সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ঠাকুরগাঁওয়ে জমজমাট কোরবানি পশুর হাট, ক্রেতা খুশি হলেও বিক্রেতা নাখোশ

মো. জাহিদ হাসান মিলু, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৫, ০৭:৫৩ এএম

শেয়ার করুন:

ঠাকুরগাঁওয়ে জমজমাট কোরবানি পশুর হাট, ক্রেতা খুশি হলেও বিক্রেতা নাখোশ

কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ঠাকুরগাঁও জেলার হাট বাজারগুলোতে ততই বাড়ছে কোরবানির গরু কেনাবেচার ব্যস্ততা। তবে হাটে দেখা দিয়েছে এক ধরনের বৈপরীত্য—ক্রেতারা কম দামে গরু কিনে খুশি হলেও, বিক্রেতা ও খামারিরা বলছেন, উৎপাদন খরচ তোলা তো দূরের কথা, অনেক ক্ষেত্রে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

thumbnail_IMG_20250525_205241


বিজ্ঞাপন


জেলার সদর, রাণীশংকৈল, হরিপুর সহ বিভিন্ন উপজেলার গরুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, দেশি গরুর সরবরাহ ভালো। অনেক খামারিই তাদের খামারের গরু নিয়ে হাটে এসেছেন বিক্রির আশায়। কিন্তু গরুর দাম প্রত্যাশিত না হওয়ায় তারা পড়েছেন বিপাকে।

thumbnail_IMG_20250525_205259

খামারিরা কয়েক মাস আগে থেকেই গরু প্রস্তুত করেছেন কোরবানির জন্য। কিন্তু বাজারে অন্যান্য ফসল আলু, মরিচের ধাম কমে যাওয়া এবং চাহিদার তুলনায় পশু বেশি হওয়ায় দাম কম বলে মনে করছেন অনেকে।

thumbnail_IMG_20250525_205309


বিজ্ঞাপন


স্থানীয় খামারিরা বলেন, “একটা গরু বড় করতে আট-দশ মাস লেগে যায়। খাবার, ওষুধ, পরিচর্যা—সব মিলিয়ে অনেক খরচ হয়। এখন হাটে এসে দেখি, যে দামে বিক্রি হচ্ছে তাতে খরচই ওঠে না।” গত বছরের তুলনায় এবার গরু প্রতি প্রায় ১০-২২ হাজার টাকা ও প্রতি ছাগলে ৩-৫ হাজার টাকা কম। এছাড়াও হাটে কাঁদা-পানি জমে থাকা ও অব্যবস্থাপনাসহ অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা।

thumbnail_IMG_20250525_205514

পুরাতন ঠাকুরগাঁও এলাকার গরু বিক্রেতা সারোয়ার বলেন, “এবার মানুষের হাতে টাকা নাই। মানুষ আলু ও মরিচ করে লস খাইসে। তাই এবার গরুর দাম নাই। গতবার তিন মণ ওজনের যে গরু বিক্রি করেছি ৮০-৯০ হাজার এবার ওই গরু বিক্রি করলাম ৭০ হাজার টাকায়।”

thumbnail_IMG_20250525_205546

দুলাল ও জাহাঙ্গীর আলম নামে স্থানীয় দুই খামারি ঢাকা মেইলকে বলেন, “একটা গরু বড় করতে আট-দশ মাস লেগে যায়। খাবার, ওষুধ, পরিচর্যা—সব মিলিয়ে অনেক খরচ হয়। এখন হাটে এসে দেখি, যে দামে গরু বিক্রি হচ্ছে তাতে খরচই ওঠে না। এবার গরু লালন পালন করে লস।”

thumbnail_IMG_20250525_205603

অন্যদিকে, অনেক সাধারণ ক্রেতা ও অন্য জেলা থেকে আগত ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অন্যান্য বছরের থেকে বাজারে এবার গরুর দাম তুলনামূলকভাবে কম ও সহনীয়। এতে সহনীয় দামে পশু ক্রয় করতে পেরে খুশি তারা।

thumbnail_IMG_20250525_205625

ঠাকুরগাঁও রোড মথুরাপুর এলাকার বাসিন্দা মো. ইসরাক বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম কিছুটা কম।”

রোড এলাকার মো. আব্দুস সোবহান বড় খোঁচাবাড়ি পশুর হাটে ছেলেকে নিয়ে গরু নিতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “ বাজারে যদিও থার্ড পার্টি দৌরাত্ম্য বেশি সরাসরি মূল মালিকের কাছ থেকে গরু কেনা কষ্টকর তারপরেও অন্যান্য বারের তুলনায় আমার কাছে মনে হয়েছে বাজার কম। যে বাজেট নিয়ে এসেছিলাম সেই অনুযায়ী গরু নিতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ। এতে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করি। গত বছর যে গরু ১ লাখ ও ৯০ হাজার টাকা দাম ছিল সেই গরু এবার ৭০-৭৫ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আমি এবার গরুটি নিয়েছি ৬৯ হাজার ৫০০ টাকায়। সেটির মাংস ১০০ কেজি হবে বলছে গরু বিক্রেতা। আমার ধারণা ৯০-৯৫ কেজি মাংস হতে পারে। এতে আমি খুশি। ”

thumbnail_IMG_20250525_205916

চট্টগ্রাম হালীশহর থেকে আসা মো. নূর ইসলাম নামে এক গরু ব্যবসায়ী বলেন, “আমি প্রতিবছর ঠাকুরগাঁওয়ের কয়েকটি হাট থেকে কোরবানির গরু কিনি। এবার এসেছি । তবে অন্যান্য বারের তুলনায় এবার সহনীয় দামে গরু কিনতে পারছি আলহামদুলিল্লাহ। গরুর দাম এদিকে এবার কিছুটা কম বলা যায়।”  

