নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অপারেশন ডেভিল হান্টের নামে রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলীর গ্রেফতার বাণিজ্য এখন চরম পর্যায়ে। গ্রেফতার আতঙ্কে দিন কাটছে এলাকার সাধারণ মানুষের। গ্রেফতারের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ৭০ বছরের বৃদ্ধরাও।
ভুক্তভোগী ওবায়দুর রহমান বাচ্চুর স্ত্রী মিনার বেগম জানান, বুধবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে তার স্বামী মো. ওবায়দুর রহমান বাচ্চু (৭৩), বাড়ি দাউদপুর ইউনিয়নের খৈসাইর গ্রামে। পাশের গ্রাম আসলিপাড়া এলাকার একটি দোকান থেকে ওসি সাহেব চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে ওবায়দুর রহমানকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়।
বিজ্ঞাপন
পরে তাকে দাউদপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড সেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেখিয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ।
আরেক ভুক্তভোগী শামীম জানায়, তার বড় ভাই সজীবকে (৩০) রূপগঞ্জের ব্রাহ্মণখালী এলাকা থেকে পুলিশ থানায় ডেকে নিয়ে যায়। পরে তাকে দাউদপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের প্রচার সম্পাদক দেখিয়ে মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

ওবায়দুর রহমানের স্ত্রী মিনারা বেগমের দাবি তার স্বামী ওবায়দুর রহমান (বাচ্চু) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক ব্লক সুপারভাইজার। তিনি কোনো দলের সঙ্গে জড়িত নন। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেখিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
বিজ্ঞাপন
পরিবারের দাবি খৈসাইর গ্রামের ইট ভাটার মালিক আবু তাহেরের সঙ্গে ওবায়দুর রহমান বাচ্চুর জমি নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। আবু তাহের পুলিশকে টাকা দিয়ে ওবায়দুর রহমান বাচ্চুকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দিয়েছেন।
রুপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা বীরদর্পে ঘোরাঘুরি করলেও পুলিশ তাদেরকে না ধরে সাধারণ নিরপরাধ মানুষকে গ্রেফতার করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর স্বজন ও এলাকাবাসীর।
একজন গণমাধ্যমকর্মী রুপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলীর কাছে ফোন করে ওবায়দুর রহমানকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে জানতে চাইলে ওসি লিয়াকত আলী সুকৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং বলেন, একটি রাজনৈতিক মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি যাচাই-বাছাই চলছে, আমাকে একটু সময় দিন।

আরেক ভুক্তভোগী মোটরসাইকেল চুরি যাওয়ার বিষয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তাকে উল্টো পুলিশ মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে এবং বলছে মোটরসাইকেল কোথায় আছে সেটি বলতে।
ওবায়দুর রহমান বাচ্চুর আত্মীয়রা বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদারকে জানালে তিনি বলেন যেহেতু চালান দিয়ে ফেলেছে আপনারা জামিনের ব্যবস্থা করেন।
অপারেশন ডেভিল হান্ট চালুর পর থেকে প্রতি রাতে ওসি লিয়াকত আলীর চলে রমরমা ব্যবসা। নিরীহ এবং বিত্তবান লোকদের ধরে এনে অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া এবং অর্থ না পেলে রাজনৈতিক মামলায় তাদেরকে ফাঁসিয়ে দেওয়াই হল ওসি লিয়াকতের কাজ।
আরও পড়ুন
এলাকাবাসীর অভিযোগ ওসি লিয়াকত রূপগঞ্জ থানায় টাকা বানানোর মেশিন বসিয়েছে। নিরীহ লোকজনকে ধরে এনে অপারেশন ডেভিল হান্টের নামে রাজনৈতিক মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
জানা যায়, ওসি লিয়াকত এর আগে ডিবিতে কর্মরত ছিল। তিনি সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন এবং তাকে দিয়ে ডিবি প্রধান হারুন তার বিশেষ বিশেষ অপারেশনগুলো করাতেন। এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ওসি লিয়াকত আলীকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
প্রতিনিধি/এসএস

