সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

৪ বছরের শিশুর ‘ফুঁ’ দেওয়া তেল-পানি নিতে হাজারো মানুষ

জেলা প্রতিনিধি, শেরপুর
প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

৪ বছরের শিশুর 'ফুঁ' দেওয়া তেল-পানি নিতে হাজারো মানুষ

মাত্র চার বছরের এক শিশুর ঝাড়ফুঁক দেওয়া পানি ও তেল ব্যবহার করে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে অসুস্থ রোগীরা এমন বিশ্বাসে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজারো মানুষ। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই উপচে পড়া লোক সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

শুনতে কাল্পনিক মনে হলেও এমন ঘটনার দেখা মিলেছে শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার ভাটি লঙ্গরপাড়া এলাকায়। তবে সচেতন মহল বলছে এটা কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস ছাড়া কিছুই নয়। আর বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।


বিজ্ঞাপন


স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ী মো. আব্দুল ওয়াহাব এর চার বছরের শিশু পুত্র লাবীব হলেন সেই শিশু কবিরাজ। আল্লাহর নামে ঝাড়ফুঁক দেওয়া তার তেল ব্যবহার করলে ও পানি পান করালে জটিল ও কঠিন রোগের মুক্তি মিলছে দাবি অনেক রোগী ও তার স্বজনদের। প্রথমে তার পরিবারের সদস্যদের রোগ মুক্তি, পরে তার আত্বীয় স্বজনের রোগমুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়তেই জেলাসহ জেলার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজার হাজার মানুষ। এর পর থেকেই বিভিন্ন রোগীকে ঝাড়ফুঁক দিয়ে যাচ্ছে শিশু কবিরাজটি। তার পরিবারের সদস্যদের দাবি এটা আল্লাহ প্রদত্ত অলৌকিক ক্ষমতা। অন্যদিকে, স্থানীয়রা সচেতন মহল এগুলো কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয় বলে দাবি করেছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর কোনো ভিত্তি নেই বলেও জানান অনেকে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়,‌ শিশুটি নিজের মনে বাবার সঙ্গে পানি দিয়ে খেলছে। দুইজন মানুষ বালতি পানি পানি এনে বোতল ভরাচ্ছেন। তার বাবা তাকে খেলাধুলা বন্ধ করে পানিতে ফুঁ দিতে বলছে। অমনি ছেলেটি মাথা এগিয়ে পানিতে ফুঁ দিচ্ছে। অপরদিকে, শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে এক এক করে পানি ও তেলের বোতল এগিয়ে শিশুটির মুখের কাছে ধরছেন। আবার কখনও শিশুটি তার বাবার কোলে বসে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়ে থাকা মানুষের বোতল ভর্তি পানি, তেলের শিশিতে ঝাড়ফুঁক দিচ্ছে। এতেই তৃপ্তি নিয়ে সবাই রোগমুক্তির আশায় বাড়ি ছারছেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা এবং বিকেল ৫টায় দুই ধাপে চলে এই ঝাড়ফুঁক। আগত রোগীর মধ্যে নারীই সবচেয়ে বেশি।

thumbnail_1000087231

এসময় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত নারী ও পুরুষ রোগী ও রোগীর পরিবারের সদস্যরা বলেন, অনেক অসুস্থ রোগী ডাক্তারের চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়েও এখানে এসে সুস্থ হয়েছে। এমন খবর শুনে আমরাও এখানে এসেছি। আশাকরি আমরাও সুস্থ হবো।


বিজ্ঞাপন


খড়িয়ার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব হাবিবুর রহমান বলেন, আমার দ্বিতীয় বারের মতো স্ট্রোক হবার পর একেবারে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। লাঠি ছাড়া হাঁটতে পারতাম না। এই শিশু কবিরাজের চিকিৎসায় আমি এখন সুস্থ। আমি এখন লাঠি ছাড়া দ্রুত হাঁটতে পারি‌।

স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকদল নেতা মাহফুজুর রহমান আঙ্গুর বলেন, মানুষ শুনে শুনে এ ভিড় জমাচ্ছে। এটা তাদের একটা ভ্রান্ত ধারণা। আমরা সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছি।

জানতে চাইলে শিশুটির বাবা বলেন, আমার ছেলে শত শত মানুষের রোগ ভালো করেছে বলে রোগীরা আমাদের জানিয়েছেন। তার এই ক্ষমতা আল্লাহ প্রদত্ত। প্রথমে সে তার মাকে চিকিৎসা করে ভালো করেছে। পরে সুস্থ করেন এলাকার আঘাতপ্রাপ্ত স্থানীয় কয়েকজন ফুটবল খেলোয়াড়দের। এরপর থেকে জানাজানি শুরু হলে মানুষের ভিড় জমে। আল্লাহর নাম নিয়ে আমার ছেলে ফুঁ দিয়ে দিলে অনেকেই সুস্থ হয়ে যায়। এ কারণে হাজার হাজার লোক আসছেন। এর জন্য আমার ছেলে আজ পর্যন্ত একটি টাকা কারো কাছে নেয়নি। এসময় তিনি তার ছেলেকে একজন আলেম বানাতে চান বলে দোয়া চান।

 

শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ জাবের আহমেদ বলেন, এই বিষয়টি কুসংস্কার বলে মনে হচ্ছে। যার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই। বিষয়টি নজরে এসেছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা চলমান।

জানতে চাইলে জেলার সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ শাহীন বলেন, এটা সম্পূর্ণ কুসংস্কার। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই পদ্ধতিতে রোগ মুক্তির কোনো ভিত্তি নেই। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিনিধি/টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর