বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫, ঢাকা

সিরাজগঞ্জে সরকারি বরাদ্দের গরু বিতরণে নয় ছয়!

জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশিত: ১০ মে ২০২৫, ০৯:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

crime

কথায় আছে- কাজির গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই। ঠিক এমনটাই ঘটেছে সিরাজগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল তাড়াশ উপজেলায়। সরকারি বকনা বাছুর কর্মসূচির আওতায় তৈরি করা তালিকায় নাম আছে, ভোটার আইডি নম্বর এবং ঠিকানাও আছে। তবে সেই পরিচয়ের বিপরীতে দেওয়া হয়েছে অন্যজনের মোবাইল নম্বর। এতে সরকারি বরাদ্দের গরুর বাছুর পায়নি কয়েকটি পরিবার।

এমন কাণ্ডের পর অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর এবং বিএনপি নেতাদের যোগসাজশে সরকারি বরাদ্দের বাছুর বিতরণে হয়েছে নয় ছয়। বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টির পর এ ঘটনায় বিএনপি নেতাদের দুষছেন সংশ্লিষ্ট প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। এ অবস্থায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা। শুধু তাই নয়, ওজন কম হওয়ায় স্থানীয়দের তোপের মুখে বন্ধ বাছুর বিতরণ কর্মসূচিও।


বিজ্ঞাপন


ভুক্তভোগী পরিবার, জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩০ এপ্রিল তাড়াশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের আয়োজনে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর চত্বরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৯০ জন সুফলভোগীর মাঝে বকনা বাছুর বিতরণ করা হয়। এ সময় তালিকায় নাম থাকা কয়েকজন বাছুর না পেলে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। পরে তোপের মুখে রতন কুমার সিং নামের একজনকে তার বাছুর বুঝিয়ে দেওয়া হলেও আরও কয়েকজন বাছুর না পাওয়ার অভিযোগ করতে থাকেন। এরপর তাদের বাছুর দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট দফতরে ঘুরে ঘুরেও কোনো সমাধান মিলছে না।

thumbnail_1000103440

ভুক্তভোগীদের একজন তাড়াশের মাধাইনগড় ইউনিয়নের ক্ষিরপোতা গ্রামের বাসুদেব সরকার। তার স্ত্রী সবিতা রানী বলেন, গরু বিতরণের তালিকায় জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর আমার। নাম পাল্টে সবিতা রানীর স্থলে সনজিতা রানী নাম দেওয়া হয়েছে। আমার স্বামী বাসুদের সরকারের নামের স্থলে দেবাশিষ সরকার নাম দেওয়া হয়েছে। মোবাইল নম্বর অন্য কারও।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, আমাদের ক্ষিরপোতা গ্রামে সনজিদা, দেবাশিষ সরকার নামে কোনো মানুষের বসবাস নেই। ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। গরু বিতরণের আগের রাতেও তালিকায় হুবহু আমাদের নাম ঠিকানা ছিল। আমি এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করব।


বিজ্ঞাপন


তালম ইউনিয়নের মানিক চাপড় গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী ক্ষিতীশ তির্কী বলেন, গরু বিতরণের তালিকায় আমার যাবতীয় তথ্য দেওয়া রয়েছে। তবে মোবাইল নম্বরটা আমার না। গরু বিতরণ সম্পর্কে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। পরে আমি জানতে পেরেছি, আমার গরু অন্য কেউ নিয়ে গেছে।

আরও পড়ুন

রফতানিযোগ্য আমের বাগান কেটে দিল দুর্বৃত্তরা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির উপদেষ্টা খোন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, তাড়াশ উপজেলায় বিএনপির নাম ভাঙিয়ে আগেও অনেকেই অনৈতিক কর্মকাণ্ড করেছেন, এখনও করে যাচ্ছে। কেউ যদি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারও বিরুদ্ধে অনৈতিক কোনো অভিযোগ উঠলে তা নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য হাই কমান্ডের কাছে দাবি জানাচ্ছি। দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে অনৈতিক কাজের কোনো সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় বিএনপি দলীয় নেতৃবৃন্দ সুফলভোগীদের তালিকা দিয়েছিলেন। সেই তালিকা অনুযায়ী আমরা গরু বিতরণ করেছি। এখন দেখছি তালিকাভুক্ত দু’জন সুফলভোগী গরু পাননি। এ দায় তাদেরও নিতে হবে।

তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সুফলভোগীদের গরু নিলো কারা, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর