বরগুনায় ধর্ষণের শিকার কিশোরীর ছোট ভাই সাবালক না হওয়া পর্যন্ত ওই পরিবারের পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।
সোমবার (১৭ মার্চ) সকাল ১১টায় জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান গত ৪ মার্চ বরগুনা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কালিবাড়ি রোডের সপ্তম শ্রেণির স্কুল পড়ুয়া ধর্ষিতা মেয়ের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে ও সার্বিক খোঁজ-খবর নিতে তাদের বাড়িতে ছুটে আসেন।
বিজ্ঞাপন
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে সকাল ১০টায় বরগুনা সাকির্ট হাউজ মাঠে অবতরণ করেন। সেখান থেকে তিনি সরাসরি নির্যাতিত পরিবারটির বাড়িতে যান এবং ধর্ষিতার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি পরিবারটির সকল বিষয় অবগত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তাদের সমবেদনা জানান।
তিনি বলেন, আমাদের লড়াই এদেশের সকল জুলুমবাজ কায়েমী স্বার্থগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যা কুরআনের নির্দেশ। আর এ নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি মানবিক ও আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই লক্ষ্যে আগামী দিনে ঐক্যবদ্ধ থাকার জোর আহ্বান জানাই। বাংলাদেশের সকল নির্যাতিত, নিপীড়িত, দিশেহারা এবং বিপর্যস্ত পরিবারের পাশে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও পাশে থাকবো।
বরগুনা পৌর এলাকার ওই পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, ৪ মার্চ বিকেলে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া কিশোরীকে (১৪) এক বখাটের নেতৃত্বে কয়েকজন অপহরণ করে। এরপর তাকে ধর্ষণ করা হয়। পরের দিন সকালে ওই কিশোরীকে স্থানীয় পার্কে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা (৩৭) ওই দিন রাতেই বরগুনা সদর থানায় সিজিত রায়সহ দু’জনের নামে ধর্ষণের মামলা করেন। এরপর ১১ মার্চ কর্মস্থলে গিয়ে নিখোঁজ হন কিশোরীর বাবা। ওই দিন দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে বাড়ির পাশের ঝোপে তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরিবারের দাবি, পরিকল্পিতভাবেই বাদীকে হত্যা করা হয়েছে।
ওই কিশোরীর বাড়িতে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার পর শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় জামায়াতের আমির বলেন, শিশুটির সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হয়েছে, যা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। তার বাবা এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে একটি মামলা করেছেন। কিন্তু এর ঝাল মেটানোর জন্য তার বাবাকে খুন করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি পরিবারের সদস্যদের প্রতি।
বিজ্ঞাপন
শফিকুর রহমান বলেন, সামাজিকভাবে যদি আমরা এভাবে মজলুমের পাশে সবাই এগিয়ে আসি, তাহলে আশা করি মজলুমরা শক্ত হবে। আর জালিমরা ভয় পাবে। ওদেরকে ভয় দেখাতে হবে, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি, প্রতি মাসেই আমরা তাদের সঙ্গে থাকব। এই পরিবারের বাচ্চাগুলো তার বাবা থাকা অবস্থায় যেভাবে চলেছে, আমরা আশা করি, তার চেয়ে এক ভাগ বেশি ভালো থাকবে ইনশাল্লাহ। আমরা এ–ও বলেছি, তাদের একটি নবজাতক শিশু রয়েছে, তার বয়স ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই পরিবারের সঙ্গে থাকব। মামলার ব্যাপারে জনাব তারেক রহমান সাহেব দায়িত্ব নিয়েছেন। আর লেখাপড়া, তাদের জীবন নির্বাহ— একটি সাধারণ পরিবারে যেভাবে চলে, আমরা সেভাবে চালাব।
এরপর তিনি সেখান থেকে বরগুনা টাউন হল ময়দানে বরগুনা জেলা জামায়াত আয়োজিত সংক্ষিপ্ত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা আজকে এসেছি একটি মজলুম পরিবারের দুঃখকে ভাগ করে নিতে। ধর্ষিতা মেয়েটির বাবা অতি সাধারণ একজন অমুসলিম নাগরিক। তার বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও ৩টি সন্তান রয়েছে। পরিবারটি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়েছে। এই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাই আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করে এই অসহায় পরিবারটির দায়িত্ব নিলাম ও পাশে থাকার ঘোষণা করছি।
জামায়াতের আমির আরও বলেন, আমরা চাই কুরআনের শাসন যারা চালু করবে আল্লাহ তায়ালা তাদের হাতে আগামীর বাংলাদেশের শাসনভার তুলে দিবেন। আমরা আগামী দিনে একটি দুর্নীতি ও দুঃশাসনমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই।
জেলা জামায়াতের আমির জনাব অধ্যাপক মাওলানা মুহিবুল্লাহ হারুনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান আল মামুনের সঞ্চালনায় উক্ত পথসভায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়াযযাম হোসাইন হেলাল, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বরিশাল অঞ্চল টিম সদস্য মাওলানা ফখরুদ্দিন খান রাযী, বরিশাল মহানগরী আমির অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মোহাম্মাদ বাবর, জামায়াত নেতা ডা. সুলতান আহমেদ প্রমুখ।
/এফএ