thumbnail_IMG_20250525_205636

স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী মো. জবাইদুল ইসলাম বড় খোচাবাড়ি হাটে এসে বলেন, “এই হাটে কাঁদা-পানি জমে থাকে। ঠিকভাবে হাঁটাহাঁটি করা যায় না। এছাড়াও অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে। এতে এক গাড়ি গরু নিতে শুধু টোল খরচ ১২-১৩ হাজার টাকা লাগছে। এভাবে বাজারে ব্যবসায়ী আসতে চায়? তাই তো বাজারে ক্রেতা কম।” তার মতো আরও অনেক ব্যবসায়ী জেলার বিভিন্ন হাটের অব্যবস্থাপনাসহ অতিরিক্ত টোল আদায় করার অভিযোগ করেন।

thumbnail_IMG_20250525_205724

জাকির হোসেন নামে এক গরু ব্যবসায়ী বলেন, “ এবার এইদিকের বাজারগুলোতে ইন্ডিয়ান গরু নেই কিন্তু তার পরেও দেশি গরুর দাম কম। ক্রেতা নেই। বাজারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে গরু আমদানি হয়েছে সেই তুলনায় পাটি ও কেনার লোক নেই। এবার আড়াই থেকে তিন মণের গরুতে ১০ হাজার টাকা কম ও ৫-৬ মণ ওজনের গরুতে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা দাম কম। বর্তমানে আরও তো গ্রামের তেমন গরু বাজারে এখনও উঠেনি। গ্রামের গরুগুলো বাজারে আনা শুরু করলে দাম আরও কমে যাবে। এবার আমাদের ব্যবসায়ীদের লসের পাল্লা বেশি।”

thumbnail_IMG_20250525_205742

আল-আমিন ও মজিবর রহমান নামে ছাগল বিক্রেতা বলেন, “ছাগলের দাম চাই ৮ হাজার দাম বলে ৪-৫ হাজার। গত বছর যে ছাগলের দাম ছিল ১০ হাজার সেই ছাগল এবার ৫-৬ হাজার টাকা। গতবার ছাগলের প্রতি কেজি মাংস ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা অনুযায়ী বিক্রি হয়েছিল। এবার ৮০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে না।”

thumbnail_IMG_20250525_205742

আগামী কয়েক দিনে বাজারে পশুর দাম বাড়ার সম্ভাবনা কথা জানতে চাইলে অনেক ব্যবসায়ী জানান বর্তমান আবহাওয়া ও অবস্থায় এবার মনে হয় না আর দাম বাড়বে বরং দাম আরও কমতে পারে বলেও জানান তারা।

thumbnail_IMG_20250525_210230

হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের কথা অস্বীকার করে বড় খোচাবাড়ি হাটের ইজারাদার মো. রবিউল ইসলাম টিপুসহ অন্যান্য হাটের ইজারাদারা জানান, রাস্তায় গরু বহনকারী ট্রাক ছিনতাই ও বাস ডাকাতির কারণে এবার বাইরের জেলা থেকে তেমন পাইকাররা আসছেন না। এ কারণে এবার গরুর কিছুটা দাম কম। এছাড়াও অন্যাবার যেখানে কোরবানির প্রতি হাটে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার পশু কেনা বেচা হতো এবার ১ হাজারও হচ্ছে না।

thumbnail_IMG_20250525_205830

এবার প্রচুর সংখ্যক খামারি আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন গরু পালনের, কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, মধ্যবিত্তদের বাজেট কমে যাওয়া এবং পাশাপাশি অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো থেকেও ক্রয় বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় হাটগুলোতে তেমন ক্রেতা নেই বলেও জানান অনেকেই।

thumbnail_IMG_20250525_205754

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যমতে ঠাকুরগাঁও জেলায় এবার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৭৫ হাজার সে জায়গায় পশু লালনপালন করে প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ৯১ হাজার। যা চাহিদার তুলনায় প্রায় ১৬ হাজার পশু বেশি রয়েছে।

thumbnail_IMG_20250525_210033

বর্তমানে গরুর দাম কম হলেও পাইকারের সংখ্যা বাড়লে পশুর দাম বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে ও গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য জেলার প্রতিটি হাটে ভেটেরিনারি টিম মোতায়েন করা হয়েছে ও গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতন করা হচ্ছে বলে ঢাকা মেইলকে জানান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইজহার আহমেদ খান।

thumbnail_IMG_20250525_205845

হাটে জাল টাকার নোট শনাক্ত করার ব্যবস্থা, অতিরিক্ত টোল আদায়, হাট ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানান সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খাইরুল ইসলাম। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, পশুর হাটে নির্ধারিত ফি থেকে বেশি টোল আদায় করা না হয় সেজন্য জেলা ৪০টি হাটের ইজারাদারে নির্দেশ দেওয়া আছে।

thumbnail_IMG_20250525_210048

এছাড়াও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বাজার মনিটরিং করছেন। কোথাও কোনো ব্যত্যয় হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়াও সড়কে ছিনতাই ও ডাকাতি রোধে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন। মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও হাটগুলো উন্নয়নের বিষয়ে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ঠিকাদারদের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী অর্থবছরে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। 

thumbnail_IMG_20250525_205916 

অনেক খামারি জানিয়েছেন, এভাবে দাম কমে গেলে ভবিষ্যতে তারা আর গরু পালন করবেন না। এতে দেশীয় পশুর সরবরাহে সংকট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর