সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বাংলাদেশে পাঠানো ৭৮ জনের শরীরে নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন

জেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২৫, ০৪:৪৪ পিএম

শেয়ার করুন:

বাংলাদেশে পাঠানো ৭৮ জনের শরীরে নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন

বাংলাদেশে পাঠানো ৭৮ জনের শরীরে দেখা গেছে নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন। এমন অমানুষিক নির্যাতনের পর বাংলাদেশে পুশইন করার অভিযোগ ভারতীয় বিএসএফের বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশি মুসলিম এবং ৩ জন ভারতীয় মুসলিম।

শুক্রবার (৯ মে) বিকেল ৩টার দিকে সাতক্ষীরা রেঞ্জের সীমান্তবর্তী সুন্দরবনের মান্দারবাড়ীয়া এলাকার নদী পথে দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পুশইন (ঠেলে দেওয়া) করা হয়। এদের মধ্যে ৭৫ জন্ম সূত্রে বাংলাদেশিকে মঙ্গলবার (১৩ মে) বেলা ১১টায় প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদেরকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


satkhira

পুশ ইন করা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২৬ এপ্রিল ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদ শহরের সুরাট বস্তি ভেঙে গুড়িয়ে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। ওইদিন রাতে সেখান থেকে আটক করা হয় ৭৮ জনকে। আটকেরপর তাদের হাত ও চোখ বেধে নেওয়া হয় পুলিশ ক্যাম্পে। এরপর অমানুষিক নির্যাতনের মধ্যদিয়ে সেখানেই কেটে যায় দশ দিন। ইতেমধ্যেই মাথায় কু-বুদ্ধি আসে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। গত ৬ মে গুজরাট থেকে প্রথমে কোলকাতায় আনা হয় তাদের। পরে সেখান থেকে তাদের জাহাজে করে সাতক্ষীরার সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া এলাকায় নিয়ে চোখ বেধে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপরে মানবিক কারণে তাদের মান্দারবাড়িয়া ফরেস্ট ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়।

satkhira_5

পুশ ইন করা ব্যক্তিদের মধ্যে হারুন শেখ বলেন, আমি প্রায় ৩৭ বছর আগে ভারতের গুজরাটে গিয়ে বসবাস শুরু করি এবং সেখানে ভাংগাড়ির ব্যবসা করতাম। হঠাৎ ভারত পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে গত ২৬ এপ্রিল রাত তিনটার দিকে ভারতীয় ক্রাইম ডিভিশনের পুলিশ আমাদের বাড়িঘর ভেঙে দেয়। পরে তারা আমাদের জোরপূর্বক বিএসএফের (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী) কাছে হস্তান্তর করে, তারা আমাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। তিনি জানান, প্রায় ১৫ দিন পর আজ সে ভাত খেয়েছে।


বিজ্ঞাপন


satkhira_1

কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান বলেন, গত ৯ মে  ভোররাতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ৭৫ জন বাংলাদেশি মুসলিম এবং ৩ জন ভারতীয় মুসলিমকে জোরপূর্বক পুশ ইন করা হয়। তাদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন যাবৎ ভারতের গুজরাট রাজ্যে বসবাস করে আসছিল এবং বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।

satkhira_2

প্রাথমিক জিজ্ঞাসায় জানা যায়, গত ২৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখ গভীর রাতে ভারতীয় প্রশাসন তাদের বাসা থেকে আটক করে এবং গত ৯ মে ২০২৫ তারিখ ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ভোররাতে গোপনে সুন্দরবনের মান্দারাড়ি চরে রেখে যায়।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে উক্ত ব্যক্তিরা মান্দারবাড়িয়া চর হতে মান্দারবাড়ি ফরেস্ট অফিসে এসে আশ্রয় নেয়। ফরেস্ট অফিস কর্তৃক কোস্ট গার্ডকে অবহিত করলে গত ১০ মে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন অতিদ্রুত পুশইন করা ৭৮ জন ব্যক্তিকে উদ্ধার করত প্রয়োজনীয় খাবার ও ঔষধ সামগ্রী সরবরাহ করে।

satkhira_3

লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান বলেন, পুশইন হওয়া ব্যক্তিরা আমাদেরকে জানিয়েছে- ভারতীয় পুলিশ তাদের বস্তিগুলোতে হানা দেয় এবং বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। এছাড়াও তাদেরকে পরিবারের সদস্যদের সামনে অমানবিক  নির্যাতন করার পাশাপাশি পরিবারের অন্যন্যা সদস্যদেরও পাশবিক নির্যাতন করে। তারপর তাদের চোখ বেঁধে একটি সামরিক বিমানে এবং পরিবারের অন্যন্যা সদস্যদের অপর একটি সামরিক বিমান যোগে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় স্থানান্তর করে। পরবর্তীতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের সুন্দরবনের একটি জায়গায় রেখে যায় এবং জাহাজে অবস্থাকালীন সময়ে শারীরিক নির্যাতন, অমানবিক আচরণ, ধর্মীয় অবমাননাসূচক মন্তব্য ও প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করেনি এবং এখন পর্যন্ত তাদের স্ত্রী সন্তানদের সঠিক অবস্থান তারা জানে না।

satkhira_6

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, গত ১১ মে ৭৮ জন উদ্ধারকৃত ভারত থেকে পুশইন করা ব্যক্তিদের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোস্ট গার্ড এর পক্ষ থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়। এম মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশিকে আজ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে, গত  ১২ মে সোমবার শ্যামনগর থানায় মামলা দায়ের করে তিন ভারতীয় নাগরিককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

প্রতিনিধি/এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর