সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সুবর্ণচরে পানির সংকট, বিশুদ্ধ পানির গাড়ি দেখলেই ছুটে যান গ্রামবাসী

মাহবুবুর রহমান, নোয়াখালী
প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

সুবর্ণচরে পানির সংকট, বিশুদ্ধ পানির গাড়ি  দেখলেই ছুটে যান গ্রামবাসী

বিশুদ্ধ পানির গাড়ি দেখলেই ছুটে আসেন এলাকাবাসী। মসজিদের মাইকেও ঘোষণা করা হয় পানির সংগ্রহের জন্য। প্রতিনিয়ত এমন দৃশ্যের দেখা মিলে সুবর্ণচর উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নে। বৈশাখের খরতাপ আর  অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। কৃষি কাজের জন্য ২৪৫টি সেচ পাম্পের অনুমতি থাকলেও অপরিকল্পিতভাবে বসানো হয়েছে আরও ৩ হাজারের বেশি সেচ পাম্প। পানি সংকট মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রতিদিন কিছু পানি সরবরাহ করা হলেও সেটি অপ্রতুল।

এ অঞ্চলে রবি মৌসুমে কৃষকরা শীতকালীন সবজি, বাদাম, মরিচ, ডাল, সরিষা, ছোলা বুট, রৌশন, পেঁয়াজ, মটরশুঁটি, খেসারি, ভুট্টা, তিল, মেথি, ধনিয়া, তরমুজ, কুমড়াসহ নানা জাতের রবিশস্য উৎপাদন করেন কৃষক। এ অঞ্চলের তরমুজের ভালো ফলন হতো। সাম্প্রতিক সময়ে পানি সংকটের কারণে তরমুজের চাষাবাদ বন্ধ  হয়ে গেছে। এতে অনেক কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।


বিজ্ঞাপন


thumbnail_1000212942

নোয়াখালী জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় মাত্র ৮৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছিল, এরপর ২০২১ সালে তরমুজ চাষ হয় ৫৮০ হেক্টর জমিতে, ২০২২ সালে উপজেলায় তরমুজ আবাদের জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯০৫ হেক্টরে, ২০২৩ সালে উপজেলায় ১ হাজার ১৮০ হেক্টর, আর ২০২৪ সালে তরমুজ আবাদের জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজার  হেক্টরে।

দেখা যায় রবি ফসল আবাদ লাভজনক না হওয়ায় পানি নির্ভর লবণাক্ততা সহনশীল বোরো ধান আবাদের ফলে পানির সংকট প্রতি বছর বাড়ছে। ২০১৮ সালে এ উপজেলায় ৪০০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হলেও চলতি বছরে আবাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টর। এতে জায়গায় অতিরিক্ত ডিপ ব্যবহারেই পানি সংখ্যাটি আকার ধারণ করেছে। ধান চাষে ভূগর্ভের পানি অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে বাড়িঘরের (৭০০-১২০০ ফুট) গভীর নলকূপে এখন আর পানি ওঠে না।

thumbnail_1000209784


বিজ্ঞাপন


সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নোয়াখালী সুবর্ণচর বেশিরভাগ ইউনিয়নে নেই পানি। তেমনি একটি ইউনিয়ন ২ নম্বর চরবাটা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মসজিদের মাইকিং হচ্ছে। বাড়ির সামনে এসেছে সুপেয় পানির গাড়ি। আশপাশের বাড়িগুলো থেকে পানির জন্য ছুঁটছে নারী-পুরুষ-শিশু। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিদিন দু’টি গাড়িযোগে সরবরাহ করা হচ্ছে ১২ হাজার লিটার সুপেয় পানি। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা একেবারেই অপর্যাপ্ত।

স্থানীয় বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন দাবি দাবি করেন, এখানে গ্রীষ্মকালে এলেই বেশিরভাগ এলাকাজুড়ে পানির সংকট দেখা দেয়। এতে নানা রকমের রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশু এবং বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। মাঝে মাঝে যে পানি দেওয়া হয় তা একেবারে আমাদের জন্য সামান্য।

thumbnail_1000209790

কুলসুম আক্তার নামে এক নারী বলেন, সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা থেকে দুইটি গাড়ি ও সরকারের একটি গাড়ির মাধ্যমে মাঝে মাঝে পানি দেয়। এতে কোনো রকম চলে কিন্তু আরও যদি গাড়ি বৃদ্ধি করা হয় তাহলে আমাদের উপকার হতো।

উপকূলীয় পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুল বারী বাবলু বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও অব্যাহত নদী ভাঙনের ফলে সুপেয় পানির সংকট তৈরি হয়েছে। এতে ১৫শত থেকে ২ হাজার ফুট নিচেও পানি মিলছে না। এ অঞ্চলের মানুষের পানি সংকট সমাধানে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে ভূগর্ভের পানির মজুতের পরিমাণ জরিপ করতে হবে। অন্যথায় পানির পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়তে পারে উপকূলীয় এ জনপদে।

সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা প্রধান নির্বাহী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মেঘনার খাল পুনঃখনন, স্লুইচ গেইট নির্মাণ, পুকুর-দীঘি খনন করে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণ করতে হবে। যেসব অঞ্চলগুলোতে পানি সংকট দেখা দিয়েছে সেসব অঞ্চলগুলোতে প্রাথমিকভাবে বেসরকারি উদ্যোগে যদি আরও কিছু গাড়িতে যদি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যায় তাহলে সাময়িকভাবে বিশুদ্ধ পানিতে সংকট রয়েছে সে  সংকট মোকাবিলা করা যাবে। একইসঙ্গে পানির সংকট মোকাবিলায় ধান চাষের বিকল্প ডাল জাতীয় শস্য উৎপাদন করার পরামর্শ দেন তিনি।

thumbnail_1000209760

নোয়াখালী বিএডিসি নির্বাহী প্রকৌশলী হুসাইন মুহাম্মদ খালিদুজ্জামান বলেন, বড় চাষের কারণে প্রায় আনুমানিক ৩০০০-৩৫০০০ হাজার ব্যক্তিগত টিউবল থেকে পানি সেচ দেয়ার কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে। এজন্য উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় যে লাইসেন্সগুলো দেওয়া হয় সাময়িকভাবে সেটি আমরা বন্ধ রাখব। সামনের দিনে পানি সংকট মোকাবিলায় অনুমোদনহীন সেচ যন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার করব। আমাদের পরামর্শ হলো পানি কম লাগে এমন ফসল উৎপাদন উৎপাদন করা যায় সে বিষয় নিয়ে কাজ করছি। 

আরও পড়ুন

হাতিয়ায় তমরোদ্দি গ্রামীণ রাস্তার বেহাল দশা, জনদুর্ভোগ

সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, অবৈধ গভীর নলকূপের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এছাড়া সুপেয় পানির সংকটে আপদকালীন চাহিদা পূরণে জেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদফতরের সহযোগিতায় সুপেয় পানি ও প্লাস্টিকের কনটেইনার বিতরণ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সুবর্ণচরে রবি মৌসুমে শুধু বোরো আবাদে ব্যবহার হচ্ছে ৭৭ হাজার ৪৩৫ কোটি কিউসেক পানি। যার ৯৫ শতাংশই আসছে ভূগর্ভ থেকে। এতে সাধারণ টিউবওয়েল যেগুলো সেগুলোতে এক ধরনের পানি সংকটে দেখা দিয়েছে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর