চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) দীর্ঘ ৩৬ বছর পর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের দাবি আবারও জোরাল হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির মুখে চলতি বছরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘চাকসু সংবিধান রিভিউ কমিটি’ গঠন করে। এতে দীর্ঘদিন ধরে অচল থাকা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রত্যাশিত নয়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি চাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ দিনের মধ্যে চাকসুর খসড়া গঠনতন্ত্র প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও দুই মাস পেরিয়ে গেলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ৩৬ বছর ধরে নির্বাচন বন্ধ থাকায় ছাত্রদের অধিকার আদায়ের সাংবিধানিক প্ল্যাটফর্ম হারিয়ে গেছে। বিশেষ করে গত ১৬ বছর ধরে ক্যাম্পাসে গুম, খুন, দমন-পীড়ন ও গণতন্ত্রহীনতার অভিযোগ তুলেছেন তারা। তাই ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাকসু নির্বাচনের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সকলে।
প্রায় সব ছাত্রসংগঠনই এখন চাকসু নির্বাচনের বিষয়ে সক্রিয়। ২৯ এপ্রিল ছাত্রদলও চার দফা দাবিতে স্মারকলিপি দেয় এবং একই দিনে ছাত্রশিবির সংবাদ সম্মেলন করে চাকসুর গঠনতন্ত্রে ১২টি নতুন পদ সংযোজনের প্রস্তাব দেয়। এর আগে গত ১৬ এপ্রিল ছাত্রশিবির প্রশাসনের কাছে চার দফা দাবিতে স্মারকলিপি দেয়। এরপর ২৭ এপ্রিল সচেতন ছাত্রসমাজের ব্যানারে ১১টির বেশি ছাত্রসংগঠনের নেতা দুই দফা দাবিতে আরেকটি স্মারকলিপি দেন।

বিজ্ঞাপন
সেখানে ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র মজলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব অ্যালায়েন্স, স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র ফেডারেশন, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদসহ আরও কয়েকটি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সংগঠক রশিদুল হক দিনার বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান বিদ্যমান। এটি ছাত্রসংসদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রশাসন যেন জুনের মধ্যেই চাকসু নির্বাচন আয়োজন করে।

ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক আজাদ হোসেন বলেন, চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রদের একটি ঐক্যবদ্ধ ও গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে। বর্তমান প্রশাসনের প্রতি আমাদের অনুরোধ, তারা যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন বাস্তবায়ন করে।
ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন, ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত চাপে এবার হয়ত চাকসু নির্বাচন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তবে প্রশাসনের অভ্যন্তরে এখনও কিছু পক্ষপাতদুষ্টতা এবং ফ্যাসিবাদের রেশ রয়ে গেছে, যা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশে প্রশ্ন তুলছে।
ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী বলেন, চাকসু গণতান্ত্রিক বিকাশের একটি অপরিহার্য অংশ। বর্তমানে ক্যাম্পাসে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে, যা নির্বাচনের জন্য অনুকূল। শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও অংশগ্রহণও ইতিবাচক।

এদিকে প্রশাসন চাকসু নির্বাচন নিয়ে কিছু উদ্যোগ নিলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা প্রদান করতে পারেনি। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর চাকসু নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কিন্তু প্রশাসনের তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের দিকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম ২৪ বছরে মোট ৬ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও গত ৩৬ বছর ধরে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে ‘চাকসু সংবিধান রিভিউ কমিটি’র প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, চাকসুর রূপরেখা ও নীতিমালা প্রণয়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ১৪ মে সমাবর্তনের পর সবকিছুর আপডেট জানানো হবে ইনশাআল্লাহ।

তিন দশকেরও বেশি সময় পর ছাত্রসংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, এই নির্বাচন হলে তারা গণতান্ত্রিকভাবে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পাবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারবেন। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, বৈষম্য ও প্রশাসনিক একচাটিয়াবাদের অবসান ঘটিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ পরিবেশ ফিরে আসবে, এমনটাই প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের।
প্রতিনিধি/এসএস

