মাউন্ট এভারেস্ট ও লোৎসে জয় করার পর এবার পৃথিবীর দশম সর্বোচ্চ বিপজ্জনক পর্বত অন্নপূর্ণা-১ অভিযানে নেপাল যাচ্ছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার সন্তান পর্বতারোহী বাবর আলী। আগামীকাল, ২৪ মার্চ অভিযানের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বেন তিনি।
পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের ফেসবুক পেইজে রোববার (২৩ মার্চ) দেওয়া এক পোস্টে এই তথ্য জানান বাবর আলী। তিনি বলেন, ‘এভারেস্ট-লোৎসে অভিযানের পর থেকেই বিশ্বের ১৪টি আট হাজার মিটার পর্বত আরোহণের ইচ্ছা পোষণ করছি। অন্নপূর্ণা-১ অভিযান সে লক্ষ্যের দিকে আরেকটি পদক্ষেপ।’
বিজ্ঞাপন
বাবর আলী আরও বলেন, ‘ধীরে ধীরে বাকি পর্বতগুলোর চূড়া ছুঁতে চেষ্টা করব। তবে অন্নপূর্ণা-১ অভিযান নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং। সামিটের সাথে পর্বতে প্রাণ হারানো আরোহীদের অনুপাত লক্ষ্য করলেই এই পর্বতের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে ধারণা করা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেশিরভাগ পর্বতারোহীই বিশ্বের উঁচু সব পর্বতে দেশের পতাকা হাতে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। আমি সব সময় চ্যালেঞ্জিং আর নতুন কিছু করতে পছন্দ করি বলেই অন্নপূর্ণা-১ এর মতো শৃঙ্গ বেছে নিয়েছি।’
ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের ফেসবুক পেইজে জানানো হয়, ২৪ মার্চ অভিযানের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বেন বাবর। পর্বতারোহণের প্রয়োজনীয় অনুমতি ও নানা সরঞ্জাম কেনার কাজ শেষ করে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে পোখারা হয়ে তাতোপানির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন তিনি। চার দিনের ট্রেক শেষে পৌঁছাবেন অন্নপূর্ণা নর্থ বেস ক্যাম্প। মূল অভিযান শুরু হবে সেখান থেকেই।
এতে আরও জানানো হয়, বেস ক্যাম্প থেকে উপরের ক্যাম্পগুলোতে ওঠানামা করে শরীরকে অতি উচ্চতার সাথে খাপ খাইয়ে নেবেন এই পর্বতারোহী। পুরো অভিযানে সময় লাগবে প্রায় চল্লিশ দিন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এপ্রিল মাসের ৩য় সপ্তাহ কিংবা শেষ সপ্তাহে চূড়ায় আরোহণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অভিযানের ব্যবস্থাপক এবং ক্লাবটির বর্তমান সভাপতি ফরহান জামান। বক্তব্য রাখেন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের উপদেষ্টা শিহাব উদ্দীন এবং পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ভিজুয়াল নিটওয়ারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ নুর ফয়সাল।
এবারের অভিযানে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বাবরের পাশে দাঁড়িয়েছেন ফ্লাইট এক্সপার্ট এবং এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যাল। এছাড়া দেশের পর্বতারোহণ মহলের পরিচিত মুখ ও পর্বত অনুরাগীরাও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। শেষে বাবরের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া হয়।
পৃথিবীতে সর্বমোট ১৬টি আট হাজার মিটার (২৬ হাজার ২৪৬ ফুট) কিংবা তার অধিক উচ্চতায় পর্বত আছে। তন্মধ্যে নেপালের গন্ডকি প্রদেশে অবস্থিত ২৬ হাজার ৫৪৫ ফুট উচ্চতার অন্নপূর্ণা-১ শৃঙ্গটি বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক পর্বত হিসেবে স্বীকৃত। পর্বত গাত্রের খাড়া ঢাল, তুষারধসের প্রবণতা এবং অনিশ্চিত আবহাওয়া—এই তিন মিলে এই পর্বতে আরোহণ পর্বতারোহীদের কাছে সব সময়ই কঠিন বলে বিবেচিত হয়ে এসেছে।
আর এই ভয়ানক পর্বতে এটিই হতে চলেছে বাংলাদেশ থেকে প্রথম অভিযান, যা আয়োজন করছে পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স। বাবর সফলভাবে অন্নপূর্ণা-১ শৃঙ্গে আরোহণ করতে পারলে এটি হবে তার ৩য় আট হাজার মিটারি পর্বত।
প্রসঙ্গত, পর্বতারোহণে বাবর আলীর পথচলা শুরু ২০১৪ সাল থেকে। ট্রেকিংয়ের জগতে তার হাতেখড়ি হয় ২০১০ সালে, পার্বত্য চট্টগ্রামের নানা পাহাড়ে পথচলার মধ্য দিয়ে। চট্টগ্রামের পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক তিনি। এই ক্লাবের হয়ে গত এগারো বছরে হিমালয়ের নানা শিখরে অভিযান করে আসছেন তিনি।
ভারতের উত্তরকাশীর নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন ২০১৭ সালে। ২০২২ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম দুর্গম ও টেকনিক্যাল চূড়া আমা দাবলাম (২২ হাজার ৩৯৯ ফুট) আরোহণ করেন বাবর।
গত বছরের ১৯ মে এভারেস্ট জয় করেন পেশায় চিকিৎসক বাবর আলী। দু’দিন পর ২১ মে নেপালের স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে তিনি ২৭ হাজার ৯৪০ ফুট উচ্চতার লোৎসে চূড়া স্পর্শ করেন। বাবর প্রথম বাংলাদেশি, যিনি পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বতশৃঙ্গ লোৎসে জয় করেছেন।

৩৩ বছর বয়সী বাবর আলীর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চর গ্রামের নজু মিয়া হাট এলাকায়। বাবা লিয়াকত আলী কুয়েত প্রবাসী ছিলেন। ২০১৭ সালে দেশে ফিরে বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন। মা লুৎফুন্নাহার বেগম গৃহিণী। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে বাবর দ্বিতীয়।
প্রতিনিধি/একেবি

