সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

কক্সবাজারে বরাদ্দের চাল পাননি ৬৩ হাজার ১৯৩ জেলে

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার
প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

কক্সবাজারে বরাদ্দের চাল পাননি ৬৩ হাজার ১৯৩ জেলে

সাগরে মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারির ২৯ দিন অতিবাহিত হলেও কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকার ৬৩ হাজার ১৯৩ জন নিবন্ধিত জেলে এখনও ভিজিএফের (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) খাদ্য সহায়তা হিসেবে বরাদ্দকৃত চাল পাননি।

নিষেধাজ্ঞার কারণে সাগরে মাছ ধরতে না পারায় এসব জেলের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।


বিজ্ঞাপন


এমন অবস্থায় হতদরিদ্র জেলে পরিবারগুলো চরম বিপাকে পড়েছে। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) কক্সবাজারের বিভিন্ন জেলে পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ পরিবার চরম খাদ্যসংকটে ভুগছে। অনেক পরিবারে দিনে মাত্র এক বেলা খাবার মিলছে। কেউ কেউ নদীতীরের বেড়িবাঁধ বা বালুচরে বসে মাছ ধরার জাল মেরামত করছেন, কেউ সময় কাটাচ্ছেন অলসভাবে। আবার কেউ কেউ সাময়িকভাবে পেশা পরিবর্তন করে বিকল্প উপায়ে আয় করার চেষ্টা করছেন।

সরকার গত ১৫ এপ্রিল থেকে বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদীতে ৫৮ দিনের জন্য মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ২৮ দিন পেরিয়ে গেলেও ১৪ মে (বুধবার) পর্যন্ত কক্সবাজারের অধিকাংশ জেলে পরিবার এখনও সরকারি বরাদ্দের চাল পাননি।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি নিবন্ধিত জেলেকে নিষেধাজ্ঞার সময় ৮৬ কেজি চাল দেওয়ার কথা। এটি দুই ধাপে বিতরণ করা হবে—প্রথম ধাপে ৫৬ কেজি এবং দ্বিতীয় ধাপে ৩০ কেজি।


বিজ্ঞাপন


চাল পাননি টেকনাফের ১২ হাজার জেলে পরিবার
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও জালিয়াপাড়ার জেলে রহমান আজহার ও মুজিব উল্লাহ জানান, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির গুলি ও অপহরণের ভয়ে তাঁরা গত পাঁচ-ছয় মাস ধরে সাগর বা নাফ নদীতে মাছ ধরতে পারেননি। ইতোমধ্যে দুই শতাধিক জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে ওই গোষ্ঠী। সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে বাংলাদেশের জলসীমা থেকে চারটি ফিশিং বোটসহ ২৩ জন মাঝিমাল্লাকে অপহরণ করে তারা।

টেকনাফ ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম জানান, বিজিবির তৎপরতায় সম্প্রতি কয়েক দফায় অপহৃত শতাধিক জেলেকে ফেরত আনা গেলেও অনেকে এখনও নিখোঁজ। এতে পরিবারগুলো উৎকণ্ঠায় রয়েছে। এর উপর সরকারি চাল না পেয়ে চরম হতাশায় ভুগছে জেলে পরিবারগুলো।

শাহপরীর দ্বীপের ট্রলারমালিক আবদুল আমিন ও সাবরাং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, দীর্ঘদিন মাছ ধরতে না পেরে জেলেরা এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত। তার ওপর সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় টেকনাফ উপজেলার অন্তত ১২ হাজার জেলে পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বহু পরিবার অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।

মহেশখালী ও অন্যান্য উপজেলাতেও খাদ্যসংকট
মহেশখালীর কুতুবজুম ইউনিয়নের জেলে রহিম উদ্দিন জানান, তাঁরা এখনও বরাদ্দের চাল পাননি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তরে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, বরাদ্দের চাল এখনও এসে পৌঁছায়নি। অথচ গত বছর নিষেধাজ্ঞা শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যে চাল বিতরণ শুরু হয়েছিল।

মহেশখালীর হোয়ানক, মাতারবাড়ী, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী, গোরকঘাটা ও শাপলাপুর ইউনিয়নের শত শত জেলেও একই দুর্ভোগে রয়েছেন।

উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মহেশখালী উপজেলায় মোট জেলে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এর মধ্যে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৫ হাজার ৮৩২ জন।

মহেশখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাহাদুল ইসলাম বলেন, “সরকারি বরাদ্দের চাল এখনও হাতে পৌঁছায়নি। চাল হাতে এলে দ্রুত বিতরণ করা হবে।”

কুতুবদিয়া উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৯ হাজারের বেশি। চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায়ও নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ২৩ হাজারের বেশি। এই সব এলাকায়ও কেউ এখনো বরাদ্দকৃত চাল পাননি।

চরম দুর্দশায় জেলেরা
কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, জেলার ছোট-বড় প্রায় ৬ হাজার ট্রলারে কর্মরত জেলে শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার। ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞার আগের তিন মাসও অধিকাংশ জেলে বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাছ ধরতে পারেননি। নিষেধাজ্ঞার ২৯ দিন পার হলেও চাল হাতে পাননি জেলেরা।

জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবারের নিষেধাজ্ঞায় (১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন) কক্সবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ৬৩ হাজার ১৯৩ জন নিবন্ধিত জেলেকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে দুই ধাপে ৮৬ কেজি চাল দেওয়ার কথা।

cox-bazar

কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দের চাল পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। চাল হাতে পেলেই দ্রুত জেলেদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর