সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

চাকরির পেছনে না ঘুরে মাঠা বিক্রি, অর্ঘ্যের মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকা

মো.লিটন হোসেন লিমন, নাটোর
প্রকাশিত: ০৫ মে ২০২৫, ০২:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

Successes

দুই বছর চাকরির পেছনে ঘুরে ঘুরে চাকরি না পেয়ে সামান্য কিছু পুঁজি নিয়ে মাঠা বিক্রি শুরু করেন বিএসসি পড়ুয়া শিক্ষার্থী অর্ঘ্য সরকার। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এখন মাঠা বিক্রি করে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি।

নাটোর সদর উপজেলার বড়হরিশপুর ইউনিয়নের ঘোষপাড়া এলাকার বিপ্লব সরকারের ছেলে অর্ঘ্য সরকার। তিনি রাজশাহী সাইন্স টেকনোলজি ইনস্টিটিউট থেকে বিএসসিতে পড়াশোনা করছেন।


বিজ্ঞাপন


thumbnail_IMG_20250505_074015

অর্ঘ্য সরকার ২০১৯ সালে এসএসসি পাশ করে ডিপ্লোমায় ভর্তি হন। এরপর ৪ বছর ডিপ্লোমা শেষ করে চাকরির জন্য ২ বছর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘুরে কোনো সফলতা মেলেনি। বাবা বিপ্লব সরকার মিষ্টির দোকানে শ্রমিকের কাজ করেন। একমাত্র বাবার আয়ে ছেলের পড়াশোনার খরচ ও সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তাই নিজের পড়াশোনার খরচ আর সংসারের হাল ধরতে অর্ঘ্য শুরু করেন মাঠা বিক্রি। দোকানের নাম দেন অপর্ণা ডেইরি ঠান্ডা মাঠা। শহরের কানাইখালী পুরাতন বাসষ্ট্যান্ডে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন মাঠা বিক্রি করছেন তিনি। দুধ, চিনি, লবন আর আইস দিয়ে সুস্বাদু এ মাঠা বানিয়ে বেশ পরিচিতও পেয়েছেন। তার এ কাজে বন্ধু শুভ সহযোগিতা করেন। প্রতি গ্লাস মাঠা ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় মণ দুধের মাঠা বিক্রি হয়।

thumbnail_IMG_20250505_074041

হালসা থেকে মাঠা খেতে আসা রাকিব ইসলাম বলেন, কালকে এ দোকান থেকে দুই গ্লাস মাঠা খেয়েছি। খাবার পর পুরো শরীর প্রশান্তি লাগে। খেতে অনেক সুস্বাদু। তাই আজ আবার এসেছি মাঠা খেতে।


বিজ্ঞাপন


জয়দেব বলেন, প্রতিদিনই আমি অর্ঘ্য দাদার দোকানে মাঠা খাই। তার মাঠার স্বাদ অন্য রকম। যা অন্য দোকানে পাই না। এটা খেলে পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। তার মাছা ফ্রেস ও অনেক দারুন করে তৈরি করেন। সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে খেতে হয়।

thumbnail_IMG_20250505_074108

কলেজ ছাত্র পারভেজ বলেন, প্রচণ্ড গরমে একটু স্বস্তি পেতে সবাই ঠান্ডা খেতে চায়। এক গ্লাস মাঠা খেলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। অনেক ভালো লাগে। সন্ধ্যায় প্রায় চলে আসি মাঠা খেতে। তবে দামটা ২০ টাকা গ্লাস দাম নির্ধারণ করলে আমরা প্রতিদিনই খেতে আসতে পারি।

রাহিদ বলেন, রাতে প্রতিদিন এখানে মাঠা খেতে আসি এবং বাড়িতে বোতল ভরে  নিয়ে যাই। গরমে অনেক উপকার স্বাস্থ্যের জন্য। প্রতি গ্লাস ৩০ টাকা করে নেয়। খাবার সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

মিথিলা নামে নারী ক্রেতা বলেন, স্বামী সন্তানের সঙ্গে মেলায় ঘুরতে এসেছি। প্রচণ্ড গরমে প্রশান্তি পেতে মাঠা খেতে এলাম। খেতে অনেক মজা। গরমের মধ্য পুরো শরীর শীতল হয়ে গেছে। যেহেতু দুধ, চিনি আর লবন দিয়ে তৈরি স্বাস্থ্যের জন্যও অনেকটা ভালো।

thumbnail_IMG_20250505_074130

রাতুল নামে কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, এখানকার মাঠাটা খুব ফ্রেস। খেতে ভালো তাই বন্ধুদের সঙ্গে মাঠা খেতে চলে আসি।

সপ্তাহে ৩/৪ দিন মাঠা খেতে আসি। বাড়িতে বাবা, মার জন্যও নিয়ে যাই। বাড়িতে সবাই খুব পচ্ছন্দ করে এ মাঠা।

মাঠা বিক্রেতা অর্ঘ্য সরকার বলেন, চাকরির জন্য ২ বছর ঘুরেছি কিন্তু কোথাও চাকরি হয়নি। নিজের পড়াশোনার খরচ মেটাতে অবশেষে মাঠার ব্যবসা শুরু করি। যেহেতু আমাদের এলাকায় প্রায় সব বাড়িতে গরু পালন হয়। এবং দুধও প্রচুর সরবারহ থাকে। সেখান থেকে দুধ ক্রয় করি। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মাঠা বিক্রি হয়। প্রতিদিন এক থেকে দেড় মণ দুধের মাঠা তৈরি করি। সব খবর বাদে মাসে ৪০/৫০ হাজার টাকা আমার আয়।

আরও পড়ুন

ধানখেতে ন্যানো ইউরিয়া ব্যবহারে আশাতীত ফলাফল, কম খরচে কৃষকের আগ্রহ

তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যায় ক্রেতাদের চাপ এত বেড়ে যায়, একা আমাকে হিমশিম খেতে হয়। তাই আমার কাজের সহযোগিতা করার জন্য বন্ধুকে রেখেছি। এখান থেকে সেও একটা আয় করছে। আমার বানানো মাঠা খেতে অনেক দূর থেকে ক্রেতারা আসেন। সামনে স্থায়ী একটি দোকান করার ইচ্ছা রয়েছে। সেখানে সুন্দর পরিবেশে ক্রেতারা বসে মাঠা খেতে পারবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর