সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

জয়পুরহাটে গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে ২০০ ফুট রাস্তা ভরাট

জেলা প্রতিনিধি, জয়পুরহাট
প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২৫, ০৪:১৫ পিএম

শেয়ার করুন:

জয়পুরহাটে গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে ২০০ ফুট রাস্তা ভরাট

জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার দুধাইল গ্রামে দীর্ঘ ২০ বছরের দুর্ভোগের অবসান ঘটালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ইউনিয়ন পরিষদের অবহেলায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়া গ্রামের একমাত্র কাঁচা রাস্তা এবার মেরামতের দায়িত্ব নিজেরাই কাঁধে তুলে নিয়েছেন তারা। রবিবার সকাল থেকে গ্রামের যুবক ও বয়োজ্যেষ্ঠরা মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় ২০০ ফুট রাস্তা মাটি দিয়ে ভরাটের কাজ শুরু করেন।

স্থানীয়রা জানান, দুধাইল গ্রামে একটি কাঁচা রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে চরম অবহেলার শিকার। বর্ষা মৌসুমে কাঁদা জমে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পাশে পুকুর থাকায় রাস্তার একাংশ ভেঙে গিয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। কিছুদিন আগে স্থানীয় উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে পুকুরের দুই পাড়ে গাইড ওয়াল (প্যালাসাইডিং) নির্মাণ করা হলেও রাস্তায় মাটি ভরাট করা হয়নি।


বিজ্ঞাপন


এই রাস্তাটি দিয়েই শিশুরা স্কুলে যাতায়াত করে, রোগীদের হাসপাতালে নিতে হয় এবং কৃষকরা মাঠের ফসল আনেন। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে রাস্তার অবস্থা এমনই ছিল যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজেও গ্রামের মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো।

এমন পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীরা আর বসে থাকেননি। সবাই মিলে কোদাল, বোল ও টুপরি হাতে নিয়ে রাস্তাটি নিজেরাই ভরাটের কাজ শুরু করেন। এতে অংশ নিয়েছেন গ্রামের তরুণ থেকে শুরু করে বয়স্করাও। গা ঘামিয়ে তারা তৈরি করছেন নিজেদের স্বপ্নের রাস্তা, যা একদিকে যেমন যোগাযোগের উন্নয়ন ঘটাবে, অন্যদিকে এটি গ্রামীণ ঐক্য ও আত্মনির্ভরতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

গ্রামবাসী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়েছি। এতে আমাদের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হবে। তবে যদি প্রশাসন থেকে সহযোগিতা ও পরিদর্শন পাওয়া যেত, তাহলে কাজটি আরও সুষ্ঠুভাবে শেষ করা সম্ভব হতো।’

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরনবী সরকার জানান, ‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে বহুবার সংশ্লিষ্ট দফতরে রাস্তার অবস্থা জানানো হয়েছে। কিছু বরাদ্দে পুকুর পাড়ে গাইড ওয়াল নির্মাণ হলেও রাস্তায় মাটি ফেলার জন্য বরাদ্দ মেলেনি। দীর্ঘদিনের অবহেলা আর প্রশাসনিক উদাসীনতায় অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামবাসীরাই কাজ শুরু করেছে।’


বিজ্ঞাপন


উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ। জনসাধারণ এক হয়ে চাইলে অনেক কিছুই সম্ভব। আমি নতুন দায়িত্বে এসেছি, তাই পূর্বের অবস্থা সম্পর্কে অবগত নই। তবে সামনে এমন কাজে ইউনিয়ন পরিষদ পাশে থাকবে।’

এই উদ্যোগ শুধু একটি রাস্তা ভরাট নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে একটি গ্রামের আত্মপ্রত্যয়, ঐক্য এবং নিজস্ব সমস্যা সমাধানের এক অনুপ্রেরণামূলক গল্প।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর