বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে

উপজেলা প্রতিনিধি, বেনাপোল (যশোর)
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমে গেছে। তবে আমদানি কমলেও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রভাব পড়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে। 

২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি) ৮ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি কমেছে ১৯ হাজার ২০ দশমিক ৮২ মেট্রিক টন। তবে পণ্য আমদানি কমলেও চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০৮দশমিক৬১ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এছাড়া রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রফতানি পণ্যের পরিমাণ বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমলেও রফতানি পণ্যের মূল্য ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।


বিজ্ঞাপন


এ বন্দরে আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্পকলকারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, গার্মেন্টস, শিশু খাদ্য, মাছ, কেমিকেলসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। আর রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট, পাটের তৈরি পণ্য, গার্মেন্টস, তৈরি পোশাক, কেমিকেল, টিস্যু পেপার, মেলামাইন ও মাছ উল্লেখযোগ্য। দেশের মোট ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য হয় ১৬টি বন্দরের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি) প্রথম ৮ মাসে ভারত থেকে মোট ২৭ লাখ ৪০ হাজার ৯৯ মেট্রিক টন পণ্য রফতানি হয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) প্রথম ৮ মাসে মোট ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৭১ মেট্রিক টন পণ্য রফতানি হয়েছিল। যা গত অর্থবছরের তুলনায় একই সময়ে ২০ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন পণ্য কম রফতানি হয়েছে। তবে রফতানি কম হলেও রফতানি মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ দশমিক ০৭ শতাংশ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি) প্রথম ৮ মাসে ভারত থেকে মোট ১১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪৬ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) প্রথম ৮ মাসে মোট ১১ লাখ ৫২ হাজার ৭৬৭ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছিল। যা গত অর্থবছরের তুলনায় একই সময়ে ১৯ হাজার ২০ দশমিক ৮২ মেট্রিক টন কম আমদানি হয়েছে।

বেনাপোল কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার এইচ,এম শরিফুল হাসান বলেন, পণ্য আমদানি কমলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০৮ দশমিক ৬১ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। বেনাপোল কাস্টম হাউসে চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। সেই আলোকে অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৪৫৩দশমিক৩১ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ৪ হাজার ৬৬১ দশমিক ৯২ কোটি টাকা। যার মধ্যে জুলাই মাসে ৪১৩ দশমিক ২২ কোটি টাকা, আগস্ট মাসে ৪০১ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ৪৮৯ দশমিক ১১ কোটি টাকা, অক্টোবর মাসে ৫২৪ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা, নভেম্বর মাসে ৬১৪ দশমিক ৭১ কোটি টাকা, ডিসেম্বর মাসে ৭৭৮ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা, জানুয়ারি মাসে ৬২১ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৮১৮ দশমিক ৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।

বেনাপোল বন্দর আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সভাপতি আলহাজ্জ্ব মহসিন মিলন জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাণিজ্য সম্প্রসারণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। গত দুই মাসে বেনাপোল বন্দরের শূন্য রেখায় চালু করা হয়েছে বন্দর কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল ও বন্দরে বসানো হয়েছে স্ক্যানিং মেশিন। দ্রুত পণ্য খালাস ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উদ্যোগে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব ফাঁকি রোধে ও বাণিজ্য সহজীকরণের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এতে বর্তমানে বাণিজ্যে অনেকটা গতি ফিরে এসেছে, হয়রানি কমেছে। যা সামনের দিনে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমদানি ও রফতানি বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখবে। এছাড়া তিনি আরও জানান, বিগত সৈরাচার হাসিনা সরকারের শেষ সময়ে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাওয়া যাচ্ছিল না। এ কারণে সেসময় পর্যাপ্ত এলসি খোলা সম্ভব ছিল না। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ধীরে ধীরে ডলার সংকট কেটে গেছে। এখন আর আমদানিকারকদের এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে না।


বিজ্ঞাপন


বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ বলেন, দেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরে দুই দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েন থাকার কারণে ভারত থেকে আমদানি কিছুটা কমলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেশিরভাগ আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। তবে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব ফাঁকি রোধে কড়াকড়ি আরোপ করায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদ আলী জানান, বেনাপোল বন্দরে মালামাল লোড-আনলোড কাজে পর্যাপ্ত ক্রেন ও ফর্কলিফ্ট না থাকলেও ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য দ্রুত খালাসে কাজ করছে বন্দর শ্রমিকরা।

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. শামীম হোসেন জানান, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর জন্য বেনাপোল স্থলবন্দরের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক বন্দর খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাপেক্ষে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড এবং আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বন্দরে নতুন করে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হলে বাণিজ্য সম্প্রসারণে বড় ভূমিকা রাখবে।

বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. কামরুজ্জামান জানান, বৈধ আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সহজীকরণের জন্য সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এতে বেনাপোল কাস্টম হাউসের মাধ্যমে সার্বিক আমদানি কমলেও রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ২০৮দশমিক৬১ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। এরূপ পরিস্থিতি বিরাজ করলে অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। এছাড়া রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রফতানি পণ্যের পরিমাণ ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমলেও রফতানি পণ্যের মূল্য ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

News Hub