বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

আ’লীগের লোকজনের মারধরে ১০ বছর ধরে পাগল স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা

জেলা প্রতিনিধি, পিরোজপুর
প্রকাশিত: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
মো. হানিফ শেখ

পিরোজপুরের নাজিরপুরে আওয়ামী লীগের লোকজনের বেদম মারধরে পাগল হয়ে গেছেন মো. হানিফ শেখ (৩৫) নামের এক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা।  ১০ বছর ধরে তিনি মানসিক ভারসম্যহীন ও মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের অনুগত আওয়ামী নেতা-কর্মীদের নির্যাতনে পাগল হয়ে হানিফ এখন জীবন্ত লাশ হয়ে গেছেন। 


বিজ্ঞাপন


মানসিক ভারসম্যহীন এ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কলাতলা গ্রামের মৃত সিদ্দিক শেখের ছেলে। তিনি সদর ইউনিয়নের কলাতলা ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ছিলেন। 

স্থানীয় বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা তার এ অবস্থার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি মোশারেফ হোসেন খান ও স্বৈরাচার সরকারের অনুগত পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করেছেন।

মানসিক ভারসম্যহীন ভুক্তভোগী হানিফ শেখের ছোট ভাই উপজেলা কৃষক দলের আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. আনিচ শেখ বলেন, তার বড় ভাই হানিফ গত ২০১৪ সালের ৬ অক্টোবর সকালে নিজ বাড়ি থেকে ব্যবসার কাজে খুলনা যাচ্ছিলেন। এ সময় উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের বুইচাকাঠীর কুদিরবাড়ি বাজার সংলগ্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগের কিছু লোকজন তাকে আটকে বেদম মারধর করে। পরে তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি (তখন সাধারন সম্পাদক) মো. মোশারেফ হোসেন খানের নির্দেশে দলীয় অফিসে এনে সেখানে ওই নেতা ও থানা পলিশের সামনে বসে বেঁধে রেখে মারধর করেন। তখন পৈশাচিক নির্যাতনে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেও পরে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি ছয় মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হন। সে সময় থেকে মানসিক ভারসম্যহীন হয়ে পড়েন মো. হানিফ শেখ। তাকে বাড়িতে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। সম্প্রতি চিকিৎসকের পরামর্শে তার শিকল খুলে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তার ভাইয়ের ওপর হামলার একই দিন রাতে তার বাড়িতে হামলা করে আওয়ামী লীগের লোকজন। পরের দিন স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছয়টি বড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এখন আর্থিক অভাব-অনটন ও চিকিৎসার অভাবে নিদারুণ মানবেতর জীবন যাপন করেছেন তার ভাই। এমন কী এর আগে তার বড় ভাই হানিফ শেখের নামে পাঁচটি এবং তার নামে আটটি মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দেওয়া হয়। মামলা ও ঘর পুড়িয়ে দেওয়ায় ওই পরিবারটি এখন পুরোপুরি নিঃস্ব। 


বিজ্ঞাপন


এখন স্বজন ও স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের দাবি - হানিফ শেখের চিকিৎসা ও তার পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিক বিএনপি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একইসাথে মানসিক ভারসাম্যহীন হানিফকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হোক।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মো. রিয়াজ ফরায়েজী বলেন, বিএনপি করার অপরাধে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ও মানবেতর জীবন যাপন করছেন হানিফ শেখ। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের অনুগতদের অত্যাচারে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা অনেক ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হয়েছেন। হানিফ তারই একটি দৃষ্টান্ত।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. মিজানুর রহমান দুলাল বলেন, গত ২০১৪ সালের ৭ আক্টোবর কোনো কারণ ছাড়াই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে উপজেলার সদর ইউনিয়নের কলাতলা গ্রামে হামলা চালায়। সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঘর-বাড়িতে লুটপাট করে এবং দোকানসহ ছয়টি বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগের দিন ওই এলাকার স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হানিফ শেখকে ধরে কয়েক দফা মারপিট করে পুলিশে দেয়। তখন থেকে হানিফ মানসিক ভারসম্যহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তখন থানা পুলিশ এ বিষয়ে কোনো মামলাও নেয়নি। এখন এ ঘৃণ্য ও অমানবিক নির্যাতনের বিচার চাই আমরা। 

 জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন বলেন, তখন ওই গ্রামে আওয়ামী লীগের লোকজনের তাণ্ডব ছিল খুবই ভয়াবহ। ওই গ্রামের বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়াসহ লুট-পাট করা হয়। কয়েকজনের গোয়াল থেকে গরু পর্যন্ত লুট করে নেওয়া হয়। হামলা ও মামলার ভয়ে ওই এলাকার বিএনপির নেতা-কর্মীরা অন্যত্র পালিয়ে গিয়েছিলেন। এমনটি হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের খবর শুনে সেখানে দেখতে গেলে পুলিশ আমাকেও বাঁধা দেয়।

প্রতিনিধি/ এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন