বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মামলা বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠন থেকে ১৬ জন পদত্যাগ করেছেন। অপরদিকে পদত্যাগকারীদের অভিযোগ মিথ্যা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটি।
সোমবার (১৯ মে) বিকেলে নগরীর কেরামতিয়া স্কুল সংলগ্ন নিজ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দরা তাদের প্রতি আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
বিজ্ঞাপন
জেলা কমিটির মুখপাত্র ইয়াসির আরাফাত বলেন, সংগঠন নিয়ে ম্যাসেঞ্জারে যেসব কথা-বার্তা হচ্ছিল। তা জেলা কমিটির সদস্য মাহমুদুর রহমান লিয়ন বাহিরে স্ক্রিনশর্ট পাঠাতো। আমরা বিষয়টি জানতে পেরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সংগঠনের এমন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে লিয়ন সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ তুলে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করে।
গ্রামীণ ও কুটির শিল্প মেলায় লটারি ও হাউজিকে প্রশ্রয় দিয়ে মোটা অঙ্কের বাণিজ্যের বিষয়ে জেলা কমিটির সদস্য সচিব ডা. আসফাক আহমেদ জামিল বলেন, মেলা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো লেনদেন হয়নি। এটি কেউ কোনোভাবেই প্রমাণ করতে পারবে না। মেলাটি হয়েছে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে, জায়গাটিও সেনাবাহিনীর। সেনাবাহিনীর সাথে ছাত্রদের ভাল সম্পর্ক অনেকের সহ্য হচ্ছে না। তারা আমাদের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করছে। মেলা শুরু হলে হাউজি ও লটারি বন্ধে আমরা ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম সেই সময়।
সিটি করপোরেশনে নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, সেখানকার বিগত দিনে চাকুরিচ্যুতরা আমাদের কাছে আসলে আমরা তাদের পক্ষে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক বিভাগীয় কমিশনার স্যারের কাছে সুপারিশ করি। তিনি তদন্ত কমিটি করে তাদের পুনরায় বহালের ব্যবস্থা করেন। আমরা শুধু ২৫ জনকে চাকুরিতে পুনরায় বহালের সুপারিশ করেছি।
প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটি কর্তৃক চাকুরিচ্যুতদের পুনরায় বহাল করার সুযোগ নেই মর্মে প্রতিবেদন দাখিলের পরও ২৫ জনকে চাকুরিতে পুনরায় বহালে কেনো জোর সুপারিশ করা হলো-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, চাকুরি দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার স্যার। কারণ এটি তার এখতিয়ারে রয়েছে। আমরা শুধু সুপারিশ করেছি। তবে এখানে কোনো লেনদেন হয়নি।
বিজ্ঞাপন
এদিকে রোববার (১৮ মে) রাতে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক মাহতাব আবির ও সিয়াম আহসান আয়ান বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রংপুরে ঘাঘট নদের পারে গ্রামীণ কুটির ও শিল্প মেলায় জুয়ার আসর বসে। সেখানে জেলা ও মহানগর কমিটি মিলে ১৪ লাখ টাকা চাঁদা নেয়। এ ঘটনায় কমিটির সদস্যরা মহানগর ও জেলার শীর্ষ নেতাদের কাছে জানতে চাইলে তারা সদস্যদের কোনো জবাব দেয়নি। ফেনীর বন্যার সময় ত্রাণের অবশিষ্ট ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ, রংপুর সিটি করপোরেশনে ২৫ কর্মচারী নিয়োগে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্যসহ মামলা বাণিজ্যও করা হয়েছে।
জেলা কমিটির ৫ পদত্যাগকারী হলেন সদস্য মুবতাসিম ফুয়াদ সাদিদ, সৃজন শাহ, জুনাইদ ইসলাম, মাহতাব হোসেন আবির ও সাওম মাহমুদ সিরাজ। অপরদিকে মহানগর কমিটির ১১ পদত্যাগকারীর মধ্যে রয়েছেন যুগ্ম সদস্য সচিব সিয়াম আহসান আয়ান, সংগঠক আদনান সামির, গোলাম আযম রাতুল, মাহদী হাসান অনিক, এনায়েত রাব্বি, সদস্য আরাফাত সানি আপন, আল শামস সিয়াম, সীমান্ত হোসেন, আল আমিন, মোজাহিদ ও আল তানজীল আহসান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সংগঠক ও সদস্যরা পদত্যাগ করার বিষয়টি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে। সেইসঙ্গে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের এমন কর্মকান্ডের অভিযোগ প্রকাশ পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ নভেম্বর ইমরান আহমেদকে আহ্বায়ক ও ডা. আশফাক জামিলকে সদস্য সচিব করে ১৫৫ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি এবং ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতিকে আহ্বায়ক ও রহমত আলীকে সদস্য সচিব করে ১১২ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর কমিটি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
প্রতিনিধি/এফএ

