গায়ে গাউন, মাথায় টুপি, হাতে সনদ—বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত এবার পূরণ হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের জন্য। দীর্ঘ ৯ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন, যা বিশ্বের ইতিহাসে একক কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সমাবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সমাবর্তনের সময়সূচি ও অংশগ্রহণকারীরা আগামী ১৪ মে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে এই মহা-আয়োজন। এতে অংশ নিচ্ছেন ২০১১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ২২ হাজার ৫৬০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ২২ জন পিএইচডি ও ১৭ জন এমফিল ডিগ্রিধারী রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
অনুষদভিত্তিক অংশগ্রহণের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ (৪,৯৮৭ জন), এরপর ব্যবসায় প্রশাসন (৪,৫৯৬ জন), সমাজবিজ্ঞান (৪,১৫৮ জন), এবং বিজ্ঞান অনুষদ (২,৭৬৭ জন)।
অতিথি, বক্তা ও বিশেষ সম্মাননা
সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষকও। তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। সভাপতিত্ব করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার।
বিজ্ঞাপন
ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা
এই বিশাল আয়োজনে খরচ হবে প্রায় ১৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে সাড়ে ৬ কোটি এসেছে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ফি থেকে এবং বাকি অর্থ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি ও স্পন্সররা। আয়োজন সফল করতে গঠন করা হয়েছে ১৯টি উপকমিটি।
সমাবর্তনের দিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে চূড়ান্ত পর্যায়ে। শিক্ষার্থীদের সিঙ্গেল লাইনে প্রবেশ করতে হবে এবং দুপুর ১টার পর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। এছাড়াও যেকোনো ধরণের ব্যক্তিগত গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর ফটকে থাকবে পার্কিং ও বাস ট্রান্সফারের ব্যবস্থা। যাতায়াতের জন্য শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ছাড়বে ১০০টি বিশেষ বাস এবং চলবে ৪টি বিশেষ শাটল ট্রেন। ক্যাম্পাসে অভ্যন্তরীণ চলাচলের জন্য থাকবে শাটল বাস সার্ভিস।
গাউন বিতরণ, খাবার ও উপহার সামগ্রী
সমাবর্তী শিক্ষার্থীরা ১২ মে থেকে গাউন ও টুপি নিজস্ব বিভাগ থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। সমাবর্তনের দিন সকাল ৭টা থেকেও সংগ্রহ করতে পারবেন। অনুষ্ঠানের পরপরই গাউন জমা দিয়ে তারা সনদ ও উপহার সামগ্রী গ্রহণ করবেন। তাছাড়া, সমাবর্তনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ২৬ হাজার উপহার সামগ্রী। প্রত্যেকে পাবেন একটি জুটের ব্যাগ, কোর্ট পিন, কলম ও মোবাইল ওয়ালেট সমন্বিত কম্বো বক্স।
সম্প্রচার ও সম্প্রচারের ব্যবস্থা
সমাবর্তন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। যারা মূল অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না, তাদের জন্য ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার, জারুলতলা, সায়েন্স ফ্যাকাল্টি চত্বরসহ পাঁচটি স্থানে থাকবে এলইডি স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা।
বিশেষ বার্তা ও লোগো
সমাবর্তনের লোগোতেও রয়েছে বিশেষ বার্তা। এতে প্রতিফলিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাস—জুলাই বিপ্লব, শহীদ আবু সাইদের প্রতিকৃতি এবং ক্যাম্পাসের সবুজ প্রকৃতি। লাল ও সবুজের ব্যবহার এই আয়োজনের আবেগ ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছে।
প্রশাসনের বক্তব্য
সমাবর্তন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী জানান, একক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি দেশের সবচেয়ে বড় সমাবর্তন। সবাই নিয়মতান্ত্রিকভাবে এতে অংশ নিবেন, এটাই প্রত্যাশা। এছাড়া জরুরি নির্দেশনাগুলা সমাবর্তনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে, সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যাবেন সমাবর্তী শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ৫৮ বছরের ইতিহাসে মাত্র চারটি সমাবর্তন হয়েছে। এবার আমরা ইতিহাস গড়তে যাচ্ছি। একই সমাবেশস্থলে এতো শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে সমাবর্তন, বিশ্বের ইতিহাসে এটাই হবে প্রথম।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানসূচি
অনুষ্ঠানটি শুরু হবে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে, অতিথিদের আসন গ্রহণের মাধ্যমে। এরপর ১টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে সমাবর্তন শোভাযাত্রা। বিকেল ২টা থেকে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হবে এবং ২টা ৫ মিনিটে পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হবে। ২টা ১৫ মিনিটে সমাবর্তনের সভাপতি ও ভাইস-চ্যান্সেলর সমাবর্তনের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। পরবর্তী সময়ে, ২টা ১৬ মিনিটে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন।
এরপর, বিকেল ২টা ২০ মিনিটে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি.লিট. ডিগ্রি প্রদান করা হবে এবং ২টা ৩০ মিনিটে উপাচার্য বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করবেন। ৩টা থেকে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন, এবং এরপর যথাক্রমে ইউজিসি চেয়ারম্যান (৩টা ৫ মিনিট), শিক্ষা উপদেষ্টা (৩টা ১০ মিনিট) এবং সমাবর্তন বক্তা (৩টা ১৫ মিনিট) বক্তব্য প্রদান করবেন।
বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হবে। এরপর ৩টা ৫০ মিনিটে সভাপতি তার বক্তব্য প্রদান করে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করবেন। অনুষ্ঠান শেষ হবে ৪টা থেকে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও ৪টা ১ মিনিটে সমাবর্তন বক্তার প্রস্থান করার মাধ্যমে।
প্রতিনিধি/এসএস