মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫, ঢাকা

মধুমতীতে পানি কম, ঢেউ নেই—তবু চলছে ভাঙন

মো. হাবিবুর রহমান, নড়াইল 
প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:০৯ এএম

শেয়ার করুন:

মধুমতীতে পানি কম, ঢেউ নেই—তবু চলছে ভাঙন

নড়াইলের লোহাগড়ায় নদী ভাঙনে হুমকিতে শতাধিক ঘরবাড়ি, স্কুল ও মসজিদ

মধুমতী নদীতে বর্তমানে পানি কম, ঢেউও নেই—তবুও থেমে নেই নদীভাঙন। কিছু কিছু এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া বালুর বস্তাগুলো সরে গিয়ে নদীতে তলিয়ে গেছে, ফলে আগের বাঁধ ভেঙে গিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে ভাঙন। এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর, মাকড়াইল, রামচন্দ্রপুর ও নওখোলা গ্রামে।


বিজ্ঞাপন


সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ফসলি জমি একের পর এক নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ১৯৪৫ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের তিনটি স্কুল, কয়েকটি মসজিদ, আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং গ্রামীণ সড়ক।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, বহু বছর ধরে বর্ষাকালে মধুমতী নদীতে ভাঙন দেখা দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু জায়গায় বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ নির্মাণ করায় ভাঙন কিছুটা রোধ হয়েছিল। তবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ইজারাকৃত ও ইজারা বহির্ভূত স্থান থেকে বালু উত্তোলনের কারণে বহু স্থানে বাঁধ ভেঙে পড়েছে। সেই কারণেই এ বছর অকালেই ভাঙন শুরু হয়েছে।

ভাঙন আতঙ্কে থাকা বাসিন্দারা জানান, তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসন ইজারা বহির্ভূত এলাকায় বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছে। এ ছাড়া নতুন অর্থবছরের শুরুতেই সংশ্লিষ্ট বালুমহলের ইজারাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি এনে দিয়েছে। তবে তাঁরা চান এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী হোক এবং আর কোনোভাবেই কেউ যেন বালু উত্তোলন করে তাঁদের ক্ষতিসাধন করতে না পারে।


বিজ্ঞাপন


তাঁদের দাবি, বালু উত্তোলন বন্ধ হলেও ভাঙন থেমে নেই। তাই ভাঙনকবলিত এলাকায় বালুর বস্তা ফেলে আপাতত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হোক এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হোক।

লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর গ্রামের বৃদ্ধা শামসুন্নাহার বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘শুধু বালু উত্তোলনের কারণেই আমার বাড়ি ভেঙে যাচ্ছে। আমি গরিব-অসহায় মানুষ। কোথাও গিয়ে নতুন করে বাড়ি করার মতো জমি আমার নেই। স্বামী নেই, একমাত্র ছেলে নেই, আছে চারটি মেয়ে। জানুয়ারি মাসে যখন বৃষ্টি ছিল না, তখনও আমার ভিটেমাটি ভাঙছিল। এখনও ভাঙছে। বর্ষা এলে সব কিছু চলে যাবে। আমার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’

তাঁর বাড়ির সামনেই মধুমতী নদী থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলা হয়, এবং সেই বালু স্তূপ করে রাখা হয় বাড়ির পেছনে। এই কারণে সামনের বাঁধের বালুর বস্তাগুলো নদীতে সরে গিয়ে ভাঙন ত্বরান্বিত হয়েছে। শুধু শামসুন্নাহার বেগম নন, আরও অনেকেই একইভাবে বসতভিটা হারিয়েছেন।

মাকড়াইল গ্রামের ফজলুল মৃধা জানান, ‘আমাদের কয়েক একর জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। আমার ভাই ইতোমধ্যে বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র চলে গেছে। নদী থেকে বালু তোলার ফলে আমার বাড়ির সামনের বাঁধ ভেঙে পড়েছে। পাশের ব্রিটিশ আমলের স্কুলটিও হুমকির মুখে।’

অন্য এক বাসিন্দা, বৃদ্ধা মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আগে দুইবার নদীতে আমার বাড়ি গেছে, কষ্ট করে আবার বাড়ি করেছি। অনেক জমি চলে গেছে। এখনকার বাড়িটাও ভাঙনের মুখে।’

vv

নড়াইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, ‘নিয়ম না মেনে বালু উত্তোলনের কারণে আমাদের নির্মিত প্রতিরক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ওইসব ইজারাকৃত ও অনিয়মিত বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

লোহাগড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রিয়াদ জানান, ‘নদীভাঙনের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার বালুমহলের ইজারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন কেউ যদি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে, তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর