পিরোজপুরে বিস্ফোরক ও চাঁদাবাজি মামলায় আওয়ামী যুবলীগের শীর্ষ নেতা এবং সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য নাছির উদ্দিন হাওলাদারকে (৪২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রোববার (১১ মে) বিকেল ৫টার দিকে পিরোজপুর সদর থানার ওসির নির্দেশে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার ভাংগা প্রেস এলাকা থেকে সাব ইন্সপেক্টর ইফাদ বাবু নাছিরকে গ্রেফতার করে।
বিজ্ঞাপন
গ্রেফতার নাছির উদ্দিন পিরোজপুর সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের মৃত মোজাহার আলী হাওলাদারের ছেলে। যুবলীগ নেতা নাছিরের বিরুদ্ধে, হত্যা, চাঁদাবাজি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা ও মারামারিসহ বিভিন্ন অভিযোগে জেলা, উপজেলা ও ঢাকার বিভিন্ন থানায় রয়েছে একাধিক মামলা।
জানা গেছে, পিরোজপুর সদর থানায় গত ৭ এপ্রিল পিরোজপুরে জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও দুর্গাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. চান মিয়া মাঝিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যার পরিকল্পনা, ঘর ভাঙচুর, লুটপাট, গুলিবর্ষণ ও বোমা বিস্ফোরণ এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম কলিম বাদী হয়ে দায়ের করেন।
মামলায় চান মিয়া মাঝি ছাড়াও তার ছেলে মুরাদ হোসেন মাঝি, ভাগ্নে পিরোজপুর জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মো. নাসির উদ্দিন হাওলাদার, হারুন অর রশিদ বাদশা, মো. মাসুদ মাঝি, রশিদ শাহরিয়ার মাঝি, লোকমান হোসেন হাওলাদার, মহিউদ্দিন হাওলাদার ঝন্টু, সামশুদ্দিন কালু, মো. সাখাওয়াত হোসেন মল্লিকসহ অজ্ঞাত ২৫/৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
![]()
বিজ্ঞাপন
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগের সরকারের সময়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোট মনোনীত প্রার্থী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম বিন সাঈদীর ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী করেন। তার নির্বাচনের পক্ষে তৎকালীন জেলা বিএনপির সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম কলিম নির্বাচন করতে ঢাকা থেকে পিরোজপুরের দুর্গাপুরের বাড়িতে এলে আওয়ামী কৃষক লীগের পিরোজপুর জেলা সভাপতি চান মিয়া মাঝির নেতৃত্বে ২০১৮ মালের ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ২০/২৫ জন অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী বাহিনী পিরোজপুর সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের চান মিয়া মাঝির বাড়ির সামনের ব্রিজের ঢালে তার (জহিরুল ইসলাম কলিম) গাড়ি থামিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে এবং গাড়ির মধ্যে থাকা ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার ও লিফলেট ছিনিয়ে নেয়। এ সময় হামলাকারীরা কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে এবং তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
এ ঘটনার পরের দিন (২৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা জেলা কৃষক লীগের সভাপতি চান মিয়া মাঝির নেতৃত্বে ৫০/৬০জন সন্ত্রাসী আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা, চাইনিজ কুড়াল, রামদা, হকিস্টিক ও দেশীয় লাঠিসোঁটা নিয়ে জহিরুল ইসলাম কলিমের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা কলিমের বাড়ির সামনে বন্দুক ও পিস্তল দিয়ে ২০/২৫ রাউন্ড গুলি ও ৮/১০টি বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে। ঘরের প্রধান ফটক দাও দিয়ে কুপিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর ও স্বর্ণালংকার ও মালামাল লুটপাট করে। এসময় তারা কলিমের বৃদ্ধ মায়ের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং কলিমকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ঘটনার পরে জীবন বাঁচাতে কলিম পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে যায়।
যাত্রাবাড়ী থানার সাব ইন্সপেক্টর ইফাদ বাবু জানান, পিরোজপুর সদর থানার ওসি মো. রবিউল ইসলাম স্যারের পাঠানো পিরোজপুর মামলার আসামিকে গ্রেফতারের রিকজিশনের ভিত্তিতে মামলার ২ নম্বর আসামি নাছিরকে আজ সাড়ে ৪টার দিকে ভাংগা প্রেস এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, বিস্ফোরক ও চাঁদাবাজি মামলার দুই নম্বর আসামি যুবলীগ নেতা নাছির উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আগামীকাল পিরোজপুর আদালতে পাঠানো হবে।
প্রতিনিধি/এসএস

