দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে মানুষের ইফতারের পণ্য সামগ্রী কিনে খেতে বা বাসায় তৈরি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযমের মাস রমজান এলেই দেশে দ্রব্যমূল্যে হু হু করে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময় যেখানে সাধারণ মানুষের জন্য ইফতার সামগ্রী জোগাড় করাই কঠিন হয়ে উঠেছে, সেখানে ইফতারের পণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো মাত্র ১০ টাকায় রোজাদারদের জন্য ইফতার বিতরণের এক অনন্য উদ্যোগ নিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থী কাজী মিরাজ।
বিজ্ঞাপন
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। নিজের সঞ্চয়, টিউশন ও কোচিং থেকে যে টাকা আয় করেন তা দিয়ে গত বছর প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগ নেন তিনি। প্রথমে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুরু করলেও ধীরে ধীরে শিক্ষকরাও এ আয়োজনে এগিয়ে আসেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে ছোলা, মুড়ি, চপ, বেগুনি, কলা, জিলাপি ও খেজুরের মিশেলে ১০ টাকার এই ইফতারির প্যাকেজ বিক্রি করেন তিনি। বাজারমূল্যে এই ইফতারের দাম কমপক্ষে ৫০-৬০ টাকা।
১০ টাকায় ইফতার নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের। দেশে এখন দ্রব্যমূল্যের যে চড়া দাম সেখানে সারাদিন রোজা শেষে পেট ভরে ইফতার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সেখানে মিরাজ মাত্র ১০ টাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ইফতার বিতরণ করছে, যা সত্যি প্রশংসা পাওয়া মতো উদ্যোগে।
বিজ্ঞাপন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, দেখেন প্রতিদিন ৫০-১০০ টাকায় ইফতার করা আমার মতো অনেকের জন্য অসম্ভব। সেখানে মাত্র ১০ টাকায় ইফতার করছি।
১০ টাকায় ইফতার বিক্রির কারণ জানতে চাইলে কাজী মিরাজ বলেন, আমরা যারা মধ্যবিত্ত আছি আমাদের সাধারণত ১০ টাকার ছোলা আর দুইটা খেজুর হলে ইফতার হয়ে যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে যেসব দোকান আছে সেগুলোতে যারা সামর্থ্যবান আছে তারা ৫০ থেকে ১০০ টাকায় ইফতার কিনে। সেখানে আমার মতো যারা আছে তারা ১০ টাকার ছোলা কিনতে যায় না বা লজ্জাবোধ করে। সবাই যাতে ১০ টাকায় সবকিছু পায় সেজন্য আমার এই উদ্যোগ।
তিনি আরও বলেন, প্রথম দুই-তিন রোজা নিজের জমানো টাকা দিয়ে ৮০ প্যাকেট ইফতার দিয়েছি, এখন ১০০ প্যাকেট দিচ্ছি এবং সামনে আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিভাগের কিছু শিক্ষক আর্থিক সহায়তা করেছেন। আশা করি প্রথম ১৫ দিন চালিয়ে যেতে পারব। যদি অনুদান পাই, তাহলে রমজানজুড়ে ক্যাম্পাস খোলা থাকা পর্যন্ত এই উদ্যোগ চালিয়ে যেতে চাই। গত বছর শিক্ষকদের সহযোগিতায় প্রত্যাশার চেয়েও বেশি শিক্ষার্থীর কাছে ইফতার পৌঁছেছিল। এবারও অনেকে সহায়তা করেছেন ও করবেন, আশা করি এবারও সফল হব।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সভাপতি শাহ্ মোহাম্মদ আলমগীর খাঁন বলেন, রমজান মাসে শিক্ষার্থীদের ১০ টাকার বিনিময়ে ইফতার একটি খুব ভালো উদ্যোগ। সমাজের যারা বিত্তবান আছে তারাও এভাবে এগিয়ে আসলে মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। আর রোজাদারকে ইফতার করানো পুণ্যের কাজ।
কুমিল্লার স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী মওদুদ আবদুল্লাহ শুভ্র জানান, দ্রব্যমূল্যের বাজারে মাত্র ১০ টাকা বিনিময়ে ইফতার প্যাকেজ সত্যি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এভাবে একে অপরের সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসলে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি হবে। পরস্পরের মধ্যে আন্তরিকতা তৈরি হবে।
প্রতিনিধি/এসএস