সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রাজশাহীর পাড়া-মহল্লায় দুর্গ গড়ে তোলার ঘোষণা ইসলামী আন্দোলনের

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২৫, ১০:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

R
রাজশাহীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সমাবেশ। ছবি- ঢাকা মেইল

রাজশাহীর পাড়া-মহল্লায় দুর্গ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মঙ্গলবার (১৩ মে) জেলায় দলটির সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

এদিন বিকেলে রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে জেলা ও মহানগর শাখার আয়োজনে সমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। চরমোনাই পীরের নেতৃত্বে চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে বলে এ সময় দাবি করেন সংগঠনটির নেতারা।


বিজ্ঞাপন


সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির মহানগর শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা হোসাইন আহমদ। 

সেখানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মো.  আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নুরুন নাবী, রাজশাহী জেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো দুনিয়াতে শান্তি আখিরাতে মুক্তি। এদেশ পরিবর্তন আমাদেরই করতে হবে। এ দেশে জন্মগ্রহণ করেছি, এ দেশ আমার।’

আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে চরমোনাই পীর বলেন, ‘বারবার আমাদের ধোকা দিয়ে বোকা বানিয়ে বেগমপাড়া করেছে। ওরা বারবার ধোকা দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ বাস্তবায়ন করেছে। আমরা চাই, রাষ্ট্রীয়ভাবে যেটা থাকবে সেটা ইসলাম। আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো। যারা দেশ ও ইসলামকে ভালোবাসে তারা ইসলামী আন্দোলনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ন্যায়ের পক্ষে অন্যায়ের প্রতিবাদের জন্যই আমাদের প্রতিষ্ঠা।’


বিজ্ঞাপন


গণঅভ্যুত্থান নিয়ে তিনি বলেন, ‘মেধাবী ছেলেরা যখন আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল; তখন কে মাঠে নামবে কে নামবে না, এসব আমরা না ভেবে আমরা আমাদের ব্যানার নিয়ে গুলির মুখে নেমেছিলাম। আমরা ইসলামের জন্য রাজনীতি করি।’

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ইস্যুতে বিএনপি কৌশলী অবস্থান নিয়েছে উল্লেখ করে রেজাউল করীম বলেন, ‘যারা নাকি কৌশল করছেন, এটা মানুষ দেখতে চায় না। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি তাদের শাসন দেখেছি। নতুনভাবে তাদের আর দেখার কিছু নাই। এখন যেটা আদর্শ হবে সেটা ইসলাম। সামনে ইসলামী শরীয়া বাস্তবায়ন হবে ইনশাআল্লাহ।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মো. আশরাফ আলী আকন বলেন, ‘রাজনীতি হলো নীতির রাজা। কিন্তু আওয়ামী লীগ এদেশে গজবের রাজনীতি বাস্তবায়ন করেছিল। আওয়ামী লীগ আজাবের নাম, আওয়ামী লীগ গজবের নাম, আওয়ামী লীগ ধ্বংসের নাম। আওয়ামী লীগ ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচারকারীর নাম। আওয়ামী লীগ দেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য করার ষড়যন্ত্রকারীর নাম। বিশ্বের সর্বকালের সর্বেশ্রেষ্ঠ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ভারতের ফাঁদে পা দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ শুরু থেকে একটা বিশ্বাসঘাতকের দল, গাদ্দারের দল। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। লক্ষ্মণ সেনের মতো পালিয়েছে হাসিনা। ৫ আগস্টেই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। শুধু কাগজকলমে বাকি ছিল। এটা বাস্তবায়নে বেশি সময় লেগেছে।’

R2

প্রধান উপদেষ্টার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ড. ইউনুস সাহেবকে বলি, ৬৫০ জন লোক ক্যান্টনমেন্টে ছিল, তারা পালিয়ে গেল। ইতিহাস আপনাকেও ক্ষমা করবে না। জাতীয় চোর মানবতার দুশমনগুলো কীভাবে পালিয়ে গেল? পাপ বাপকেও ক্ষমা করে না। আপনাকেও একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সব জায়গায় আওয়ামী দোসররা বসে আছে। আপনি ব্যর্থ হয়েছেন। হাসিনা সবকিছু দলীয়করণ করেছে, সব জায়গায় ১০০ জনে ৯৫ জন আওয়ামী লীগের লোক। তারা এখনো ক্ষমতায় থাকে কীভাবে? এখনো ইউনিভার্সিটির শিক্ষক থাকে কীভাবে? এখনো বিচারক থাকে কীভাবে?’

রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে অধ্যাপক আকন বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে জনগণ ক্ষমা করে নাই। তাদের মতো কেউ যদি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতি করে, জনগণ তাদেরকেও ক্ষমা করবে না। সাবধান হয়ে যান। জনগণকে আহ্বান করে যাই, আপনারা ঐক্যবদ্ধ হন।’

এ সময় সংস্কার করে তারপর পিআর পদ্ধতিতে আগামী নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান তিনি। বলেন, ‘যারা পিআর পদ্ধতি চায় না, তারা স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ৯১টা দেশে পিআর পদ্ধতি চালু আছে।’

এ সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম বলেন, ‘অতীতের চাঁদাবাজ খুন গুমের রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করতে হবে। সংখ্যানুপাতিক হারে (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে হবে। আমরা কেন চাই? এটা হলে কোনো ফ্যাসিস্ট তৈরি হবে না। ২০১৮ সালে যারা ছিল, তাদের স্বপদে রেখে নির্বাচন হবে না। কর্মফল অনুযায়ী বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারাই দুর্নীতি করেছে। আমরা মৌলিক সংস্কারের পর নির্বাচন চাই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পীর সাহেব চরমোনাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তাকে পাশ কাটিয়ে নির্বাচন হলে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া আন্দোলন শুরু হবে।’

এ সময় পুলিশকে জনগণের হয়ে কাজ করার আহবাব জানান তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনটির মহানগর শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা হোসাইন আহমদ বলেন, ‘আমাদের পীর সাহেব চরমোনাইয়ের নেতৃত্বে জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। আমরা দাবি করছি, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন দিতে হবে এবং এটা হতে হবে পিআর পদ্ধতিতে। এছাড়া সরকার গঠিত ‘নারী সংস্কার কমিশন’ বাতিল করতে হবে। আমাদের দাবি মানা না হলে আবারও আন্দোলনে নামা হবে। আমাদের কর্মীরা পাড়া-মহল্লায় কাজ করবেন, আমরা প্রত্যেক এলাকায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দুর্গ গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।’

সমাবেশে মহানগর ও জেলা কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলা-ইউনিয়ন ও মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর