শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

পুলিশের হাতে ধরা চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ১১ মে ২০২৫, ০৭:৫৫ পিএম

শেয়ার করুন:

পুলিশের হাতে ধরা চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না

চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্না এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। শনিবার (১০ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাটের বাড়ৈপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে বাকলিয়া থানা পুলিশ।

রোববার (১১ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাকলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইখতিয়ার উদ্দিন। তিনি জানান, আলোচিত জোড়া খুন মামলার এজাহারভুক্ত দ্বিতীয় আসামি শারমিন আক্তার তামান্না। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।


বিজ্ঞাপন


ওসি আরও জানান, তামান্না দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। কখনো ছদ্মবেশে বাসা পরিবর্তন করে, আবার কখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে নিজেকে আড়াল করে রাখতেন। তবে অবশেষে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, তামান্নার কাছ থেকে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। এজন্য তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে।

আলোচিত হত্যাকাণ্ড
পুলিশ জানায়, গত ৩০ মার্চ ভোরে চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়ার অ্যাক্সেস রোড এলাকায় একটি প্রাইভেটকার থামিয়ে দুইজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন বখতিয়ার হোসেন মানিক ও মো. আবদুল্লাহ। এ ঘটনায় আরও দুজন আহত হন।

এ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উঠে আসে ছোট সাজ্জাদের নাম। পুলিশ জানায়, অপর সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেনের সঙ্গে বিরোধের জেরে এ হামলা চালান সাজ্জাদের অনুসারীরা।

দুই দিন পর, ১ এপ্রিল নিহত মানিকের মা ফিরোজা বেগম বাকলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি অভিযোগ করেন, কারাগারে থাকা সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী তামান্নার পরিকল্পনায় খুনের ঘটনাটি ঘটেছে। মামলায় সাজ্জাদ ও তামান্না ছাড়াও মো. হাসান, মোবারক হোসেন ইমন, রায়হান এবং বোরহানকে আসামি করা হয়।


বিজ্ঞাপন


আগাম জামিন ও আত্মগোপন
মামলার পর ৯ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন তামান্না। বিচারপতি মো. মাহবুব উল আলম ও বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের বেঞ্চ তার জামিন মঞ্জুর করেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে, ১৩ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক তামান্নাসহ তিনজনকে সাত দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। কিন্তু তামান্না আত্মসমর্পণ না করায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।

সাজ্জাদের অতীত ও তামান্নার ফেসবুক লাইভ
এর আগে, গত ১৫ মার্চ রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি থেকে ছোট সাজ্জাদকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে খুন, চাঁদাবাজিসহ চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন থানায় অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে। তাকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল সিএমপি।

গ্রেফতারের সময় তামান্না তার সঙ্গে ছিলেন, তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান। পরদিন তামান্না ফেসবুক লাইভে এসে স্বামীকে ছাড়িয়ে আনার ঘোষণা দেন এবং হুমকির সুরে বলেন, ‘খেলা শুরু করছো তোমরা, শেষ করবো আমরা।’

পরে ৮ এপ্রিল রিমান্ডে থাকা সাজ্জাদকে নিয়ে পুলিশ রাউজান ও বায়েজিদ এলাকায় মাইকিং করে সন্ত্রাসবিরোধী বার্তা দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তামান্না ফেসবুকে প্রতিবাদ জানিয়ে পুলিশের কার্যক্রমকে 'মানবাধিকার লঙ্ঘন' বলে দাবি করেন।

কে এই তামান্না?
চট্টগ্রাম মহানগরীর মাদারবাড়িতে বেড়ে ওঠা শারমিন আক্তার তামান্নার মা-বাবা থাকলেও তারা তাকে সন্তান বলে পরিচয় দিতে চান না। এলাকাবাসীর মতে, যেমন স্বামী সাজ্জাদ, তেমনই স্ত্রী তামান্না—বরং অনেকের মতে তামান্না আরও আগ্রাসী।

তামান্নার বয়স এখন ৩৫ বছর। তিনি সাত মাস আগে রাউজানের একটি মসজিদে কাজী ডেকে ছোট সাজ্জাদকে বিয়ে করেন। এটি তামান্নার তৃতীয় এবং সাজ্জাদের দ্বিতীয় বিয়ে। সাজ্জাদ প্রথমে ‘শিলা’ নামে এক তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। শিলার গলাকাটা লাশ গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় পাওয়া যায়।

তামান্না এক সময় দুবাইয়ের নাইট ক্লাবে নাচতেন। ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে তিনি সেখানে তিন মাস অবস্থান করেন এবং বিভিন্ন ক্লাবে ড্যান্সার হিসেবে কাজ করেন। ২০২২ সালের দিকে আবারও দুবাই যান এবং সেখানেই সাজ্জাদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে দেশে ফিরে ২০২৪ সালের শুরুতে তাদের সম্পর্ক আবার ঘনিষ্ঠ হয়।

dd

পারিবারিক পটভূমি
তামান্নার প্রথম বিয়ে হয় ২০০৭ সালে। প্রথম ঘরে তার একটি ১৭ বছরের ছেলে রয়েছে। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং সে ঘরেও একটি সন্তান রয়েছে। প্রথম স্বামীর সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই, তবে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে সাজ্জাদ ছোটবেলা থেকেই অসহায় ছিলেন। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর নজু মিয়ারহাট এলাকায় একটি মুরগির দোকানে চাকরি নেন। পরে অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন এবং দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খানের অনুসারী হিসেবে পরিচিতি পান। তখন থেকেই তিনি ‘ছোট সাজ্জাদ’ নামে পরিচিত হন।

সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ তার বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিবরণ দেন।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর