচর্যায়। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হয়েছে ষাঁড়, গাভী, ছাগল ও ভেড়া। কোরবানিকে ঘিরে জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৪ হাজার ৫৮৫টি গবাদি পশু।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় চাহিদা পূরণ করেও প্রায় ১৪ হাজার ৬৯টি পশু অতিরিক্ত বিক্রি করা সম্ভব হবে।
বিজ্ঞাপন
জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলার সদর উপজেলায় ১৬ হাজার ২৭৫টি পশু প্রস্তুত করা হলেও কোরবানির জন্য চাহিদা রয়েছে ১১ হাজার ৪৭১টি পশু।এ উপজেলায় উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা ৪ হাজার ৮০৪টি। লোহাগড়া উপজেলায় ২০ হাজার ৩২৫টি পশু প্রস্তুত করা হলেও কোরবানির জন্য চাহিদা রয়েছে ১৯ হাজার ১৪৮টি পশু। এ উপজেলায় উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা ১ হাজার ১১৭টি। কালিয়া উপজেলায় ১৭ হাজার ৯৮৫টি পশু প্রস্তুত করা হলেও কোরবানির জন্য চাহিদা রয়েছে ৯ হাজার ৮৯৭টি পশু। এ উপজেলায় উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা ৮ হাজার ৮৮টি। অনেক খামারি ঈদের আগে ক্রেতাদের ক্রয় করা গরু বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার সুবিধা দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। ক্রেতারাও বাড়তি ঝামেলা এড়াতে সেই সুযোগ গ্রহণ করে খামারেই কোরবানির গরু কিনছেন।

সরেজমিন ঘুরে জেলার মাইজপাড়া হাট, নাকসী বাজার, লোহাগড়া বাজার, শিয়রবর, লাহুড়িয়া, দিঘলিয়া, পশুর হাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি পশুর হাটে বিপুল পরিমাণ গরু-ছাগল, মহিষ বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা।
বিক্রেতারা বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর দেশী পদ্ধতিতে আমরা গরু-ছাগল মোটাতাজা করতে টাকা খরচ করেছি। তাই কোরবানির হাটে পশুগুলোর দাম একটু বেশি রয়েছে। কিন্তু আমরা যদি গরুর দাম দেড় লাখ চাই তাহলে ক্রেতারা তার দাম বলেন ৮০ থেকে ৯০ হাজার আর যদি এক লাখ চাই তাহলে ক্রেতারা বলেন ৬০ থেকে ৭০ হাজার। কোনো কোনো ক্রেতা দাম বেশি দিয়ে কিনে নেন। আবার কিছু ক্রেতা দাম শুনে চলে যান। বেশি দামে বিক্রি করতে না পারলে তাদের অনেক লোকসান গুনতে হবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
বিজ্ঞাপন

লোহাগড়া হাটে গরু কিতে আসা উপজেলার চাচই গ্রামের শিকদার আবু তাহের জানান, হাটে গরু প্রচুর কিন্তু দাম বেশি। তার পরও কোরবানির গরু কিনতেই হবে। কোরবানি দিতে হবে একটু আগে থেকে কিনে রাখতে চেয়েছি এই জন্য হাটে আসা কিন্তু দাম বেশি।
গরু কিনতে আসা আর এক ক্রেতা মরিচ পাশা গ্রামের জহুরুল হক মিলু জানান, ঈদের শেষ সময়ে গরুর একটু দাম থাকবেই সেটা আমরাও জানি। এজন্য আগে ভাগে কিনতে এসেছি। তারপরও তুলনামুলকভাবে হাটে গরুর দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে।

আরও কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, কোরবানির পশু কেনার জন্য হাটে এসেছি। কিন্তু বিক্রেতারা গত বছরের চেয়ে এ বছর দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন। ফলে সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারা আরও জানান, এক-দুইদিন হাটে যাবো। যদি দাম কিছুটা কমে তাহলে ভালো নাহলে বেশি দামেই কিনতে হবে।
নড়াইল জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিদ্দীকুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক উপায়ে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে প্রতিনিয়তই প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের পক্ষ থেকে খামারিদের সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে খামারিদের অংশগ্রহণে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার করে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে ভোক্তাদের কি কি মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে সেই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।

তিনি বলেন, আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে খামারিরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে গবাদি পশু মোটাতাজা করছেন কি না সেই বিষয়ে সব সময় প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে। তাই এবার ভোক্তারা অনেকটাই প্রাকৃতিক উপায়ে বড় করা গবাদিপশুগুলো কোরবানি দিতে পারবেন বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, এবার স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর ১৪ হাজার গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকছে। জেলার ছোট-বড় সকল শ্রেণির খামারিরা গবাদিপশুর ভালো দামে পাবেন বলে আশা করছি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে যেন কোনো ঝামেলা ছাড়াই সুন্দর পরিবেশে জেলার বিভিন্ন হাট থেকে গবাদিপশু কিনতে পারেন। সেই লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও প্রাণী সম্পদ অধিদফতর বাজার মনিটরিংয়ের কাজ করছে।

নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী এহসানুল কবীর বলেন, পশুর হাটকে কেন্দ্র করে জেলার কোনো সড়ক কিংবা মহাসড়কে যেন কেউ কোনো চাঁদা আদায় করতে না পারে সে জন্য জেলা পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া জেলার প্রতিটি হাটের পরিবেশ সুন্দর রাখার লক্ষ্যে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে।
সার্বিক বিষয়ে নড়াইলের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শারমিন আক্তার জাহান বলেন, জেলার হাটগুলোতে যেন কেউ গবাদিপশুসহ সকল পণ্যের অতিরিক্ত খাজনা আদায় করতে না পারে সে লক্ষ্যে সারাবছরই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলমান রয়েছে। তবে কোরবানির সময় কোন চক্র যেন কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ে কোনো ধরনের অরাজকতার সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে প্রতিটি হাটে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিনিধি/ এজে

