সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘নতুন বাংলাদেশে লালন ফকির ও হাসন রাজার অনুষ্ঠান জাতীয়ভাবে উদযাপন করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের সংস্কৃতির একটি গভীর শিকড় রয়েছে, যা গান, কবিতা এবং দর্শনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। লালন ফকির ও হাসন রাজা, আমাদের ঐতিহ্যের অন্যতম দার্শনিক ও গানের মানুষ, যাদের ভাবনা এবং দর্শন বর্তমান প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিজ্ঞাপন
ফারুকী কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৮ মে) আয়োজিত তিনদিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা প্রদান করছিলেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহ সফর ও তার সাথে এখানকার মানুষের যোগাযোগের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু তার সাহিত্য ও ভাবনা, বরং এই অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে একটি গভীর সম্পর্ক স্থাপন করেছে।
ফারুকী বলেন, ‘আমাদের দেশের সংস্কৃতির মূল অভিব্যক্তি হলো গান, যা কেবল আনন্দ বা দুঃখের প্রকাশ নয়, বরং এটি একটি দর্শন, কবিতা ও ভাবনার গভীরতা প্রকাশ করে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘লালন ও হাসন রাজা আমাদের ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এবং তাদের ভাবনা ও গান শুধু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নয়, বরং আমাদের অন্তরাত্মার এক অমূল্য সম্পদ।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেমন আমরা রবীন্দ্র জয়ন্তী এবং নজরুল জয়ন্তী পালন করি, তেমনি লালন ফকির ও হাসন রাজার অনুষ্ঠানও জাতীয়ভাবে উদযাপন করা উচিত। এইভাবে আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সম্মান ও মূল্যায়ন করতে পারব।’
এছাড়া, এই তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন রবীন্দ্র শিল্পীরা রবীন্দ্র সংগীত, কবিতা আবৃত্তি, দলীয় নৃত্য ও রবীন্দ্রনাথের লেখা নাটক পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানটি শুরু হয় জাতীয় ও রবীন্দ্র সংগীত দিয়ে, যা কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা পরিবেশন করেন।
বিজ্ঞাপন
এই উৎসবে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য অতিথির মধ্যে ছিলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফরহাদ সিদ্দিক, ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক মনসুর মুসা, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান সহ আরও অনেকে।
এছাড়াও, কুঠিবাড়ি চত্ত্বরে বসেছে বিশাল গ্রামীণ মেলা, যেখানে বিভিন্ন দোকানীরা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। তিনদিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি হাজারো দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, কুঠিবাড়িকে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক, যাতে এই ঐতিহাসিক স্থানটি আরও বেশি পরিচিত ও সবার জন্য উন্মুক্ত হয়।
এদিকে, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে, যা এলাকার সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।
প্রতিনিধি/একেবি