নোয়াখালীর বিভিন্ন কলেজ এবং মাদরাসাসহ ৩৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। এসব কমিটি নিয়ে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। ঘোষিত কমিটিতে পকেট কমিটি, বিবাহিত ও ছাত্র নয় এ ধরনের অনেককে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে পদবঞ্চিত ছাত্রদলের এক অংশের নেতারা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। এরই মধ্যে নোয়াখালীতে একটি কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রকে অন্য একটি কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। দলের সাংগঠনিক নিয়ম ভেঙে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে এ কমিটি ঘোষণা করায় জেলাজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে নেতা-কর্মীদের মাঝে।
বিজ্ঞাপন
খবর নিয়ে জানা গেছে, গত ২৩ মার্চ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নোয়াখালীর সদর উপজেলার নেওয়াজপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের ২০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই কমিটিতে সভাপতি করা হয় ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি (পাস) কোর্সের ছাত্র মো. ইলিয়াছ সুজনকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় নোয়াখালী সরকারি কলেজের ডিগ্রি (পাস) বিবিএস কোর্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মুরাদ হোসেন রাব্বিকে।
নোয়াখালী সরকারি কলেজের ছাত্র মুরাদ হোসেন রাব্বিকে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক করায় নেতৃবৃন্দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এক কলেজের ছাত্র হয়ে কীভাবে অন্য কলেজ কমিটির একটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্বে আসে এ প্রশ্ন অনেকের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সদ্য গঠিত কমিটির দায়িত্ব পাওয়া মুরাদ হোসেন রাব্বি ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এরপর ২০২০-২০২১ সেশনে স্নাতক বিবিএস বিভাগে নোয়াখালী সরকারি কলেজে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি নোয়াখালী সরকারি কলেজের ডিগ্রি (পাস) বিবিএস কোর্স-এর দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত রয়েছেন। তার শ্রেণি রোল নম্বর- ৩৪৭৩, রেজিস্ট্রেশন নম্বর- ২০১০৪১৭২৭৯২। কমিটি ঘোষণার পর ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক মুরাদ হোসেন রাব্বিকে কলেজে নিয়ে প্রিন্সিপালসহ অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক ও বর্তমান একাধিক ছাত্র নেতা বলেন, কোনো দলের ছাত্র সংগঠনের কলেজ কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা অন্য কোনো পদ অথবা সদস্য হতে হলেও ওই কলেজের শিক্ষার্থী হতে তবে। এটি দলের সাংগঠনিক নিয়ম/নীতি। কিন্তু, সম্প্রতি এমন সাংগঠনিক নিয়মের উল্টো ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালীতে। গত ২৩ মার্চ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসাসহ জেলার ৩৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। যেখানে নোয়াখালী সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত একজন শিক্ষার্থীকে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। অথচ, এইচএসসি পাশের পর থেকে ওই কলেজে তার ছাত্রত্ব নেই। এ ধরনের ঘটনা আমাদের ছাত্রদল তথা বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কলেজের দায়িত্ব পাওয়া ছাত্রনেতা যদি কলেজে অধ্যয়নরত না হয়, তাহলে সে কীভাবে ওই কলেজের নেতৃত্ব দিবে। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দকে এসব কমিটি দিতে আরও যাচাই-বাছাই করে দেওয়ার আহ্বান জানান তারা। অন্যথায় দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিজ্ঞাপন
ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. ইলিয়াছ সুজন জানান, মুরাদ হোসেন রাব্বি আমার কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি এ কলেজের শিক্ষার্থী বলে আমি শুনেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন রাব্বি বলেন, কেন্দ্র থেকে কমিটি দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি কোন কলেজের শিক্ষার্থী বা কীভাবে পদ পেয়েছেন - এ ধরনের প্রশ্নের আর কোনো জবাব দেননি তিনি।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেছেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। যেহেতু কমিটি বেশ কিছু দিন আগে হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে লোকজন আপনাদের কাছে অভিযোগ করেছে এটা দুঃখজনক। তারা নিজেদের সংগঠনকে বিতর্কিত করার জন্য এগুলো করছে। আমাদের প্রায় এক হাজার কমিটি হয়েছে এবং তারা সব কাগজপত্র পরীক্ষা করে কমিটি দিয়েছে।
প্রতিনিধি/ এমইউ

