সামুদ্রিক মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য বছরের নির্দিষ্ট সময় সকল প্রকার মৎস্য নৌযান কর্তৃক যেকোনো প্রজাতির মাছ ধরার ব্যাপারে সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে থাকে। এ আইন অমান্য করে যারা সমুদ্রে গিয়ে মাছ শিকার করে; তারা মৎস্য সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়। এসময় তারা এবং তাদের ফিশিং বোট, মাছ, জাল জব্দ ও বিভিন্ন দণ্ডে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়। জব্দকৃত মাছগুলো দুস্থ ও এতিমখানা নামধারী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানে বিলি-বন্টন করা হয়। যার প্রকৃত পরিমাপ ও মূল্য নির্ধারণ করে নিলামে বিক্রি করলে সরকার মোটা দাগে রাজস্ব আহরণ করতে পারে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২০২৫ সালের ১১ মার্চ সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য প্রতি বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন সকল প্রকার মৎস্য নৌযান কর্তৃক যেকোনো প্রজাতির মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। যা একই বছর ১৬ মার্চ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু এই আইন ভঙ্গ করে কেউ সাগরে গিয়ে মাছ শিকার করলে সেই মাছ সঠিক মূল্যে বিক্রি বা নিলামে তোলার বিষয়ে কিছু স্পষ্ট করা হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত জব্দকৃত বিপুল পরিমাণ ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নানান ভাবে বিলি-বন্টনের নামে হরিলুট হয়ে যায়।
গত ৬ মে মধ্যরাতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার টাংকি ঘাট ও চেয়ারম্যানঘাট এলাকার মেঘনা নদীতে মাছ শিকারের সময় ৩টি ফিশিং বোটসহ ৪৫ লাখ টাকা মূল্যের প্রায় দেড়শ’ মণ ইলিশসহ ৫৬ জন জেলেকে আটক করে কোস্টগার্ড ও মৎস্য দফতর। পরদিন ৭ মে জব্দকৃত মাছ মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফয়জুর রহমানের (হাতিয়ায় মৎস্য কর্মকর্তা না থাকায় পার্শ্ববর্তী সুবর্ণচর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন) উপস্থিতিতে মাদ্রাসা, এতিমখানা নামধারী বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মাঝে বিতরণ করা হয়। আটককৃত বোটগুলোকে জরিমানা ও জেলেদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এরপর একই এলাকা থেকে ৮ মে গভীর রাতে ৬টি বোটে চার লাখ ৬১ হাজার টাকা মূল্যের প্রায় ৬১৫ কেজি ইলিশসহ ৯৩ জন জেলেকে বোটসহ আটক করা হয়। পরদিন ৯ মে জব্দকৃত মাছ একই ভাবে বিলি-বন্টন ও জরিমানা করা হয়।
বিজ্ঞাপন
জব্দকৃত এই মাছগুলো সঠিক মূল্য ও পরিমাপে বিক্রি বা নিলামে তুললে সরকার বেশি পরিমাণে রাজস্ব আয় করতে পারতো বলে দাবি করেন স্থানীয় তমরোদ্দি ঘাট এলাকার আলমগীর মাঝি। তিনি জানান, বুধবার মৎস্য অফিসার সুবর্ণচর থেকে আসতে দুপুর হয়ে যায়। ফলে মাছগুলো পচে যায় আর এই পচা মাছ মানুষের মাঝে বিলি করা হয়। বিলির সময় এতিমখানা এবং অসহায় লোকের চেয়ে সুবিধা গ্রহণে স্বচ্ছল মানুষের সংখ্যা ছিল বেশি। একইরকম বিষয় তুলে ধরে স্থানীয় আব্দুল্লাহ আল মাছুম বিল্লা নামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক জানান, জব্দকৃত মাছগুলো সঠিক মূল্যে নিলামে বিক্রি করলে পাবলিক গ্যাদারিংও সৃষ্টি হবে না, সরকারি রাজস্ব আদায়েরও একটা সুযোগ তৈরি হবে।
যদিও এসময় মৎস্য আহরণ, পরিবহন, বিক্রি নিষিদ্ধ তথাপি জব্দকৃত মাছগুলো বিশৃঙ্খল বিতরণ ও অপচয় না করে উপযুক্ত মূল্যে নিলামে তুললে সরকারি রাজস্ব সুবিধা হয় বলে মত দেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, প্রতিটি অভিযানে জব্দকৃত মাছ উপজেলা মৎস্য অফিসের স্টাফরা বেশি হারে নিয়ে যায়। তারা বস্তায় করে মাছ নিয়ে যায় বাড়িতে এবং অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। শুক্রবার (৯ মে) বিতরণ করা ইলিশ মাছ উক্ত অফিসের এক ইনুমারেটর তার বাড়িতে নিয়ে অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের কাছে বিক্রি করার খোঁজ পাওয়া গেছে।
নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সমুদ্রে মাছ ধরা ও জব্দ করা হলে; তার করণীয় সম্পর্কে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. আব্দুর রউফের সঙ্গে প্রতিবেদকের মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, দুইভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ যেটা সুবিধা মনে করবেন মূলত সেই সিদ্ধান্ত নেওয়াই উপযুক্ত। তবে সুনির্দিষ্টভাবে জব্দকৃত মাছগুলো নিলামে তুলতে হলে নতুন করে আইন তৈরি করতে হবে বলে জানান মৎস্য মহাপরিচালক।
প্রতিনিধি/এফএ