-
-
-
- ঘটনা: ২০ মে ২০১৪
- অভিযোগপত্র দাখিল: ৩০ আগস্ট ২০১৪
- মোট ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি: ৩৯ জন
- আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি ১৬ জন
- রায় প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০১৮
- ৩৯ জনের ফাঁসি, ১৬ জন খালাস
- ২২ জন কারাগারে ১৭ জন পলাতক
-
-
ফেনীর আলোচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যাকাণ্ডের একযুগ (১২ বছর) পূর্ণ হয়েছে আজ। ২০১৪ সালের ২০ মে তৎকালীন ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক একরামকে ফেনীর বিলাসী সিনেমা হলের সামনে পুড়িয়ে গুলি করে হত্যা করে নিজ দলীয়রা। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায়ে ৩৯ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন আদালত।
বিজ্ঞাপন
পরে দণ্ডপ্রাপ্তদের কয়েকজন এ মামলায় অপিল করলেও তা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ডেথ রেফারেন্সের শুনানি আটকে আছে। এতে করে রায় কার্যকর করা যাচ্ছে না। আসামি পক্ষের দাবি, এ ঘটনায় নিরীহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজনকে ফাঁসানো হয়েছে। অপরদিকে বাদী পক্ষের দাবি, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা কার্যকরে সময় ক্ষেপণ ও পলাতকদের গ্রেফতারে শৈথিল্য অবিচারে শামিল। তাই দ্রুত মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের দাবি করেছেন একরামুল হকের স্বজন ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা।
ফেনী জেলা জর্জ আদালত, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের জিএ একাডেমি এলাকার বিলাসী সিনেমা হলের সামনে প্রকাশ্যে একরামুল হকের গাড়ির গতিরোধ করে কুপিয়ে, গুলি করে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার রাতে তার ভাই রেজাউল হক বাদী হয়ে এ ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহতাবুল হক চৌধুরী মিনারকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ এ মামলায় তদন্ত শেষে একই বছরের ৩০ আগস্ট ৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আলোচিত এ মামলায় গ্রেফতারকৃত ১৬ জন আসামি আদালতে ঘটনায় জড়িত ছিলেন মর্মে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৫৬ জন আসামির মধ্যে ৩৯ জনের ফাঁসির আদেশ ও ১৬ জনকে খালাস দেওয়া হয়। এদের মধ্যে সোহেল নামের এক আসামি রায় ঘোষণার আগেই র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।
বর্তমানে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৯ আসামির মধ্যে ২২ জন কারাগারে রয়েছেন। বাকি ১৭ জনের মধ্যে ৮জন আসামি জামিনে গিয়ে পলাতক ও ৯ জন আসামি ঘটনার শুরু থেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
![]()
বর্তমানে এ মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন ২২ আসামি। তারা সবাই খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। এরা হচ্ছেন, জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফেনী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী সিফাত, আবু বক্কর সিদ্দিক, মো. আজমির হোসেন রায়হান, মো. শাহজালাল উদ্দিন শিপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে আজাদ, কাজী শানান মাহমুদ, মীর হোসেন আরিফ ওরফে নাতি আরিফ, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, মো. সোহান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন নয়ন, নিজাম উদ্দিন আবু, আবদুল কাইউম, নুর উদ্দিন মিয়া, তোতা মানিক, মো. সজিব, মামুন, রুবেল, হুমায়ুন ও টিপু।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে জামিনে গিয়ে পলাতক ৮ আসামিরা হচ্ছেন, ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়লা জেসমিন বড় মনির ছেলে আবিদুল ইসলাম, এমরান হোসেন রাসেল, জাহিদুল হাসেম সৈকত, চৌধুরী মোহাম্মদ নাফিজ উদ্দিন অনিক, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, আরমান হোসেন কাউসার ও জসিম উদ্দিন।
![]()
এছাড়াও এ মামলায় এখনো ৯ জন আসামিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করতে পারেন নি। তারা শুরু থেকেই পুলিশি ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। এরা হচ্ছেন, ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, রাহাত মোহাম্মদ এরফান আজাদ, শফিকুর রহমান, একরাম হোসেন, মোসলেহ উদ্দিন আসিফ, মহিউদ্দিন আনিছ, টিটু ও বাবলু।
মামলাটির রায় প্রদানকালে খালাস পাওয়া ১৬ জন হলেন বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনার, পৌর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক জিয়াউল আলম মিস্টার, আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেন পাটোয়ারী ওরফে টুপি বেলাল, মো. আলমগীর ওরফে আলাউদ্দিন, আবদুর রহমান রউপ, সাইদুল করিম পবন ওরফে পাপন, জাহিদ হোসেন ভূইয়া, ইকবাল হোসেন, মো. শাখাওয়াত হোসেন, শরিফুল ইসলাম পিয়াস, কালা মিয়া, নুরুল আবসার রিপন, মো. ইউনুস ভূইয়া শামীম ওরফে টপ শামীম, মো. মাসুদ, কাদের ও ফারুক।
![]()
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, একরাম হত্যা মামলার ১৭ আসামিকে গ্রেফতারে সোর্স নিয়োগসহ যাবতীয় প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার পর নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন কারাগারে থাকা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ২২ আসামি। দীর্ঘদিন আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্সের শুনানিও করা যাচ্ছেনা। আইন অনুযায়ী উচ্চ আদালতে আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি সম্পন্ন হওয়ার পরই রায় কার্যকর করা হবে।
প্রতিনিধি/এসএস

