সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ফসল ছেড়ে তামাক চাষে আগ্রহী রাজবাড়ীর কৃষক, উর্বরতা হারাচ্ছে জমি

জেলা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী 
প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

ফসল ছেড়ে তামাক চাষে আগ্রহী রাজবাড়ীর কৃষক, উর্বরতা হারাচ্ছে জমি

রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামের কৃষক হোসেন শেখ। রাস্তার পাশে স্ত্রী, সন্তানসহ মাঠ থেকে তোলা তামাক শুকানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এক একর পাঁচ শতাংশ জমিতে জীবনে প্রথমবারের মতো তামাক চাষ করেছেন হোসেন শেখ। ভালো ফলনে খুশি তিনি। তিনি বলেন, আমার মতো অনেক কৃষক এ বছর তামাকের চাষ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজবাড়ীতে কোনোভাবেই চাষিদের তামাক চাষ থেকে ফেরানো যাচ্ছে না। বরং, নতুন নতুন জমিতে তামাক চাষ বাড়ছেই।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশুর লাশ উদ্ধার 

জেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, রাজবাড়ী জেলায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ২৫ হেক্টর, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৩ হেক্টর, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩০ হেক্টর, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৫ হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদ হয়। তবে বাস্তবে তামাক চাষের পরিমাণ এটার কয়েকগুণ বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তামাক চাষে উৎসাহ দিতে কৃষকদের সার, বীজ, কীটনাশকসহ যা প্রয়োজন তা দিচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় তামাকের আবাদ বেশি।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার চর নারায়ণপুর, গোপীনাথপুর, কাকিলা দাইড়, জৌকুড়াঘাট ও কালুখালী উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ফসলি জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি তামাকের আবাদ হয়েছে চরাঞ্চলে। বিগত বছর যে-সব জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল, সেসব জমিতে এ বছর তামাকের চাষ করা হয়েছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে তামাক চাষ নিয়ে কথা হয়। তারা বলেন, তামাক চাষের শুরুতে বেশ সুবিধা পাওয়া যায়। বিশেষ করে কোম্পানি সার ও অর্থ দেয়। বিক্রি করার সময় কোনো ঝামেলা নাই। যে কারণে দিন দিন তামাক চাষ বাড়ছে।


বিজ্ঞাপন


 

চরনারায়নপুরের তামাক চাষি আসলাম বলেন, পেঁয়াজ, রসুন চাষ করে লাভ হয়নি। ভুট্টার ফলন এখানে ভালো হয় না। তাই তামাক চাষ করেছি। গত বছরের থেকে এ বছর ৩০ শতাংশ জমিতে বেশি লাগিয়েছি তামাক।

তামাক চাষি রহিম সরদার বলেন, অন্য সবকিছুর থেকে তামাক চাষে লাভ বেশি। অন্য ফসলে অনেক খরচ, সেই তুলনায় তামাকে খরচ কম। গত বছর ৫০ শতাংশ জমিতে তামাক লাগিয়েছিলাম। লাভ হওয়াতে এ বছর ৯০ শতাংশ জমিতে তামাক লাগিয়েছি। কিছু জমিতে মরিচ লাগিয়েছিলাম সেটাতে লোকসান হয়েছে। সেই জমিতে যদি তামাক লাগাতাম তাহলে ৪০ হাজার টাকা পেতাম।

আরও পড়ুন: শায়েস্তাগঞ্জে আগুনে ১৫ দোকান পুড়ে ছাই

তামাক চাষি জালাল বিশ্বাস বলেন, আগে পেঁয়াজ, রসুন, গম, ভুট্টা লাগাতাম। সেগুলোতে খুব বেশি লাভবান হতাম না। অনেক সময় লোকসান হতো। তামাক চাষে লাভবান হওয়াতে তামাক চাষ করছি। এই তামাক চাষে খরচ খুবই কম। তামাক পাতা ক্ষেত থেকে তুলে বাড়িতে এনে ছোট-বড় সবার সহযোগিতায় শুকানোর কাজ করা যায়। এতে অতিরিক্ত শ্রমিক খরচ হয় না। এছাড়া কোম্পানি আমাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে।

 

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, তামাক একটি মাদক জাতীয় ফসল। এটা চাষে আইনগতভাবে কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা নেই। কৃষক তার ইচ্ছানুযায়ী ফসল চাষাবাদ করেন। তামাক চাষে জমির উর্বরতা শক্তি মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে। একই জমিতে কয়েক বছর তামাকের চাষ করার ফলে জমিতে বিশেষ ধরনের আগাছা জন্মে। এ আগাছা জমিতে একবার জন্মালে সে জমিতে আর কখনও অন্য ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না।  আমরা কৃষকদের তামাকজাত ফসলের পরিবর্তে উচ্চমূল্যের ফসল চাষাবাদে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছি। তারপরও বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক সহযোগিতায় কৃষক এই ফসল উৎপাদন করছে। কৃষি বিভাগ চেষ্টা করছে তামাক চাষ কমিয়ে আনার জন্য।

রাজবাড়ী জেলা সিভিল সার্জন ডা. এস.এম মাসুদ বলেন, আমরা জানি তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তামাকে উপকারী কিছু নেই। তামাক চাষে যে ক্ষতি হয় তা হলো কৃষিজমির। তামাক শুকিয়ে যাওয়ার পর এর গন্ধ বা তামাক পোড়ালে এর ধোঁয়া শরীরের এমন কোনো অঙ্গ নেই যার ক্ষতি করে না। ফুসফুসের ক্ষতি হয়। মুখে ঘা হতে পারে। এমনকি মরণব্যাধি ক্যানসারের কারণ হতে পারে তামাক।

প্রতিনিধি/ এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর