বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ফেসবুকে গুজব দেখে নেত্রকোনায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে হামলা

জেলা প্রতিনিধি, নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩১ এএম

শেয়ার করুন:

ফেসবুকে গুজব দেখে নেত্রকোনায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে হামলা
বর্ষবরণের আজকের ছবি ও ফেসবুকে পোস্ট করা ১৪৩০ সনের ছবি

নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চে হামলার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা যুবদলের কয়েক নেতাদের বিরুদ্ধে। এ সময় ওই নেতারা মঞ্চ থেকে শিল্পদের নামিয়ে দেওয়াসহ সামনে বসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) অন্যান্য অতিথিদের লাঞ্ছিত করেন। একই সঙ্গে অনুষ্ঠানের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে দেন। এতে করে অনুষ্ঠানটি পণ্ড হয়ে যায়।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা মুক্তমঞ্চে এ ঘটনা ঘটে।1000062344


বিজ্ঞাপন


উপজেলা প্রশাসন ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার সকাল থেকে আটপাড়া উপজেলা পরিষদসংলগ্ন মুক্তমঞ্চে প্রশাসন আয়োজিত বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলছিল। এতে বিভিন্ন সামজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ নেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দ্বিতীয় অধিবেশন চলাকালীন ‘উপজেলা প্রশাসন বিদ্যানিকেতন’ এর শিক্ষার্থীরা নৃত্য পরিবেশন করছিল। এসময় উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নূর ফরিদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক মোদাচ্ছের হোসেন ওরফে কাইয়ুম, কামাল হোসেন তালুকদারসহ স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন। পরে তারা ইউএনওকে এখনি অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন। এ সময় ইউএনও কারণ জানতে চাইলে মঞ্চের ব্যানারে কেন স্থান হিসেবে ‘উপজেলা পরিষদ বঙ্গবন্ধু চত্বর’ লেখা হয়েছে? এ কথা বলে যুগ্ম আহ্বায়ক মোদাচ্ছের হোসেনের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা মঞ্চে উঠে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দিয়ে মঞ্চে থাকা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেন, এ সময় ইউএনওসহ কর্মকর্তারা তাদের বাধা দিতে চাইলে ওই নেতারা তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। তাদের মধ্যে এক নেতা উপস্থাপককে মারধর করে মাইক কেড়ে নিয়ে ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দসহ ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করে আন্দোলনের ঘোষণা দেন।

আরও পড়ুন

সাদুল্লাপুরে বর্ষবরণে জাতীয় সংগীত বাজানো নিয়ে হট্টগোল

প্রত্যক্ষদর্শী এক কর্মকর্তা জানান, তখন ইউএনও বলেন ব্যানারে তো কোনো ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ লেখা নেই। তখন সদস্য সচিব নূর ফরিদ আবারও বলেন না ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর নাম আছে। ফেইসবুকেও ব্যানারের ছবি পোস্ট আছে। আমার ফোনেও এই ছবি একজন পাঠিয়েছেন। অনুষ্ঠান এখনই বন্ধ করতে হবে। বিশঙ্খলার কারণে একপর্যায়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে অনুষ্ঠানটি পণ্ড হয়ে যায়। পরে দেখা যায় ফেইসবুকে পোস্ট করা ওই ছবিটি ১৪৩০ সালের।

ইউএনও রুয়েল সাংমা বলেন, উপজেলার যুবদলের সদস্য সচিব নূর ফরিদের নেতৃত্বে কাইয়ুম (মোদাচ্ছের হোসেন), কামালসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী সংঘবদ্ধ হয়ে হঠাৎ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মঞ্চের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় আমি কারণ জানতে চাইলে আমাকেসহ কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন। উপস্থাপককে মারধর করে মাইক হাতে নিয়ে আমাকে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিষয়টি উদ্বোধন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


1000062308

আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, যখন এ ঘটনাটি ঘটেছে তখন আমি উপস্থিত ছিলাম না। অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নূর ফরিদ খান বলেন, আমরা একটি স্থানে বসেছিলাম। হঠাৎ একজন আমার ম্যাসেঞ্জারে একটি ব্যানার দেয়। ওই ব্যানারে বঙ্গবন্ধু চত্বর লেখা ছিল। ফেইসবুকেও একজনের শেয়ার দেখেছি। পরে আমরা মঞ্চে গিয়ে কারণ জানতে চাই। এ সময় আমাদের দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোদাচ্ছের হোসেন, কামাল হোসেন, সদস্য মাসুক, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল, সদস্য সচিব রুপণ, ছাত্রদলের টিটু, মোস্তাকিমসহ কয়েকজন ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। পরে প্রশাসনের লোকজন আমাদের নিশ্চিত করেন যে ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর নাম নেই। বিষয়টি আমাদের ভুল হয়ে গেছে। এর জন্য আমরা ইউএনও মহোদয়ের কাছে ভুল স্বীকার করেছি। মাফ চেয়েছি। আপনারাও বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর আমরা কাউকে লাঞ্ছিত করিনি। এটা মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম হওলালী বলেন, যে ঘটনাটি ঘটেছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা দলীয়ভাবে বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর