মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রুয়া ইলেকশন স্থগিতের প্রভাব কি রাকসু নির্বাচনে পড়বে?

তানভীর খান তরুণ, রাবি
প্রকাশিত: ০২ মে ২০২৫, ০২:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

রুয়া ইলেকশন স্থগিতের প্রভাব কি রাকসু নির্বাচনে পড়বে?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (রুয়া) কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন নিয়ে ক্যাম্পাসে চলছে তুমুল আলোচনা।

বৃহস্পতিবার (১ মে) নির্বাহী কমিটির নির্বাচন আপাতত স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে রুয়া এডহক কমিটি। এমন ঘোষণায় গতকাল বিকেলে তীব্র ক্ষোভ নিয়ে রাবি উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে অবস্থান নেয় রাজশাহীস্থ সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। সেখানে যুক্ত হয় বর্তমান শিক্ষার্থীরাও। উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তালা। যদিও উপাচার্যের আশ্বাসে এক পর্যায়ে স্থগিত করা হয় কর্মসূচি।


বিজ্ঞাপন


এর আগে বিএনপিপন্থি অ্যালামনাইরা নির্বাচন বয়কটের পর থেকেই রুয়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্পষ্টতই দু’টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, জামায়াতপন্থি অ্যালামনাইরা সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ দিচ্ছেন। সামাজিক মাধ্যমেও বিএনপি ও জামায়াতপন্থি অ্যালামনাইরা পাল্টাপাল্টি পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন।

রুয়া নিয়ে এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন হবে কি না—সেটি নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

thumbnail_IMG_20250331_151311

গত ২৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) রোডম্যাপ অনুযায়ী, রাকসু নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল; কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া ১৩ এপ্রিল চূড়ান্ত বিধিমালা ও নির্বাচনী আচরণবিধি প্রকাশের তারিখ থাকলেও, এখনও তা প্রকাশিত হয়নি।


বিজ্ঞাপন


বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাত সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করলেও, এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠকে বসতে পারেনি তারা। এমন অবস্থায় জুন মাসের তৃতীয় অথবা চতুর্থ সপ্তাহে রাকসু নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ের কথা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হলেও—আদৌ তা বাস্তবায়ন করা যাবে কি না—সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (রুয়া) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন সময়মতো নিশ্চিতের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে জোহা চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন

রুয়া নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত, কালই অ্যাডহক কমিটি গঠন

এসময় রাবি'র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি রুয়াকে বানচাল করার অপচেষ্টা যারা করছে তারা রাকসুকে বানচাল করার অপচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে। রুয়া নিয়ে আমরা সাবেকদের থেকে বেশি ভাবছি। কারণ রুয়া হওয়ার সুশৃঙ্খলতার ওপর নির্ভর করছে আগামীতে রাকসু নির্বাচন কেমন হবে। এটার ওপরই নির্ভর করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কতটা গণতান্ত্রিক।

রাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহীর ভাষ্য, রাকসু আমাদের সবার অধিকার। দীর্ঘদিন রাকসু হতে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত। রুয়া সাবেক শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক একটি প্লাটফর্ম, তবুও একটি গোষ্ঠী কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে জীবন সদস্য করে, বহিরাগত নেতাদের নিয়ে পেশিশক্তির মহড়া দেখিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অথরিটি বাসভবন তালা মেরে, জিম্মি করে যে নজির তারা স্থাপন করল—এমতাবস্থায় রাবি ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা এই প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব না। হানাহানি, রক্তপাতের সূচনার বার্তা স্পষ্ট হয়েছে আজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা— সবাই আজ আতঙ্কিত।

তবে শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, রোডম্যাপ অনুযায়ী খসড়া ভোটার তালিকা ও আচরণবিধি প্রকাশ করার কথা থাকলেও নির্ধারিত তারিখে তা প্রকাশ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইলেকশন কমিশন গঠন হলেও এখনও পর্যন্ত অফিশিয়াল কোনো মিটিং হয়নি তাদের। এদিকে, একটি পক্ষ আবার জাতীয় নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো নির্বাচনেই আগ্রহী নয়। যার ফলশ্রুতিতে রুয়া ইলেকশন স্থগিত হয়ে গেল। সেই জায়গা থেকে রাকসু ইলেকশন যথাসময়ে হবে কি না—সেই আশঙ্কা থেকেই যায়। তারপরেও মাননীয় উপাচার্য স্যার আজকেও বলেছেন ইলেকশন যথাসময়ে হবে৷ আমরাও আশাবাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া রাকসু ইলেকশন ঘোষিত রোডম্যাপের মধ্যেই হবে।

আরও পড়ুন

রুয়া নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে রাবি উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও

এদিকে রাকসু নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেও এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি তাদের কাছে পৌঁছেনি বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন এ কমিশনের প্রধান, যেখানে কমিশনার হিসেবে আছেন প্রফেসর মো. নিজাম উদ্দীন (সিন্ডিকেট সদস্য), প্রফেসর এফ নজরুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক), প্রফেসর মোহা. এনামুল হক (পরিচালক, মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র), প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান (আইন বিভাগ), প্রফেসর মো. আমিনুল হক (পরিসংখ্যান বিভাগ), প্রফেসর মোস্তফা কামাল আকন্দ (নৃবিজ্ঞান বিভাগ)।

ক্যাম্পাসের বর্তমান অবস্থা সাপেক্ষে জুন মাসে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে রাকসু ইসি প্রফেসর মোস্তফা কামাল আকন্দ জানান, কমিশন গঠিত হলেও এখনও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। এরই মধ্যে রুয়া ইলেকশনসহ বেশ কিছু বিষয়ে আমরা ক্যাম্পাসে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি লক্ষ্য করছি। মনে হচ্ছে স্থিতিশীলতা নানাভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন আগে বসুক, এরপরে বলা যাবে ঠিক কবে নাগাদ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হবে।

রাকসু নির্বাচন আয়োজন প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব জানান, আমি জানি এই নির্বাচন আয়োজন করাটা আমার জন্য অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং; কিন্তু আমি এটা করবই। অল্প সময়ের মধ্যে খসড়া ভোটার তালিকা এবং নির্বাচনী আচরণবিধি প্রকাশিত হবে। নির্বাচন পেছানোর সুযোগ নেই।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সালে সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন শাখা ছাত্রদলের রুহুল কবির রিজভী এবং জিএস নির্বাচিত হন জাসদ ছাত্রলীগের রুহুল কুদ্দুস বাবু।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর