সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘যশোর শহর ও শহরতলীতে ভরাট হয়ে গেছে একশ’র বেশি পুকুর-দীঘি’

জেলা প্রতিনিধি, যশোর
প্রকাশিত: ০৮ মে ২০২৫, ০৮:৩১ পিএম

শেয়ার করুন:

‘যশোর শহর ও শহরতলীতে ভরাট হয়ে গেছে একশ’র বেশি পুকুর-দীঘি’

‘গত কয়েক দশকে শুধুমাত্র যশোর শহর ও শহরতলীতে ভরাট হয়ে গেছে একশ’র বেশি পুকুর-দীঘি। আর যশোর পৌরসভার মধ্যে একডজন পুকুরের ওপর শোভা পাচ্ছে অনেক বহুতল ভবন। যশোরে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন উপেক্ষা করে একের পর এক পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। বিলের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে আবাসন প্রকল্প করা হচ্ছে।’

বৃহস্পতিবার (৮ মে) বেলা ১১টায় জনউদ্যোগ যশোরের উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘প্রাকৃতিক জলাধার ও কৃষিজমি সুরক্ষার দাবিতে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জনউদ্যোগের নেতৃবৃন্দ এসব তথ্য জানান। শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোড আইইডি কেন্দ্র কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জনউদ্যোগ যশোরের আহ্বায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমদ। সূচনা বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা ও জনউদ্যোগ সদস্য মাহবুবুর রহমান মজনু।


বিজ্ঞাপন


সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ জানান, বিভিন্ন সংস্থার তথ্যানুযায়ী, যশোর পৌরসভা এলাকায় পৌরসভার নামীয়, জেলা প্রশাসকের নামীয় ও বেসরকারি মিলে ৩২০টি জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে পৌরসভার ৬টি, জেলা প্রশাসকের ৪০টি এবং বেসরকারি ২৭৪টি পুকুর রয়েছে। ১০/১২ বছর আগে পুকুরের সংখ্যা আরও বেশি ছিল।

যশোর পৌরসভা এলাকায় শহরের ঐতিহ্যবাহী প্রায় সব পুকুর তার অস্তিত্ব হারিয়েছে। বিগত এক থেকে দেড়যুগে ভরাট হয়ে গেছে যশোর প্রধান ডাকঘরের সামনের পুকুর, যশোর রেলগেট চোরমারা দীঘি, নিরালা সিনেমা হলের পাশের পুকুর, বেজপাড়ার শ্রীধর পুকুর, আরবপুরের বড় পুকুর, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন সড়কের ইসমাইল ডাক্তারের বাড়ির পেছনের বড় দীঘি, ইসলামিয়া স্কুলের পুকুর, পুরাতনকসবা আবু তালেব সড়কের পুকুর, ডাক্তার মোজাম্মেল হোসেনের পুকুর, মন্টুদের পুকুর, নিরিবিলি পুকুর, রাজুদের পুকুর, মুন্সীবাড়ি পুকুর, আয়নাল খাঁর পুকুর, জব্বার বিহারীর পুকুর, গোহাটা পুকুর, রাজবাড়ী বিদ্যুৎ অফিসের সামনের পুকুর, ষষ্ঠিতলাপাড়ায় ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনের পুকুর, খালধার সড়কের পুকুর, এসপি অফিসের পুকুর, পুলিশ লাইনের পুকুর। শহরের ভেতরে থাকা আরও কিছু পুকুর এখন সমতল ভূমি। প্লট আকারে বিক্রিও হচ্ছে। সম্প্রতি বারান্দিপাড়া এলাকার একটি পুকুর এবং চাঁচড়া এলাকার একটি পুকুরও ভরাট করা হচ্ছে। শুধু জলাধার নয়, যশোরের হরিণার বিলসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমি ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে একের পর কৃষি জমি গ্রাস করা হলেও এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই।

নেতৃবৃন্দ জানান, হরিণার বিল মূলত ধান আবাদী এলাকা। এটি যশোরের শস্য ভান্ডার। এই বিলের আয়তন ৫০৭ হেক্টর। আবাদি জমি প্রায় ৪৮৫ হেক্টর। সদরের চাঁচড়া ও রামনগর ইউনিয়ন জুড়ে বিলটির অবস্থান। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় বর্ষা মৌসুমে বিল জুড়ে থৈ থৈ করে পানি। এসময় বিলে দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় প্রচুর ও ধানের আবাদও হয়। ধান ছাড়াও বিলের জমিতে বিভিন্ন ধরনের তরকারি ও ফলের আবাদ হয়। বিলে যখন পানি থাকে স্থানীয় মানুষজন মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এসব ছাড়াও যশোর শহরের বেশিরভাগ এলাকার পানি নিষ্কাশন হয় এই বিলটিতে।
হরিণার বিলের ভাতুড়িয়া সড়ক, মাহিদিয়া সড়কের বিভিন্ন এলাকায় ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসন প্রকল্প। বিদ্যমান আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠানটি প্রকাশ্যে বিল উজাড় করছে। বিল ভরাট, কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ ভরাটের কাজে মাটি বহনের সময় সড়ক বিনষ্ট করলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রকৃতির বিনাশ ছাড়াও প্রতিটি পদে পদে আইন ভাঙছে প্রতিষ্ঠানটি।
আইন ভেঙে বিল ভরাট করে অনেকে আবসন প্রকল্প গড়ে তোলায় বিলটি দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। আবসন গড়ে তোলায় বিলের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে বছরের বেশিরভাগ সময় বিলটি জলাবদ্ধ থাকছে। এতে যশোর শহরের পানি নিষ্কাশন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পৌর এলাকা বর্ষাকালে তলিয়ে যাচ্ছে। এমনটি হলে প্রকৃতির বিনাশ ছাড়াও পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যশোর শহরসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে।

জনউদ্যোগ নেতৃবৃন্দ এই আত্মঘাতী পরিবেশ বিনাশী পুকুর ভরাট ও আবাসন প্রকল্পের কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। এই অপতৎপরতা বন্ধে এখনই দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে যশোরবাসীকে অন্তহীন দুর্ভোগে পড়তে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জনউদ্যোগের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক সুরাইয়া শরীফ, ধনঞ্জয় বিশ্বাস, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিলন, আইইডি যশোর কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক বীথিকা সরকার, জনউদ্যোগের সদস্য সচিব কিশোর কুমার কাজল প্রমুখ।

প্রতিনিধি/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর