‘জিংক ধানের ভাত খেলে, পুষ্টি মেধা উভয় মেলে’ এই প্রতিপাদ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে "জিংক গম ও জিংক ধান" শীর্ষক সেনসিটাইজেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে ‘রিয়ালাইজিং জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি, অ্যাটিটিউডনাল চেইঞ্জ অ্যান্ড ট্রান্সফরমেটিভ সিস্টেম ইন নিউট্রিশন (রিয়েক্টস ইন)’ প্রকল্পের আওতায় পীরগঞ্জ উপজেলার লোহাগাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘স্কুল সেনসিটাইজেশন প্রোগ্রাম’ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, লোহাগাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খালেকুজ্জামান, ইএসডিও এবং রিয়েক্টস- ইন প্রজেক্ট এর প্রজেক্ট ফোকাল কৃষিবিদ মো. আশরাফুল আলম, পিসি মো. কামরুল ইসলাম,বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক আজগর আলী সরকার, নার্গিস সুলতানা, নিরঞ্জন সূত্র ধর সহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকারা এবং নবম ও দশম শ্রেণীর শতাধিক শিক্ষার্থী।
খাদ্য থেকে প্রাপ্ত অতি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান ‘জিংক’ দেহের জন্য অপরিহার্য হলেও আমাদের দেশে বহু মানুষ এখনও এর ঘাটতির কারণে নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে ইএসডিও এবং রিয়েক্টস- ইন প্রজেক্ট এর প্রজেক্ট ফোকাল কৃষিবিদ মো. আশরাফুল আলম বলেন,মানুষের শরীরে প্রায় ৩০০ ধরনের এনজাইমের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে জিংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শিশুদের সঠিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। বিশেষ করে শিশু, কিশোর-কিশোরী, গর্ভবতী ও lactating মা এবং বৃদ্ধদের জন্য জিংক অত্যন্ত দরকারি। জিংকের ঘাটতি দূর করতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন জিংক সমৃদ্ধ চাল খাওয়ার। বর্তমানে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত কয়েকটি উচ্চ জিংকযুক্ত ধানের জাত ব্রি ধান ৭৪, ৮৪, ৯২, ৯৮, ১০০ এবং ১০২। এই ধান থেকে উৎপন্ন চাল খাওয়ার মাধ্যমে যেমন শরীর পাবে প্রয়োজনীয় জিংক, তেমনি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শিশুদের বুদ্ধি ও দেহের বিকাশে সহায়তা করে।
এছাড়াও তিনি শিক্ষার্থীদের সামনে জিংক সম্পর্কে তুলে ধরে বলেন, খাদ্যের অন্ত্রে প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হচ্ছে জিংক। শরীরের বৃদ্ধিতেও জিংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশের ঘরে ঘরে যেসব খাদ্য খাওয়া হয় তাতে পর্যাপ্ত জিংক থাকে না। ফলে, শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, এবং ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার মত রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। জিংকের অভাব শিশুদের মানসিক বিকাশ, দৃষ্টিশক্তি এবং দৈহিক পরিপক্বতাকেও বাধাগ্রস্ত করে। প্রসবকালীন সময়ে মা যদি জিংকের ঘাটতিতে ভোগেন, তাহলে শিশুর জন্মের সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে। খাদ্যের মাধ্যমে সহজেই জিংকের ঘাটতি পূরণ করা যায়। এজন্য দরকার এমন একটি খাদ্য উৎস, যেটির সাথে প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস মিলে যায়। ধান আমাদের প্রধান খাদ্য হওয়ায়, ধানের মধ্যে যদি জিংকের পরিমাণ বাড়ানো যায় তবে তা পুষ্টি সমস্যার টেকসই সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
মানবদেহে জিংকের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তিনি জানান, জিংক সমৃদ্ধ খাবার না খেলে শিশুদের বৃদ্ধি থেমে যায়। শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধির বিকাশ হয় ধীরগতিতে। ফলে তারা স্কুলে ভাল ফলাফল করতে পারে না। নারীদের জিংকের অভাব শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে, গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব জটিল করে তোলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী, মানবদেহে প্রতি কেজি ওজনে ১০ মিলিগ্রাম জিংক দরকার। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (FAO) ও হারভেস্ট প্লাস এর মতে—১-৩ বছর বয়সী শিশুর প্রতিদিন ৫.০ মিলিগ্রাম,৪-৮ বছর বয়সী শিশুর জন্য ৭.০ মিলিগ্রাম,৯-১৩ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীর জন্য ৮-৯ মিলিগ্রাম,১৪-১৮ বছর বয়সী কিশোর ও কিশোরীর জন্য ৯-১১ মিলিগ্রাম,গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী,নারীদের জন্য ১১-১২ মিলিগ্রাম জিংকের প্রয়োজন হয়।
বিজ্ঞাপন
তাই, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় জিংকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হলে ভাতের মতো প্রধান খাদ্যে জিংকের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এই লক্ষ্য পূরণে বিজ্ঞানীরা উচ্চ জিংকসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এই ধানের চালের ভাত খেলে মানুষ সহজেই পুষ্টি ঘাটতি পূরণে সহায়তা পাবে।
তিনি আরও বলেন, বাজারের কিছু খাবার যেমন—বাদাম, ডিম, মাছ, দুধ, মাংস, শাকসবজি, ডাল, গম ইত্যাদির পাশাপাশি যদি পরিবারে নিয়মিতভাবে জিংক সমৃদ্ধ চাল খাওয়া হয়, তবে তা দেহের জিংকের চাহিদা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তাই তিনি শিক্ষার্থীদের সুস্থ, সবল ও মেধাবী সমাজ গড়তে দিনে একবার হলেও জিংক সমৃদ্ধ চালের ভাত খাওয়ার ও তাদের অভিভাবকদের এসব জাতের ধান বেশি করে চাষ করার বিষয়ে জোর তাগিদ জানান ।
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে হারভেস্টপ্লাস বাংলাদেশ আর আয়োজন করেছে ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। এছাড়া পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে কানাডা সরকার, নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল, ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি ও ওয়ার্ল্ড ভিশন বলেও জানান তিনি।
প্রতিনিধি/ এজে

