শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পদ্মা সেতু নিয়ে উচ্ছ্বসিত যশোরের চাষিরা

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২২, ০৮:১০ এএম

শেয়ার করুন:

পদ্মা সেতু নিয়ে উচ্ছ্বসিত যশোরের চাষিরা

যশোর সদরের চুড়ামনকাটি এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম। চলতি মৌসুমে ৪ বিঘা জমিতে পেঁপে ও ৩ বিঘা জমিতে কচুর লতি চাষ করেছেন। স্থানীয় পাইকারি সবজির বড় বাজার বারীনগরে দাম ভালো না পাওয়ায় গত মঙ্গলবার ট্রাকে করে ঢাকায় নিয়ে যান তিনি। কিন্তু এই কষ্ট করে যে লাভের আশা করেছিলেন, সেটি হয়নি। ফেরি পারাপারে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময় লেগে যায় রাজধানীতে পোঁছাতে। ট্রাক ভাড়া দিতে হয় দেড়গুণ। পদ্মা সেতু চালু হলে নজরুলের এই পরিবহন খরচ ও সময় দুটোই বেঁচে যাবে। চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকায় যেয়ে পণ্য বিক্রি করে আবার ফিরে আসতে পারবেন তিনি। তার মতো অনেকেই বলছেন পদ্মা সেতু ঘিরে অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলা যশোরে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের সবজির বড় অংশের জোগান দেওয়া হয় যশোর থেকে। রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় ট্রাকে করে এগুলো সরবরাহ করা হয়। ফেরিঘাটে যানজট বা বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় এগুলো যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছে না। পঁচনশীল হওয়ায় এসব পণ্যের মান কমে যায়। কমে দামও। লোকসানে পড়তে হয় কৃষকদের। তাই পদ্মা সেতু চালু হলে যশোর অঞ্চলে শুধু যোগাযোগের দ্বারই উন্মুক্ত হবে না; এই অঞ্চলের কৃষি খাতে প্রসার ঘটিয়ে অর্থনীতিকে করবে সমৃদ্ধ। সৃষ্টি হবে নবদিগন্তের সূচনা।  


বিজ্ঞাপন


যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক নূরুজ্জামান বলেন, ‘যমুনা সেতু চালুর হওয়ার ফলে উত্তরঞ্চলে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক বিপ্লব ঘটেছে। তেমনি পদ্মাসেতু চালু হলে উত্তরের মতো কৃষি বিপ্লব ঘটবে এই যশোর অঞ্চলেও। এমনি যশোরে মোট ৩৩ ধরনের সবজি উৎপাদন হয়। হেক্টর প্রতি সবজির গড় ফলন ২৩-২৫ টন। যা অন্য জেলার চেয়ে বেশি। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর বিপুল পরিমাণ সবজি রাজধানী ঢাকাসহ পদ্মার ওপারে বিভিন্ন জেলায় যায়। ফেরিঘাটে দেরির কারণে অনেক সবজি নষ্ট হয়। পদ্মাসেতু চালু হলে সবজি নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচার সাথে দামও পাবে ভালো। ঢাকার ভোক্তারাও ফ্রেস সবজি পাবে। আবার দীর্ঘ সময় লাগার কারণে অনেক সময় ঢাকার পাইকার ব্যবসায়ীরা এই অঞ্চলে আসত না। এখন পদ্মাসেতু হলে পাইকাররাও এই অঞ্চলে সবজি কিনতে আসবে। উৎপাদন আর সরবাহরের যখন ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে; তখন এই অঞ্চলের কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে।  

দক্ষিণ-পশ্চিঞ্চলের সবজির সবচেয়ে বড় পাইকারি হাট যশোর সদরের বারিনগরে। এই হাটে কথা হয় দ্বীন মোহাম্মদ নামে একজনের সঙ্গে। ২৫ বছর ধরে নানারকমের সবজি চাষ করে আসছেন তিনি। 

পদ্মা সেতু উদ্বোধনে উচ্ছ্বসিত তিনিও। বলেন, এই হাটে এক কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ টাকায়। সেই পেঁপে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে ঢাকার কারওয়ান বাজারে দিলে দাম ওঠে ৪০ টাকা। শুধু পেঁপে না লাউ, কচুর লতিসহ অন্যান্য সবজির দামের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। 

‘তাই সবজির একটু বেশি দাম পেতে আমরা দুই থেকে তিনজন চাষি নিজেদের ক্ষেতে উৎপাদিত সবজি একত্রে একটি ট্রাকে চুক্তিবদ্ধ করে ঢাকায় নিয়ে যাই। ঢাকায় সবজি নিলে স্থানীয় বাজার থেকে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে পারি। কিন্তু সমস্যা হলো ফেরি ঘাটে। দীর্ঘ জ্যাম আর ফেরিপার হওয়ায় বেশি সময় লাগার কারণে অধিকাংশ সবজি পঁচে বা গুণগত মান নষ্ট হয়। তাছাড়া নির্দিষ্ট সময়ে সবজি নিয়ে ঢাকা পৌঁছাতেও পারি না। এখন সেতুটি চালু হলে ৪ ঘণ্টায় সবজি নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে পারব। সবজিও ভালো থাকবে, দামও ভালো পাব।  


বিজ্ঞাপন


আহম্মদ আলী নামের এক সবজি ব্যবসায়ী বলেন, ‘সবজি ঢাকায় পাঠানোর সময় চিন্তায় থাকি সময়মতো ট্রাকের ফেরিঘাট পার হওয়া নিয়ে। কারণ সময়মতো ফেরি পার হতে না পারলে সঠিক সময়ে ঢাকার আড়তে সবজি পৌঁছাবে না। এতে সবজির মান কমে যাবে। দামও কম হবে। এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে ফেরি বন্ধ থাকে। সে সময় আরও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। দেরির কারণে সবজি বাসি হয়ে দাম তিন ভাগের এক ভাগে নেমে আসে। এমন বিড়ম্বনায় আমার অনেক টাকা ক্ষতি হয়েছে।’

‘তবে পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের আর এ সমস্যা থাকবে না। সময়মতো সবজি পাঠাতে পারব। তাতে ক্ষতির আশঙ্কা কমে যাবে।’

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর