চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ১৪ মে অনুষ্ঠিত হলো বহু প্রতীক্ষিত ৫ম সমাবর্তন। নয় বছরের প্রশাসনিক স্থবিরতার অবসান ঘটিয়ে এটি শিক্ষার্থীদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে—৩৬ বছর পর কি এবার অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন?
সম্প্রতি প্রশাসনের বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ—নতুন হল চালু, আসন বরাদ্দ, নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন, ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ, প্রযুক্তি উন্নয়ন ইত্যাদি—চাকসু নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
বিজ্ঞাপন
চলতি বছরের শুরুতে প্রশাসন ‘চাকসু সংবিধান রিভিউ কমিটি’ গঠন করে আশার আলো দেখালেও এখনও পর্যন্ত খসড়া গঠনতন্ত্র প্রকাশ করা হয়নি। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ২২ মে বিকেল ৩টায় সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মিলনায়তনে খসড়া নীতিমালা উপস্থাপন করা হবে।
চাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রসংগঠনগুলো ইতোমধ্যে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, ক্লাব অ্যালায়েন্সসহ বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদান ও প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে। ২৭ এপ্রিল ‘সচেতন ছাত্রসমাজ’-এর ব্যানারে একাধিক সংগঠন যৌথভাবে স্মারকলিপিও দিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, চাকসুর রূপরেখা ও নীতিমালা প্রণয়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সমাবর্তন শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে চাকসু নির্বাচনের বাস্তবায়নে কাজ করা হবে বলেও প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।
এখন প্রশ্ন হলো—প্রশাসনের সেই আশ্বাস কি বাস্তব রূপ পাবে? শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন না হলে আন্দোলন আরও বেগবান হতে পারে। তারা দ্রুত গঠনতন্ত্র প্রকাশ ও নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে চবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী বলেন, “সমাবর্তন শেষ, এখন দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের সময়। নির্বাচন যত দ্রুত হবে, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব ততই নিশ্চিত হবে। আমরা প্রশাসনকে সময়সীমা দিয়েছি। আশা করি, তারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করবে।”
চবি ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন, “প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। প্রশাসন সমাবর্তনের পর চাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেছিল। সমাবর্তন শেষ, এখন আমরা চাকসু নির্বাচনের বাস্তবায়ন চাই।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ছাত্র প্রতিনিধিত্ব না থাকায় ক্যাম্পাসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কমে গেছে। তাই এই নির্বাচন শুধু একটি ভোট নয়, এটি শিক্ষার্থীদের সাংবিধানিক অধিকার এবং প্রশাসনের প্রতি আস্থারও পরীক্ষা।
চবির প্রো-ভিসি (প্রশাসন) ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা মিটিং করে খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছি। আগামী বৃহস্পতিবার তা উপস্থাপন করব। নীতিমালা চূড়ান্ত হলে এরপরই চাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া হবে।’
১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। এরপর ১৯৭১, ১৯৭৩ এবং ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত হয় আরও তিনটি নির্বাচন। সর্বশেষ বা পঞ্চম নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
১৯৯০ সালে ছাত্রঐক্য নেতা ফারুকুজ্জামান নিহত হওয়ার ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে চাকসু নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত অচল অবস্থায় পড়ে আছে ছাত্র-ছাত্রীদের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া চর্চার এই প্রাণকেন্দ্র।
প্রতিনিধি/একেবি

