শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে অসুন্দর কাণ্ড

পুলক পুরকায়স্থ
প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২২, ০৯:৩৩ এএম

শেয়ার করুন:

সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে অসুন্দর কাণ্ড

পর্যটন অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে বেশকয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র। জীববৈচিত্র আর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে এই জেলায় আছে হাওড়, পাহাড়, নদী, ঝর্ণা, চা বাগান আর সমতলের বৈচিত্র্যময় গঠন প্রকৃতি। যার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে ছুটে আসেন পর্যটকরা। কিন্তু প্লাস্টিক বর্জ্য যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকায় পর্যটন কেন্দ্রগুলো পরিবেশ দূষণ ও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এমন অভিযোগ স্থানীয় পরিবেশকর্মীদের। ইতিমধ্যে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে আসা পর্যটকদের প্লাস্টিক নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মূল ফটকের সামনে ও ভেতরের অনেক স্থানে প্লাস্টিকের বোতল ও চিপসের প্যাকেট যত্রতত্র পড়ে আছে এমন অভিযোগ জানিয়ে স্থানীয় গাইড ও পরিবেশকর্মী সাজু মারছিয়াং বলেন, ‘এই উদ্যানকে দেখলে মনে হবে প্রকৃতির জাদুঘর। কিন্তু অসচেতনতার অভাবে প্রকৃতির নিঃস্বার্থ সৌন্দর্যের বৈচিত্র্যের কথা ভুলে যাই। আমাদের একটু সচেতন হতে হবে। জীববৈচিত্র ও পশু পাখির উপর ক্ষতিকর প্রভাব যেনো না পড়ে সেদিকে নজর দিতে হবে।’
moulovibajarসদ্য হামহাম জলপ্রপাত ঘুরে আসা পর্যটক প্রলয় ও রাহুল জানান, ‘প্রায় দুই কিলোমিটার গহীন পথের বিভিন্ন স্থানে প্লাস্টিক বোতল, চিপস ও পলিথিনের নানান প্যাকেট পড়ে আছে। এতে পরিবেশ নোংরা  হচ্ছে। একে তো পিচ্ছিল পথ, তার উপর পলিথিনের প্যাকেট পড়ে থাকায় চলাচলে খুবই অসুবিধা হয়। দেখতেও খারাপ লেগেছে।’


বিজ্ঞাপন


স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও পর্যটন সেবা সংস্থা শ্রীমঙ্গলের সাংগঠনিক সম্পাদক এসকে দাশ সুমন বলেন, দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই আসেন প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে। তাদের মধ্য কেউ কেউ অসচেতন হয়ে খাদ্যদ্রব্যের ব্যবহৃত প্লাস্টিক, পলিথিন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করেন। তাদের আরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন।

পাখিদের অভয়াশ্রম হাইল হাওরের বাইক্কা বিল। সেখানকার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকা জমাত আলী বলেন, প্রতিদিনই দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষজন আসেন। কিন্ত, বারণ সত্ত্বেও কেউ কেউ নানান ধরনের পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্যে খাবার নিয়ে আসেন। তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেন। যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
moulovibajarদর্শনার্থী ও পাখিপ্রেমী সঞ্জীব মীতৈ বলেন, এই বিলটা মাছ-পাখির অভয়াশ্রম। তাদের উপযোগী পরিবেশ থাকা প্রয়োজন। কিন্ত বর্তমানে বিল ভরাট ও খাদ্যের অভাবে পাখিরা আগের মতো এ বিলকে নিরাপদ মনে করছে না। তারপর রয়েছে যত্রতত্র প্লাস্টিক বোতল ও চিপসের প্যাকেট ফেলা। ফলে পরিবেশ নোংরা, দুষিত ও ক্ষতিগ্রস্ত  হচ্ছে। অতিথি পাখিরা এখানে আসে ঠিকই, থাকার পরিবেশ পাচ্ছে না।

মৌলভীবাজার বাপার সমন্বয়ক আসম সালেহ সুহেল বলেন, ‘প্লাস্টিক পণ্য মাটির সাথে মিশে না, এবং এগুলো যত্রতত্র ফেলার কারণে নালা বা খালে পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত করে এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আমাদের পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার জন্য পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের ব্যবস্থা নেই, আছে নজরদারির অভাব। সবচেয়ে বেশি রয়েছে জনসচেতনতার অভাব। আমি মনে করি, এ ব্যপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদেরকে আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন।’
moulovibajarএদিকে জেলার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে আসা পর্যটকরা মূল ফটকের ভেতর কোনো ধরনের প্লাস্টিক নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে জানায় বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী জানান, মাধবকুণ্ডের মূল ফটকের ভেতরে কোনো পর্যটক প্লাস্টিক নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। বিষয়টি জোরালোভাবে নজরদারি করা হবে।

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, ‘পরিবেশ আমাদের, সেটা রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্ব। আমাদের দেশে যে পরিমাণ বনভূমি থাকার কথা সে পরিমাণ বনভূমি নেই। অতএব আমাদেরকে আরও সচেতন হতে হবে।’


বিজ্ঞাপন


প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর