সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫, ঢাকা

হাতিয়ায় ফ্যাসিস্ট তকমা দিয়ে সরকারি কর্মচারীকে হয়রানির অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি, ছায়েদ আহামেদ, হাতিয়া (নোয়াখালী)
প্রকাশিত: ০৮ মে ২০২৫, ০৭:৫৭ পিএম

শেয়ার করুন:

হাতিয়ায় ফ্যাসিস্ট তকমা দিয়ে সরকারি কর্মচারীকে হয়রানির অভিযোগ

নোয়াখালীর হাতিয়ায় কয়েকবছর আগে মৃত্যুবরণ করা ও চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়াসহ অজ্ঞাত শিক্ষকদের আবেদনকারী এবং স্বাক্ষী সাজিয়ে নিরীহ সরকারি কর্মচারীকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ রাজের হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। 

আদালতে খালাসপ্রাপ্ত বিষয়সহ মীমাংসিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মিথ্যা সৃজনকৃত লিখিত দরখাস্ত দিয়ে তদন্তের আয়োজন করেছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ইউআরসি'র ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মোহাম্মদ ছাকায়েত হোসেন। 


বিজ্ঞাপন


এমনি একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (চদা:)(প্রশিক্ষণ) আব্দুল আলীম সোমবার (৫ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাতিয়া উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে তদন্ত কাজ চালান। 

হাতিয়া ইউআরসি'র ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ভুক্তভোগী ছাকায়েত হোসেন জানান, তাকে যেকোনো মূল্যে হাতিয়া থেকে বদলিসহ মিথ্যা ফ্যাসিস্ট তকমা দিয়ে ফাঁসানোর জন্য দক্ষিণ রাজের হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মফিজ উদ্দিন ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট মিলে অধিদপ্তরে মিথ্যা সৃজনকৃত লিখিত দরখাস্ত দেন। এ চক্রটি ২০১৪ সালে ডিপার্টমেন্টাল ও আদালতের নিষ্পত্তিকৃত বিষয়ে ২০১৭ সালে মৃত্যুবরণ করা মাহবুবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওহাব, তার ছোট বোন সেলিনা আকতার ও প্রধান শিক্ষক নবীর উদ্দিনকে বাদী করে অভিযোগ দেন।

এসব অভিযোগ সংক্রান্তে সিন্ডিকেট সদস্য সহকারী শিক্ষক মফিজ উদ্দিন ছাড়া তদন্তের নোটিশে উল্লেখিত কোনো অভিযোগকারী প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেননি তাদের অভিযোগ দেওয়ার কথা।

একইভাবে হাতিয়া উপজেলার সাবেক সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান এবং কয়েকবছর আগে চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়া মিধ্যাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জামসেদ উদ্দিনসহ আবেদনে উল্লেখিত কোনো স্বাক্ষীই স্বীকার করেননি অভিযোগে তাদের স্বাক্ষর করার বিষয়ে। 


বিজ্ঞাপন


অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর গণিত অলিম্পিয়াড প্রশিক্ষণে শিক্ষক মফিজ উদ্দিন তাকে মারধর ও প্রশিক্ষণার্থীদের থেকে ৫০০, এক হাজার টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ করেন ছাকায়েতের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ সম্পর্কে ওই ব্যাচের প্রশিক্ষক এ.এইচ.এম আলাউদ্দিন, প্রশিক্ষক অরবিন্দ সাহা ও ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর মুহম্মদ আকবর হোসেন জানান, মফিজ উদ্দিনকে মারধর ও চাঁদা দাবির অভিযোগটি মিথ্যা ও বানোয়াট। তারা আরও জানান, অভিযোগের তিন দিন পর মাইজদী পিটিআই, নোয়াখালীর দুইজন সহকারী সুপারিন্টেন্ডেন্ট তদন্তে এসে উপস্থিত সকলের কাছ থেকে লিখিত ও মৌখিক সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। 
এদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগের আবেদক মফিজ উদ্দিনের সাথে প্রতিবেদকের মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি ২০২২ সালে আবেদন করেছেন বলে উল্লেখ করেন। অথচ চলতি বছরের ২০ মার্চ শিক্ষক মফিজ উদ্দিন নতুন কিছু মিথ্যা তথ্য যুক্ত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবারও অভিযোগ দেন। সংযুক্তি হিসেবে যুক্ত করেন ২০১৪ ও ২০২২ সালে মীমাংসিত বিষয়ের বাদী ও স্বাক্ষীদের পূর্বকার স্বাক্ষর। 

তবুও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (চদা:)(প্রশিক্ষণ) আব্দুল আলীম স্বাক্ষরিত নোটিশ দেওয়া হয় ছাকায়েতকে। নোটিশে তদন্তের জন্য গত ২৮ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টায় হাজির থাকতে বলে পুনরায় আরেকটি নোটিশ দেওয়া হয় ৫ মে একই সময়ে হাতিয়া রিসোর্সে উপস্থিত থাকার জন্য। 

জানা যায়, তদন্ত সংশ্লিষ্ট নয় এমন শিক্ষকদের মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ৫ মে শ্রেণি কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে অফিসে আসতে বাধ্য করেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দু জব্বার। অথচ গণিত অলিম্পিয়াড প্রশিক্ষণের ওই দুই প্রশিক্ষককে ডাকা হয়নি এ তদন্তে। 

সহকারী শিক্ষক মফিজ উদ্দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিতিতে অনিয়ম ও অসদাচরণের দায়ে তার স্কুলের (দক্ষিণ রাজের হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) প্রধান শিক্ষক কাজল রাণী পাল ২০২৪ সালের ৯ জুন হাতিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দেন। এরই প্রেক্ষিতে একই মাসের ১২ তারিখে দুইজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্তে যান। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ২০২৪ সালের ৬জুন- সউশিঅ/নোয়া/হাতিয়া/২০২৪/০৯ স্মারকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু শিক্ষা কর্মকর্তা এর কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে অনিয়মে সহযোগিতা করে যান। 

এর আগে শিক্ষক মফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর হাতিয়া কণ্ঠে পত্রিকায় ‘হাতিয়ায় শিক্ষক মফিজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ’ শিরোনাম এবং একই বছরের ১৮ নভেম্বর দৈনিক নয়া পৃথিবী পত্রিকায় ‘হাতিয়ায় শিক্ষক মফিজের বিরুদ্ধে ছাত্রীদেরকে যৌন হয়রানি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। 

এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (চদা:)(প্রশিক্ষণ) আব্দুল আলীমকে তদন্তের দিন বিকেলে মোবাইল ফোনে বার বার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর