সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

এক সময়ের জমজমাট ‘শ্যামলী’ সিনেমা হল এখন পরিত্যক্ত ভবন!

অলিউল্লাহ্ ইমরান, বরগুনা  
প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২৫, ১২:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

Cinema

বরগুনা শহরের কলেজ রোড এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা পরিত্যক্ত এক ভবন অজস্র গল্প আর স্মৃতির সাক্ষী। এই ভবনই ছিল ‘শ্যামলী’ সিনেমা হল, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জেলার অন্যতম পুরোনো ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন কেন্দ্র। তখনকার দিনে, যখন ঘরে ঘরে টেলিভিশনের প্রসার ঘটেনি এবং ইন্টারনেট ছিল কল্পনার বাইরে, মানুষ বিনোদনের জন্য ছুটে আসত এই হলটিতে। শুক্রবার থেকে শুরু করে ঈদ কিংবা পূজার ছুটিতে, সিনেমা হলে উপচে পড়ত দর্শকের ভিড়।

সেইসব দিনে দর্শকেরা দেখতে পেতেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের সোনালি যুগের চলচ্চিত্রগুলো জসিম, সুচরিতা, আলমগীর, শাবানা কিংবা সালমান শাহের অভিনীত সিনেমা। পরিবার, বন্ধু বা প্রতিবেশীদের সঙ্গে হলমুখী হওয়া ছিল এক সামাজিক মিলনের উপলক্ষ্য। শুধু সিনেমা দেখা নয়, বরং এটি ছিল এক ধরনের উৎসব।


বিজ্ঞাপন


কিন্তু সময় বদলেছে। ২০০০ দশকের শুরুতে টেলিভিশন ও স্যাটেলাইট চ্যানেলের প্রসার, পরবর্তীতে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের অভাবনীয় বিস্তার সিনেমা হলগুলোর দর্শক হারিয়ে দেয়। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, পাইরেসি ও কম মানের সিনেমা একত্রে কাজ করেছে দর্শকদের আগ্রহ কমিয়ে দিতে।

648bedc0a2dbdfc06f8dbeb6ac199f1d-5cfcd7aa15221

সরেজমিন দেখা গেছে ও জানা গেছে, শ্যামলী সিনেমা হলও এই সময়ে ধীরে ধীরে ফাঁকা হতে শুরু করে। লোকসান গুণতে গুণতে ২০০৬ সালে চূড়ান্তভাবে বন্ধ হয়ে যায় এর দরজা। এরপর থেকে প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ভবনটি। দেয়ালে জমেছে শ্যাওলা, ছাদ থেকে গজিয়ে উঠেছে গাছ। মাঝে মাঝে ভবনের গায়ে লাগানো হয় স্থানীয় রাজনীতিকদের পোস্টার। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো আর ফিরে আসে না।

এই সিনেমা হল শুধু একটি ভবন নয়, বরং বরগুনার সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটি অধ্যায়। এটি ছিল এক সময়ের ভালোবাসা, উদ্দীপনা ও সামগ্রিকভাবে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। এর মতো আরও অনেক সিনেমা হলই আজ হারিয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।


বিজ্ঞাপন


maxresdefault

সিনেমা হলগুলো হারিয়ে যাওয়া মানে শুধু একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারানো নয়, বরং একটি ঐতিহ্য, একটি মিলনমেলা, একটি যুগের স্মৃতিকে হারিয়ে ফেলা। নতুন প্রজন্মের কাছে এই হলগুলোর অস্তিত্বই অজানা থেকে যাচ্ছে। অথচ সংরক্ষণ ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে এগুলোকে ফিরিয়ে আনা যেত নতুন রূপে, নতুন প্রাণে।

স্থানীয় মো. কামরুজ্জামান বাহাদুর বলেন, শ্যামলী হল শুধু বিনোদনের জায়গা ছিল না, ছিল মানুষের সম্পর্ক গড়ার কেন্দ্র। বন্ধুত্ব, প্রেম, পরিবার, সবকিছুরই সূচনা হয়েছে এই হলের সামনে। আমরা চাই, এটি পড়ে না থেকে সংস্কার করে নতুন প্রজন্মের কাজে লাগুক।

maxresdefault_(1)

আরও পড়ুন

স্কুল মাঠে গরু-ছাগলের হাট, শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা বন্ধ

তিনি আরও বলেন, স্থাপত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের স্বার্থে ভবনটি সংরক্ষণ জরুরি। মাল্টিপারপাস বা কমিউনিটি সেন্টার, সাংস্কৃতিক জাদুঘর কিংবা শিশু-কিশোর শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

স্থাপত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস রক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে হলেও এমন পুরোনো হলগুলো সংরক্ষণ জরুরি। সরকার, স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সংস্কৃতি প্রেমী নাগরিকদের উদ্যোগে এগুলোকে রূপান্তর করা যেতে পারে মাল্টিপারপাস কমিউনিটি সেন্টার, আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক জাদুঘর বা শিশু-কিশোরদের শিক্ষামূলক কেন্দ্র হিসেবে।

thumbnails_de4749cc2eb47aa729501243d6c4ffca_goplay_baba_keno_chakor_poster_landscape_horizontal_with_mnemonic_1200x675

প্রয়াত পরিচালক জুলফিকার আহমেদ শাহীনের ছেলে মো. সাজ্জাদ আহমেদ জ্যাকি সিকদার বলেন, এই হলটা ছিল আমার বাবার স্বপ্ন। তিনি চাইতেন বরগুনার মানুষও উন্নত মানের সিনেমা উপভোগ করুক। আজ সেটি পড়ে থাকতে দেখে কষ্ট হয়। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতাও পাই না! পেলে হয়ত ভবনটি সংস্কার করে আবারও সিনেমা হলে পরিণত করা যেত। তাছাড়া কমিউনিটি সেন্টার, সাংস্কৃতিক জাদুঘর বা শিশু-কিশোর শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

আজকের প্রযুক্তিনির্ভর যুগে আমরা হয়ত চাইলেই সিনেমা দেখতে পারি হাতে ধরা মোবাইলের পর্দায়। কিন্তু হলের অন্ধকার ঘরে একসঙ্গে শ'খানেক মানুষের হাসিকান্না ভাগ করে নেওয়ার যে অভিজ্ঞতা, তার তুলনা নেই। সেই অভিজ্ঞতা, সেই ঐতিহ্যই যেন হারিয়ে না যায় এটাই সময়ের দাবি।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর