কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বহুল আলোচিত কলেজছাত্র হত্যা মামলায় দুই নারীসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন কিশোরগঞ্জের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এছাড়া প্রত্যেক আসামিকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩ বিচারক ফাতেমা আক্তার স্বর্ণা এ রায় আদেশ দেন। প্রদত্ত সাজা ফাঁসির মাধ্যমে কার্যকর করার নির্দেশ দেন বিচারক। রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত তিন আসামির মধ্যে দুইজন পলাতক ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
রায় অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি হলেন— কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবপুর উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত শাকিল উদ্দিনের ছেলে মো. সুমন মিয়া (৩৯), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দৌলতদিয়া গ্রামের মো. কাইয়ুম সরকারের স্ত্রী সেলিনা বেগম (৪১) ও একই জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের মেয়ে শোভা প্রকাশ (৩৭)
তিনজনের প্রত্যেককেই মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় কেবল সেলিনা বেগম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি দুই আসামি সুমন ও শোভা প্রকাশ পলাতক।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, মোহাম্মদ আলী ছিলেন কুলিয়ারচরের তারাকান্দি মধ্যপাড়া গ্রামের মো. সামছুদ্দিন মিয়ার ছেলে। লেখাপড়ার জন্য ভৈরব হাজী আসমত কলেজের ছাত্রাবাসে থাকতেন। ২০০৮ সালের ৬ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে তিনি ও তার বন্ধু মোরাদ কলেজের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছিলেন। ঠিক তখনই হঠাৎ করে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত চালায়।
রক্তাক্ত অবস্থায় অন্য ছাত্ররা তাদের উদ্ধার করে ভৈরবের মাতৃকা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোহাম্মদ আলীকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত মোরাদকে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় ঢাকার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
বিজ্ঞাপন
ঘটনার পরদিন, ২০০৮ সালের ৭ জানুয়ারি নিহত আলীর বাবা সামছুদ্দিন মিয়া ভৈরব থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে একই বছরের ৩০ মে ভৈরব থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক আ. আজিজ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এরপর দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে চলে সাক্ষ্য-প্রমাণ, যুক্তিতর্ক ও শুনানি। অবশেষে মঙ্গলবার আদালত তিনজনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) শফিউল জামান ভুঁইয়া এবং পিপি অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান।
মোহাম্মদ আলীর পরিবার ও স্বজনরা জানান, এতদিন ধরে এই রায়ের অপেক্ষায় ছিলেন। ছেলে হারানোর বেদনা তারা কখনো কাটিয়ে উঠতে পারবেননা। তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ন্যায়বিচার পাওয়ার খবরে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছে।
তবে এখনো পলাতক দুই আসামির গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে পরিবারের সদস্যরা বলেন, আমরা চাই, এই রায় দ্রুত কার্যকর হোক এবং যারা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক।
প্রতিনিধি/ এজে

