দরিদ্র ও অসহায় নারীদের জন্য সরকারের ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিটের (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির চাল বিতরণের সময় টাকার বিনিময়ে কার্ডধারীদের মধ্যে চাল সরবরাহ করছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১১ জন সদস্য।
চাল বিতরণের এমন অনিয়ম ও অভিযোগে সোমবার (২৬ মে) রাতে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলইশালশিড়ি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের আটক করে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। পরে আটক ইউপি সদস্যদের কাছ থেকে আদায় করা চাঁদার নগদ ১ লাখ ১৩ হাজার ৯০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। পরে তাদের বোদা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা অভিযোগ, জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত পাঁচ মাসের চাল মোট ১৫০ কেজি প্রতি উপকারভোগীর কাছে হস্তান্তর করতে গিয়ে জনপ্রতিনিধিরা জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিচ্ছিলেন। চাল না দিতে হুমকিও দেওয়া হয় অনেককে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন- ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খলিলুর রহমান, ২ নম্বর ওয়ার্ডের হামিজ উদ্দিন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রিয় নাথ রায়, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সুনীল চন্দ্র রায়, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দাহির উদ্দিন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের খাদিমুল ইসলাম, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মামুন ইসলাম, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আশরাফুল ইসলাম, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শেফালী রানী (১-৩ নম্বর ওয়ার্ড), বিলকিস বেগম (৪-৬) ও রুপালি বেগম (৭-৯)।
![]()
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, চাল নিতে গিয়ে চাঁদার কথা শুনে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। অভিযোগ জানাতে গেলে হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনগণ দুপুরে অভিযুক্তদের পরিষদ ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
বিজ্ঞাপন
উপকারভোগী দুলাল রহমান জানান, আমাদের কাছ থেকেও ৫০০ টাকা নিয়েছে চালের নামে। টাকা না দিলে চাল দেবে না, এমন কথাই বলেছে।
অন্যদিকে হাসিবুল ইসলাম বলেন, সরকার যেখানে চাল ফ্রি দিচ্ছে, সেখানে জনপ্রতিনিধিরা টাকার বিনিময়ে তা দিচ্ছেন এটা মেনে নেওয়া যায় না।
বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিষয়টি যাচাই করে সত্যতা নিশ্চিত করেন সেনাবাহিনীর বোদা ক্যাম্পের সদস্যরা। পরে ইউপি চেয়ারম্যানের কক্ষে অভিযুক্তদের আটকে রেখে তাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করা হয়।
তবে আটকের ও আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দীনের সাথে জানার চেষ্টা করলে আটকের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
এ বিষয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার নজির বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি ও ঘটনাস্থলে পাওয়া আলামতের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারা একটি ফৌজদারি অপরাধ করেছে। এর মাধ্যমে দেশে একটি অন্যতম নজির স্থাপন হবে।
ঘটনার পর পুরো ইউনিয়নে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিষদের সেবা কার্যক্রম আপাতত ব্যাহত হলেও স্থানীয়রা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
প্রতিনিধি/এসএস

