খুলনায় মে দিবসে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের বিশাল শ্রমিক সমাবেশ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ মে) সকালে নগরীর খালিশপুর বিআইডিসি রোডস্থ খালিশপুর জুট মিলস্ চত্বরে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
বিজ্ঞাপন
খুলনা মহানগরী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে বিশাল শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন - মাস্টার শফিকুল আলম।
মহানগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মু. আজিজুল ইসলাম ফারাজীর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন - বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগর আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন - জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, ইসলামী ছাত্রশিবিরের মহানগরী সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন এবং মহানগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি খাঁন গোলাম রসুল।
এ সময় খালিশপুর জুট মিলস্, ক্রিসেন্ট জুট মিলস্, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলস্, দৌলতপুর জুট মিলস্ ও হার্ডবোর্ড মিলসহ বন্ধকৃত পাটকল এবং সব মিল-কলকারখানা চালু আর শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক শ্রমিক নেতা মাস্টার শফিকুল আলম বলেছেন, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বিশ্বের মেহনতি শ্রমিকদের কাছে প্রেরণার দিন। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা বিশ্রাম ও আট ঘণ্টা বিনোদনের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছিল। সে আন্দোলনে সরকারের ইশারায় পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি ও হামলা চালিয়ে ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড ঘটায়। পরবর্তীতে শ্রমিক নেতাদের প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। ইতিহাস সাক্ষী তাদের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। তৎকালীন সরকারের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশের গুলির ওপর শ্রমিকরা বিজয়ের সৌধ নির্মাণ করেছে। শ্রমজীবী মানুষরা তাদের দাবি আদায়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলেছে। আত্মত্যাগের নজরানা পেশ করেছে। তবুও অন্যায় ও জুলুমের কাছে মাথানত করেনি। শ্রমজীবী মানুষের এই আত্মত্যাগকে আমাদের সম্মান করতে হবে। বছরে এক দিন শ্রমিক দিবসকে সীমাবদ্ধ করে রাখা যাবে না। শ্রমিক দিবসের তাৎপর্যকে ধারণ করতে হবে। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সব জুলুম-নির্যাতনের অবসান করতে হবে। রাজপথে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। সব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কণ্ঠকে উচ্চকিত করতে হবে। তিনি শ্রমজীবী মানুষদেরকে ইসলামী আন্দোলনের পতাকাতলে এসে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে ও ইসলামী শ্রমনীতিকে বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখার জন্য সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
মহানগরী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. সাইফুজ্জামানের পরিচালনায় শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন - মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম, ইস্টার্ন জুল মিল মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক খান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগরী সহ-সভাপতি এস এম মাহফুজুর রহমান ও কাজী মাহফুজুর রহমান, খালিশপুর থানা সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। কুরআন তেলাওয়াত করেন খুলনা হার্ডবোর্ড মিলস জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আবুল ফাত্তাহ রম্মান।
বিজ্ঞাপন
এ সময় উপস্থিত ছিলেন - শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মো. আল ফিদা হোসেন ও মো. আজিজুর রহমান, খুলনা সদর থানা আমির এস এম হাফিজুর রহমান, সোনাডাঙ্গা থানা আমির জি এম শহিদুল ইসলাম, খালিশপুর থানা আমির মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন, দৌলতপুর থানা আমির মুশাররফ আনাসারী, আড়ংঘাটা থানা আমির মুনাওয়ার হুসাইন আনসারী, দৌলতপুর জুট প্রেস অ্যান্ড বেলিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল খালেক হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিঠু, মহানগরী সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, দফতর সম্পাদক, আল হাফিজ সোহাগ, বিদ্যুৎ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল কবীর, হরিণটানা থানা সভাপতি হেলাল উদ্দিন, সোনাডাঙ্গা থানা সভাপতি খান আব্দুল ওহেদ, আড়ংঘাটা থানা সভাপতি শাহিনুর রহমান, দৌলতপুর থানা সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম, বিআইরেল-এর সভাপতি সাইদুল ইসলাম, সোনাডাঙ্গা পরিবহন শাখার সভাপতি কামাল হোসেন প্রমুখ।
প্রধান বক্তা অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, দেশের শ্রমজীবী মানুষকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্ভব নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে যারা উন্নয়নের কারিগরি সেই শ্রমিক বা মেহনতি মানুষদের দাবি বাস্তবায়নে কেউ এগিয়ে আসে না। তিনি শ্রমিক সমাবেশ থেকে অবিলম্বে ইসলামী শ্রমনীতি চালু, বন্ধককৃত পাটকলসহ সব বন্ধ কলকারখানা চালু, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম শ্রমজীবী মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা, জাতীয়ভাবে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধসহ শ্রমিকদের ওপর হয়রানি বন্ধ, শ্রমজীবী মানুষের জন্য বাসস্থান, রেশনিং, চিকিৎসা ও তাদের সন্তানদের বিনামূল্যে শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা, বেতন-ভাতাসহ নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করা এবং সব ধরনের শিল্প-কলকারখানার শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করার দাবি জানান।
প্রতিনিধি/ এমইউ

