মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫, ঢাকা

বগুড়ায় অহিমায়িত ঘরে দুই হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ

জেলা প্রতিনিধি, বগুড়া
প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

বগুড়ায় অহিমায়িত ঘরে দুই হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ

বগুড়ায় প্রাকৃতিকভাবে দুই হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে কৃষি বিপণন বিভাগের তৈরি করা অহিমায়িত মডেল ঘরে। আলু ছাড়াও এই ঘরগুলোতে সংরক্ষণ করা যাবে মিষ্টি কুমড়া,কচুর মুখিসহ গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন সবজি।

বগুড়ার ৭টি উপজেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি দেড় হাজার কৃষক ৬৭টি অহিমায়িত মডেল ঘরে এবার আলু সংরক্ষণ করেছেন। কৃষি বিপণন অধিদফতরের এ প্রকল্পের নাম দিয়েছে অহিমায়িত মডেল ঘর। এই ঘরে চার মাস আলু সংরক্ষণ করা যাবে। এখানে আলু সংরক্ষণ করতে বাড়তি কোনো খরচ নেই।


বিজ্ঞাপন


বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর বছর ৬০ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে ১৩ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে অনেক বেশি। এত বেশি পরিমাণ আলু সংরক্ষণ করতে গিয়ে কৃষক পড়ে যান বিপাকে। জেলার ৪২টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা যায় চার লাখ মেট্রিক টন। আর পুরো জেলায় সারাবছর আলুর চাহিদা থাকে তিন লাখ মেট্রিক টন। প্রতি বছরই কৃষক আলু সংরক্ষণ করতে না পেরে কম মূল্যে বিক্রি করে দেয়। যার কারণে তাদেরকে লোকসানের মুখে পড়তে হয় প্রতি বছর। কৃষকের লোকসান কমিয়ে আনতে কৃষি বিপণন অধিদফতর এ বছর ৬৭টি অহিমায়িত মডেল ঘর তৈরি করে দেন।  প্রতিটি ঘরে ৩০ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা যাবে। পরীক্ষা মুলকভাবে এ বছর ৭টি উপজেলায় ৬৭টি অহিমায়িত মডেল ঘর তৈরি করা হয়েছে। গ্রামের কৃষকদের নিয়ে সমিতি গঠন করে কৃষকের জায়গায় ঘরগুলো কৃষি বিপণন বিভাগের টাকায় তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

চুয়াডাঙ্গায় মাঝারি তাপপ্রবাহ, ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা

ছায়া ঘেরা জায়গায় বাঁশ, কাঠ, ঢেউটিন, সিমেন্টের পিলার, ককসিট ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করে ২৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের মডেল ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে। ঘরের মেঝেতে বাঁশের তৈরি মাচায় আলু ঢেলে রাখার কারণে বস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে  না।

বগুড়া সদরের কাজী নুরইল গ্রামের কৃষক আহসানুল হক ডালিম বলেন, অহিমায়িত ঘর আলু সংরক্ষণের জন্য আগামীতে ব্যাপক   জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। গতবছর কিছু ঘর তৈরি করা হলেও কৃষকের আগ্রহ তেমন ছিল না। এবার হিমাগারগুলোতে আলু রাখার চাপ বেশি হওয়ায় বগুড়ায় এই ঘরের চাহিদা বেড়েছে। তিনি বলেন, আমি অহিমায়িত ঘরে আলুর পাশাপাশি পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছি। ঘরগুলো ছায়াঘেরা স্থানে নির্মাণ করায় এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করায় আলু নষ্ট হয় না।


বিজ্ঞাপন


1000100127

তিনি বলেন, আমি গতবছর প্রাকৃতিক উপায়ে অহিমায়িত ঘরে আলু সংরক্ষণ করে সুফল পেয়েছি। চার থেকে পাঁচ মাস আলু রাখা যায়। বাজারে দাম বেড়ে গেলে এর আগেও বিক্রি করা যাবে।

বগুড়া সদরের চকঝপু গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সমিতির মাধ্যমে এবারই প্রথম আলু সংরক্ষণ করেছি। কোনো সমস্যা না হলে এলাকায় কৃষকের মাঝে অহিমায়িত ঘর জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

বগুড়ার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মমতা হক বলেন, কৃষকের বসতবাড়িতে রাখার জায়গার অভাবে অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে আলু বিক্রি করে দেন। অহিমায়িত ঘরের সুফল পেলে আগামীতে কৃষক নিজ খরচে ঘর তৈরি করে নিতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, রংপুর অঞ্চলে অহিমায়িত ঘর ব্যাপক জনপ্রিয়। আগামীতে বগুড়াতেও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এই ঘর।

তিনি আরও জানান, অহিমায়িত মডেল সংরক্ষণাগারে কৃষকরা বিনা খরচেই আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন। আলু বিক্রি করে দেওয়ার পর পেঁয়াজ, মিষ্টিকুমড়া, ভুট্টা, কচুরমুখিসহ বিভিন্ন ফসল সংরক্ষণ করা যাবে।

তবে, অহিমায়িত মডেল ঘরে কাটা, ফাটা, অপরিপক্ব, রোগযুক্ত ও ছাল ওঠা আলু রাখা যাবে না। সংরক্ষণাগারে যাতে সূর্যের আলো ও বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর