মায়ের চিকিৎসার টাকা হারিয়ে ফেলার তিন দিন পর পুলিশের সহযোগিতায় আংশিক অর্থ ফেরত পেয়েছেন মনিরুল ইসলাম (৪৫)। তবে এখনো পুরো টাকা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস. এম. আমান উল্লাহ মনিরুল ইসলামের হাতে উদ্ধারকৃত এক লাখ আটচল্লিশ হাজার টাকা তুলে দেন। এর আগে, গত শনিবার ফরিদপুরে নিজের বাড়ি ফেরার পথে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে টাকার ব্যাগটি হারিয়ে ফেলেন মনিরুল।
বিজ্ঞাপন
মনিরুল ইসলাম জানান, মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে শনিবার সকাল ৮টায় রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা হন। তাঁর সাথে একটি কালো রঙের ব্যাগে ছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, যা মোটরসাইকেলের পেছনে কাপড়ের রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় পৌঁছালে তিনি ব্যাগটি না পেয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে যান এবং পথ ফিরে গিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পরেও ব্যাগটি না পেয়ে তিনি নিজের ফেসবুক আইডিতে বিষয়টি প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘মায়ের চিকিৎসা এবং ঋণ পরিশোধের জন্য দীর্ঘদিন ধরে এই টাকা জমিয়েছিলাম। টাকা হারিয়ে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল। একদিন পর স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারি, হারানো টাকা পুলিশের জিম্মায় রয়েছে। এই টাকা ফিরে পেয়ে আমি পুলিশের কাছে এবং যারা টাকা পুলিশের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। এ টাকা দিয়ে মায়ের চিকিৎসা করাতে পারব। বাকি টাকা পেলে ঋণও শোধ করতে পারব।’
জানা গেছে, মনিরুলের টাকাসহ কালো ব্যাগটি মানিকগঞ্জ প্রান্তের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাড়োবাড়িয়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পড়ে ছিল। মানিক মিয়া নামে এক লোকাল বাস চালক যাত্রীসহ মানিকগঞ্জ ফেরার পথে রাস্তায় ব্যাগটি দেখতে পেয়ে হেলপারকে সেটি গাড়িতে তুলতে বলেন। হেলপার ব্যাগটি তুলে চেইন খুলে টাকা ভর্তি ব্যাগ দেখে ফেলেন। যাত্রীরাও বিষয়টি দেখে ফিসফিস করতে শুরু করে। একপর্যায়ে বাসটি মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে যাত্রীরা হৈচৈ শুরু করে। এরপর চালক খালি গাড়ি নিয়ে কিছু দূরে গিয়ে টাকা গুনতে থাকেন। এ সময় পৌর পার্কিংয়ের টাকা তুলতে আসা কর্মীরা চালককে ভয় দেখিয়ে সব টাকা নিয়ে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়।
বাসচালক ও হেলপার বিষয়টি মালিক সমিতিকে জানান, পরে তারা পুলিশকে অবহিত করে। পুলিশ প্রায় ছয় ঘণ্টা পর ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকাসহ ব্যাগটি উদ্ধার করে।
বিজ্ঞাপন
পরে পুলিশ স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের বিষয়টি জানালে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মনিরুল ইসলামের স্বজনেরা খবরটি দেখে তাকে ফোন করে জানান। এরপর তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানায় যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ টাকা ফেরত পান। তিনি দাবি করেন, ব্যাগে মোট ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ছিল।
মনিরুল ইসলাম রাজধানীর উত্তরা এলাকায় একটি ভাড়া দোকানে দরজার ব্যবসা করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম ‘উত্তরা ডোর গ্যালারি’। তাঁর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার নবাবপুর ইউনিয়নের বড় হিজলি এলাকায়। তিনি ওই এলাকার আব্দুল মালেক মোল্লার ছেলে।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি এস. এম. আমান উল্লাহ বলেন, ‘হারানো টাকা উদ্ধার করে মনিরুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁর দাবি অনুযায়ী ব্যাগে আরও কিছু টাকা ছিল। আমরা সেটি উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
প্রতিনিধি/একেবি

