চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন অনুষদ আয়োজিত সপ্তম একে খান স্মারক আইন বক্তৃতা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতির পাশে বিতর্কিত শিক্ষক হাসান মুহাম্মদ রোমান শুভর উপস্থিতি ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ফ্যাসিবাদী আচরণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ ও ছাত্র দমনমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত এই শিক্ষককে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তীব্র সমালোচনা।
অনুষ্ঠানের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলেছেন—বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ আসনের একজন ব্যক্তির উপস্থিতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত এক শিক্ষক কীভাবে মঞ্চে জায়গা পেলেন।
বিজ্ঞাপন
আইন অনুষদের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ন্যায়বিচার ও আইনের আলোচনাভিত্তিক একটি আয়োজনে এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তির উপস্থিতি পুরো আয়োজনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
তাদের অভিযোগ, রোমান শুভ অতীতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন, প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি এবং ছাত্র সংগঠনের নির্যাতনে মদদ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ‘ছাত্র হত্যা সমর্থনের’ অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীরা তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামে।
পরদিন, শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবিতে লিখিতভাবে তার অপসারণ দাবি করে। একইসাথে তার বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন, মতাদর্শগত পক্ষপাত, ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ তোলে।
২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী জুবায়ের হোসেন সোহাগ জানান, ‘শিবির সন্দেহে রোমান শুভ আমাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন, ফোন চেক করেন এবং মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে মুচলেকা লিখিয়ে নেন। পরে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং আমাকে ‘দেশদ্রোহী’ হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়।’
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন—

চবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মো. রোমান রহমান ফেসবুকে লেখেন, ‘২০২২ সালে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপের ভিত্তিতে জুবায়েরকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে বহিষ্কারের উদ্যোগ নেন রোমান শুভ। অথচ এখন তাকেই বড় আয়োজনে দেখা যাচ্ছে। প্রশাসনের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ভালোভাবেই চলছে।’
আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মু. জাফর উল্লাহ তালুকদার বলেন, ‘তিনি অনুষ্ঠানে আসবেন কি না, সেটা আমার এখতিয়ার নয়। বিষয়টি প্রশাসনের।’
রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ‘তদন্ত কমিটির কাজ চলমান। প্রতিবেদন জমার সময়সীমা পার হয়ে গেলেও আরও সময় চাওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনও আসেনি।’
তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. মো. নেছারুল করিম বলেন, ‘তদন্ত এখনো শুরুই হয়নি। অভিযুক্তের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। প্রতিবেদন কবে জমা হবে, তা বলা যাচ্ছে না।’
প্রতিনিধি/একেবি

