পিরোজপুরের নাজিরপুরে দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বকনা বাছুর (গরু) বিতরণে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।
ঠিকাদারের পক্ষে প্রতিনিধি দাবি করা মো. আসাদ প্রথমে বলেন, সান সাইন গ্রুপ প্রধান ঠিকাদার আবার বলেন ফোকাস লি. ঠিকাদার সর্বশেষ সাংবাদিকরা আবারও জানতে চাইলে তিনি মেসার্স শ্যাওলা হাস মুরগি খামার অ্যান্ড সাপ্লাই সেন্টার নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম সম্বলিত একটি কাগজ প্রদান করেন।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে গরু বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফজলে রাব্বি, মৎস্য কর্মকর্তা মো. সারোয়ার হোসেন, ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. আল মুক্তাদির রাব্বি।
![]()
সকাল ৯টায় গরু বিতরণের কথা থাকলেও সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেলে গরু বিতরণ সাময়িক বন্ধ করে দেন ঠিকাদার ও উপজেলা প্রশাসন। সাংবাদিকরা এই গরু বিতরণ দ্রুত বন্ধ করার কারণ জানতে চাইলে ঠিকাদার প্রতিনিধি মো. আসাদ বলেন, ভাই গরুর ওজন নাকি কম এজন্য আমরা সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছি।
জানা যায়, উপজেলায় ৭০ জন দারিদ্র মৎস্যজীবীদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরণ করা হবে। নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি গরুর ওজন হবে ৭০ কেজি। বিতরণকালে দেখা যায় ৭০টি গরুর মধ্যে ১টি গরুও সঠিক নিয়মের মধ্যে নেই। প্রকারভেদে গরুর ওজন হবে ৪০ থেকে ৪৫ কেজি। উপকারভোগীদের অভিযোগ সঠিকভাবে তারা গরু পায়নি।
বিজ্ঞাপন
এ নিয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সারোয়ার হোসেনর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, অনিয়ম থাকলে ঠিকাদারদের, তবে প্রত্যেক গরুর ওজন হতে হবে ৭০ কেজি। গরু বিতরণকালে তিনি মৎস্যজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা গরু নিলে নিবেন না নিলে প্রকল্প ফেরত চলে যাবে।
এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফজলে রাব্বির কাছে এ বিষয়ে জানতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন এবং কোনো সাক্ষাৎকার প্রদান করেননি। তবে বিতরণকালে ইউএনও মৎস্যজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা গরু নিলে নেন না নিলে প্রকল্প ফেরত চলে যাবে, এই বলে বিকেল ৪টার দিকে তড়িঘড়ি করে একটি গরু বিতরণ করে সটকে পড়েন ইউএনও ও ঠিকাদার প্রতিনিধি আসাদ।
পরবর্তীতে নাজিরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সারোয়ার হোসেন ও তার স্ট্যাফদের নিয়ে বাকি গরুগুলো দ্রুত বিতরণ করেন।
বিষয়টি নিয়ে নাজিরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি কে এম সাঈদ বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে ইউএনওর অশোভন আচরণের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশসহ তীব্র নিন্দা জানান। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের তদন্ত পূর্ব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে পদক্ষেপ নিতে নাজিরপুর প্রেসক্লাবের সব পেশাজীবী সাংবাদিকদের কাছে এর প্রতিবাদ জানানোর জন্য আহ্বান করেন।
মৎস্যজীবী লাল মিয়া বলেন, একটি গরু পেয়েছি। তার ওজন হবে ৪০ থেকে ৪৫ কেজি হবে। ইউএনও বলছে নিতে তাই নিয়ে গেছি।
খবর পেয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলগীর হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বলেন, বকনা বাছুর বিতরণ এ সরকারের একটি অংশ। এখানে প্রতি বকনা বাছুরের ওজন ৭০ কেজি থাকার কথা, আছে হবে ৩০ থেকে ৪০ কেজি, এটা আমরা হতে দিব না, এটা জনগণের টাকায় কেনা, এটা জনগণের সম্পদ। ৫ তারিখের পরিবর্তন কোনো চেয়ার পরিবর্তন লুটের পরিবর্তনের জন্য হয় নাই, আমরা গুণগত পরিবর্তন চাই। প্রকল্প বাতিল হয়ে যাবে যিনি বলছেন উনি বোকার স্বর্গে বাস করেন। প্রয়োজনে ঠিকাদারকে গরু পালটিয়ে নতুন করে দিতে হবে।
তবুও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মৎস্য কর্মকর্তা বিকেলে তারা নিজেরা এর কোনো সমাধান না করেই উক্ত গরু মৎস্যজীবীদের মাঝে বিতরণ করেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশ্রাফুল আলম খান বলেন, আমি বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে শুনলাম, ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি দেখব।
প্রতিনিধি/এসএস

