‘হঠাৎ পানি এসে আমার সব স্বপ্ন ভাসিয়ে নিয়ে গেল। কখনও এত আগে পানি আসে না। আশা ছিল, লাখ টাকা মূল্যের বাদাম বিক্রি করব। এখন আমার সব শেষ। কীভাবে জীবনটা চালাব, সেই চিন্তায় বাঁচি না।’ কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার শেখেরচরের ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ আবু মুসা মিয়া।
গতকাল শনিবার তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, চরজুড়ে বাদামসহ বিভিন্ন রবি ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন
কৃষকরা জানান, ১৫-২০ দিন পর বাদাম তোলার উপযুক্ত হতো। কিন্তু কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের পানিতে এক রাতেই সব ফসল তলিয়ে গেছে। যদি দ্রুত পানি নেমে যায়, তাহলে হয়তো কিছু ফসল উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
জোয়ান সেতরা চরের কৃষক আতিকুর রহমান বলেন, তাঁর তিন একর জমিতে বাদাম আবাদ করা হয়েছিল। এখন সব পানিতে পচে যাবে। বাদামগুলো অপরিপক্ব হওয়ায় এখন তুলে কোনো লাভ হবে না। তিনি জানান, এ ফসলে তাঁর এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে এবং আশা ছিল প্রায় আড়াই লাখ টাকার বাদাম বিক্রি হবে। এ ক্ষতি কীভাবে সামলাবেন, তিনি জানেন না।
কৃষকরা বলছেন, চরাঞ্চলের কৃষকের শেষ ভরসা ছিল বাদাম। অনেকেই এখন তলিয়ে যাওয়া বাদাম ক্ষেত থেকে যা সম্ভব তা সংগ্রহ করছেন। উপজেলার থেতরাই, গুনাইগাছ ও দলদলিয়া ইউনিয়নের অন্তত আটটি চরের ফসলি জমি এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বাদাম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬০ হেক্টর জমিতে। বাস্তবে আবাদ হয়েছে তার চেয়েও বেশি। তিস্তার চরের ২৩০ হেক্টর জমিতে ভালো ফলন হয়েছিল। তবে বাদামগুলো অপরিপক্ব হওয়ায় পচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিজ্ঞাপন
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন জানান, পানিতে তলিয়ে যাওয়া বাদাম দ্রুত সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে কোনো প্রণোদনা এলে তা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
প্রতিনিধি/একেবি

