রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রী নির্যাতন ও পরীক্ষার ফলাফল ম্যানিপুলেট করার অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন। তবে সাত মাসেও জমা হয়নি প্রতিবেদন। এমনকি সাত মাসে মাত্র একটি মিটিং করেন তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির কনভেনরকে বারবার তাগিদ দিয়েও কোনো সাড়া না পাওয়ার অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেছেন কমিটির সদস্য আইন বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদুল ইসলাম।
গতকাল (৪ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পদত্যাগপত্র দেন অধ্যাপক মোর্শেদুল ইসলাম।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, অধ্যাপক মামুনের বিরুদ্ধে বিভাগের সেশনজট, অর্থ কেলেঙ্কারি ও যৌন হয়রানির মতো নানা অভিযোগ করেন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ড. মামুনকে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয় ও তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন। চার সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদকে। সদস্য ছিলেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ. এফ. এম. মাসুদ আখতার, লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক শাফিউল ইসলাম এবং আইন বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদুল ইসলাম।
পদত্যাগপত্রে অধ্যাপক মোর্শেদুল ইসলাম জানান, ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রী নির্যাতন ও পরীক্ষার ফলাফল ম্যানিপুলেট করার মাধ্যমে ভালো ছাত্র-ছাত্রীদের খারাপ ফলাফল প্রদানের অভিযোগ তদন্তের জন্য প্রফেসর ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদকে কনভেনর করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আমি উক্ত কমিটির একজন সদস্য। ছয় মাস আগে কমিটি গঠিত হলেও কনভেনর এ যাবৎ একটিমাত্র মিটিং ডেকেছেন। কনভেনরকে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও তিনি তদন্তের কাজ অগ্রসরে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। কনভেনরের আচরণে মনে হচ্ছে তিনি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে আগ্রহী নন।
তিনি আরও জানান, এমতাবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদের নির্যাতনকারী শিক্ষকের নিরাপত্তা বিধানকারী কমিটির কনভেনরের সঙ্গে আমি কাজ করলে ছাত্র-ছাত্রীদের নির্যাতনকারী ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে আমার কোনো পার্থক্য থাকবে না। তাই আমি ন্যায়বিচারের স্বার্থে ও স্বাধীন বাংলাদেশে অন্যায়ের অ্যাকমপ্লাইচ (Accomplice) শিক্ষক হওয়ার দায় এড়ানোর জন্য তদন্ত কমিটি থেকে পদত্যাগ করলাম। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদুল ইসলাম বলেন, আমি আমার পদত্যাগপত্র ভিসি স্যারের কাছে জমা দিয়েছি। আমার মনে হয় এটি পাবলিকলি প্রচার হওয়া উচিত। ছাত্রদের জীবনের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। অন্তত আমরা এই ছাত্রদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে পারি সে বিষয়ে আমাদের তৎপর হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, যেই শিক্ষক ২৪-এর আন্দোলনে না যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখাতেন। তার তদন্ত করতে এত গড়িমসি কেন? আমার মনে হয় ওই শিক্ষকদের সঙ্গে তলে তলে লিয়াজোঁ চলছে। তদন্ত কমিটির কোনো অগ্রগতি নেই। প্রায় ৭ মাস পার হলেও মিটিং হয়েছে মাত্র একটি। অথচ এর আগে আমি এক তদন্ত কমিটিতে ছিলাম ২ মাসের মধ্যে তদন্ত কমিটির কাজ শেষ হয়েছে রিপোর্টও দেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, আমার বলার কিছুই নেই। নিজেদের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা না করে সব সময়ই উনি ভাইরাল হতে চান। আমরা কাজ করছি। মিটিং করে কাজ ভাগ করে নিয়েছি। তবে কার্যক্রমটা আরও গতিশীল হতে হতো। তদন্ত কমিটির কাজ খুব দ্রুতই শেষ করতে পারব ইনশাল্লাহ।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
প্রতিনিধি/এসএস

