‘প্রাকৃতিক অক্সিজেন রক্ষা দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন ভয়েসের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সম্প্রতি এক ছাত্র-যুব সমাবেশ ও র্যালির আয়োজন করা হয়।
সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত আয়োজনে পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়নের দাবিতে নানা বক্তৃতা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে দিনটি পালিত হয়।
বিজ্ঞাপন
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন গ্রিন ভয়েসের সহ-সমন্বয়ক আরিফুর রহমান এবং সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মো. আলমগীর কবির। বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাভেদ জাহান, নির্বাহী সদস্য, বাপা, খান আসাদুজ্জামান মাসুম, সভাপতি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, সাংবাদিক ও গবেষক আনিস রায়হান, হুমায়ুন কবির সুমন, তরিকুল ইসলাম রাতুল, শফিকুল ইসলাম টোকন, শাকিল কবির, মোনছেফা তৃপ্তি, ফাহমিদা নাজনীন, সহ সমন্বয়ক, গ্রিন ভয়েস এবং বহ্নিশিখার কেন্দ্রীয় সংগঠক ফাতেহা শারমিন এ্যানি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কুররাতুল আইন কানিজ সহঢাকাস্থ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রিন ভয়েসের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে গাছ নিধন, জলাধার দখল ও পরিবেশবিধ্বংসী উন্নয়ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেন।
বিজ্ঞাপন
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, উন্নয়নের নামে গাছ কাটা এখন যেন রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত হয়েছে। পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নে কোনো রাজনৈতিক দল বা মতের বিভেদ নয়, সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিবেশবান্ধব আন্দোলনে নামতে হবে।
গ্রিন ভয়েসের সমন্বয়ক আলমগীর কবির বলেন, অক্সিজেন ছাড়া জীবন অসম্ভব। অথচ এই অক্সিজেন সরবরাহকারী গাছগুলোই উন্নয়নের নামে কেটে ফেলা হচ্ছে। ব্যক্তিস্বার্থ, ধর্মীয় উস্কানি বা ভ্রান্ত ধারণায় যারা পরিবেশ ধ্বংস করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
উল্লেখ্য, যে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সবুজ বৃক্ষরাজি আমাদের বেঁচে থাকার অপরিহার্য উপাদান। অথচ ২০২১ সালের ৭ মে রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কেটে স্থাপনা নির্মাণ কাজের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরিবেশবাদী, নাগরিক, প্রকৃতিপ্রেমী ও সচেতন মানুষের দৃষ্ট প্রতিবাদে উদ্যানমুখী প্রকল্পের গাছ কাটা সিদ্ধান্ত বন্ধ হয়ে যায়। গাছ কাটা বন্ধ হয় এবং সংরক্ষণের দিকে অগ্রসর হয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন ভয়েসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির ওই দিনটিকে ‘প্রাকৃতিক অক্সিজেন রক্ষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেন। এরপর থেকে প্রতি বছর ৭ মে প্রাকৃতিক অক্সিজেন রক্ষা দিবস পালন হয়ে আসছে। যার মূল আহ্বান ‘প্রকৃতি ধ্বংস করো না, প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে উন্নয়ন হোক।’
সমাবেশে ঢাকা শহরের অন্তত ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশ শেষে একটি সচেতনতামূলক র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে যে দাবিগুলো তুলে ধরা হয়-
১. সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক ও ওসমানী উদ্যানের মতো ঐতিহাসিক এবং পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সবুজ অঞ্চলগুলোকে কোনোভাবেই উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। এজন্য একটি স্থায়ী ও কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন অবকাঠামো নির্মাণের আগে অবশ্যই ‘পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (EIA)’ বাধ্যতামূলক করতে হবে, এবং সব প্রকল্পে গাছ রক্ষা ও পুরোনো গাছের পুনরায় অবস্থানে ফেরানোর নকশা থাকতে হবে।
৩. রাস্তার পাশে এবং পরিত্যক্ত খালি জায়গায় গাছ লাগানো এবং সংরক্ষণের মাধ্যমে, সেসব স্থানে গাছ পুনরায় লাগানোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা সংরক্ষণের নীতিমালা প্রয়োগ করতে হবে।
৪. শব্দ ও বায়ু দূষণ রোধে শহরের চারপাশে সবুজ বাফার জোন গঠন করা জরুরি, বিশেষ করে শিল্প এলাকা, মেট্রোরেল, এবং প্রধান সড়কের পাশে শব্দ-শোষণকারী গাছ লাগিয়ে এই জোন তৈরি করতে হবে।
৫. খাল, পুকুর ও জলাধার পুনরুদ্ধার করে ঢাকা শহরে ‘সবুজ-নীল করিডোর’ গঠন করতে হবে, যাতে প্রাকৃতিকভাবে বায়ু বিশুদ্ধ রাখা এবং তাপমাত্রা কমানো সম্ভব হয়।
এসএস