‘প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙে একটাই ভাবনায়—আজ কি আমাদের ঘরটা থাকবে?’ কথাটি বলছিলেন চর ডাকাতিয়া উত্তরপাড়ার বাসিন্দা ময়নাল হক। যমুনার পাড়ঘেঁষা এই জনপদে এখন আতঙ্কের নাম নদীভাঙন।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার যমুনা নদীতীরবর্তী চর ডাকাতিয়াপাড়া এলাকায় চলছে ভয়াবহ ভাঙনের তাণ্ডব। আর তা ঘটছে অসময়ে, অর্থাৎ শুকনো মৌসুমেই—যা এই অঞ্চলের জন্য এক চরম সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিজ্ঞাপন
গত এক মাসে যমুনার গর্ভে হারিয়ে গেছে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ও শত শত একর ফসলি জমি। দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে জনপদ। নদী গ্রাস করছে মানুষের বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টাটুকুও।
এই অঞ্চলের বহু মানুষ এখন পলিথিনের ছাউনি বা অন্যত্র আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয়ে আছেন। কেউ কেউ চলে গেছেন অন্য জায়গায়।
অসময়ে এই ভাঙনে এখন হুমকির মুখে পড়েছে চর ডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদরাসা ও আরও কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
বিজ্ঞাপন
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, ভাঙনরোধে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় গৃহবধূ মাজেদা বেগম বলেন, আমাদের বাড়ির এক পাশ আগের রাতে ভেঙে পড়ে। পরের দিন চোখের সামনে বাড়ি ভেঙে পড়ে গেল নদীতে। বাচ্চাদের নিয়ে সারারাত বাইরে কাটাইছি। এখন আমাদের আর কিছুই নাই সব নদীতে চলে গেছে।
চর ডাকাতিয়াপাড়ার বাসিন্দা হামিদুর রহমান বলেন, জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু যেখানে ১০০ ব্যাগ দরকার, সেখানে ফেলছে ২০টা। এতে কিছু হবে না।
বিল্লাল হোসেন বলেন, এখানে একটি টেকসই ও স্থায়ী বাঁধ দরকার। দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি এখানে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে পুরো চর ডাকাতিয়াপাড়া মানচিত্র থেকেই মুছে যেতে পারে।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান জানান, নদী ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আর নদী তীর সংরক্ষণের জন্য একটি সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি) সম্পন্ন হয়েছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
প্রতিনিধি/এসএস