খুলনার দাকোপ উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নে চড়া নদী খনন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এলজিইডির তত্ত্বাবধানে চলমান এই প্রকল্পে কাজ শুরুর পর থেকে নানা ধরনের অনিয়ম সংঘটিত হচ্ছে। খননের নামে নদীর দুই পাড়ের গাছ কাটা, রাস্তা বন্ধ করা, এবং প্রকৃত খনন না করে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রকল্পের খনন কাজের জন্য নির্ধারিত তলদেশে খনন না করে কেবল নদীর পাড়ের গাছ কেটে মাটি তুলে নেওয়া হচ্ছে। খননের জন্য যেসব ভেকু মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলি মাটির স্তুপ রাস্তার উপর রেখে চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে, যা মাটির ঝুঁকি ও পরিবেশগত ক্ষতি সৃষ্টি করছে।
বিজ্ঞাপন
একাধিক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, কাজের অগ্রগতি সত্ত্বেও সঠিক খনন হচ্ছে না। পাড়ের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, যা কৃষকদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় শিক্ষক প্রলয় মজুমদার জানান, “আগে খালের দুই পাড় সবুজে ছাওয়া ছিল, এখন সেই জায়গাগুলো মরুভূমির মতো হয়ে গেছে।”
এই অনিয়মের বিরুদ্ধে কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রামবাসী খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন, তবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও অভিযোগ করেছেন যে, তারা কোনো ধরনের তথ্য জানার সুযোগ পাচ্ছেন না, এবং প্রকল্পটির ব্যাপারে এলজিইডির কোনো নির্দেশনা নেই।
১, ৩, ৬, ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যরা জানিয়েছেন, হঠাৎ করেই ঈদের আগে ভেকু মেশিন নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে, কিন্তু কীভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় এই কাজ ঠিকাদারদের দেওয়া হয়েছে, সেটি জানানো হয়নি। এর ফলে এলাকার জনগণ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
২০১৫ সালে গঠিত ‘হরিণটানা ঘোলের খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে একটি পকেট কমিটি প্রকল্পটির তত্ত্বাবধান করছে। এই কমিটির সভাপতি তপন কুমার মন্ডল (কৈলাশগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি) এবং সাধারণ সম্পাদক শংকর পাইক (১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) একই সময়ে এই প্রকল্পের কাজ পাচ্ছেন, যাদের আত্মীয়-স্বজনরা সমিতির সদস্য হিসেবে যুক্ত আছেন। তাদের বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
এলাকাবাসী মনে করেন, আওয়ামী লীগের স্থানীয় কিছু নেতার সহযোগিতায় এই কাজটি চলছে এবং তারা স্থানীয়দের কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
এলজিইডি প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক শংকর পাইক দাবি করেছেন, ‘আমরা তরমুজ চাষীদের স্বার্থে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য এই খনন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। কাজের সময়সীমা তিন মাস, আর ৮২ লাখ টাকা বাজেট রয়েছে। ৭০ শতাংশ কাজ ভেকু দিয়ে এবং ৩০ শতাংশ কাজ সমিতির সদস্যদের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।’
তবে তিনি গাছ কাটা এবং রাস্তা বন্ধ হওয়ার বিষয়ে স্বীকার করেছেন এবং বলেন, ‘মাটি সরিয়ে ফেলার কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।’
এ বিষয়ে দাকোপ উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনে প্রতিক্রিয়া জানাননি। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম সরদার বলেন, ‘চড়া নদীর খননের কাজ চলমান রয়েছে। কাজ শেষ হলে আমরা নকশা অনুযায়ী তা পরীক্ষা করবো এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবো।’
স্থানীয় জনগণ জানিয়েছেন, প্রকল্পটি যদি সঠিকভাবে, স্বচ্ছতার সাথে পরিচালিত না হয়, তাহলে তারা বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাদের দাবি, খাল খনন কার্যক্রম যেন জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে এবং প্রকৃত কাজের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাঁরা আশা করেন, প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
প্রতিনিধি/একেবি