আইসক্রিম দেয়ার কথা বলে ৬ বছর বয়সী শিশুর সঙ্গে গড়ে তোলা হয় সখ্যতা। এরপর ওয়াজ মাহফিল থেকে শিশুটিকে নেয়া হয় নির্জন এলাকায়। পরে সেখানেই কয়েক দফা ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে চেপে ধরা হয় নাক মুখ। এতে ঘটনাস্থলেই শ্বাসরোধে প্রাণ গেছে শিশুটির। এ ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে নিহতের পরিবারে।
অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও স্থানীয় এলাকাবাসী। তবে পুলিশ বলছে আসামির গ্রেফতারের পরে নেয়া হয়েছে আইনগত ব্যবস্থা।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরজমিনে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জীবিকার তাগিদে মাত্র ১৬ দিন আগে দেশ ছেড়ে কুয়েত প্রবাসে পাড়ি জমান শহিদুল ইসলাম। তার আদরের মেয়ে শিশু ফাতেমা আক্তারের নিথর দেহ স্বজনদের কাঁধে চড়ে আপন ঠিকানা ছেড়ে যাচ্ছে কবরস্থানে। মাত্র তিন দিন আগেও যে শিশুটি হাসিখুশিতে মাতিয়ে রেখেছিল পরিবারকে। তার নির্মম বিদায় মানতে পারছেন না যেন কেউই।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে খালার সঙ্গে বাড়ির পাশের রশুনিয়া নুরানিয়া মোহাম্মদীয়া মাদরাসার ১২তম ওয়াজ মাহফিলে যায় ফাতেমা।
বিজ্ঞাপন
এরপর থেকেই নিখোঁজ হয় শিশুটি। এ ঘটনার পরদিন ফাতেমার মা বিলকিস বেগম বাদী হয়ে সাব্বিরকে প্রধান অভিযুক্ত করে সিরাজদিখান থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এর আগেই স্থানীয়রা ওয়াজ-মাহফিল থেকে অভিযুক্ত আইসক্রিম বিক্রেতা সাব্বির খানকে (২৫) সন্দেহভাজন হিসাবে আটক করে পুলিশে দেয়।
আরও পড়ুন
পরে বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত সাব্বিরকে মুন্সিগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করে ২ দিনের রিমান্ডে আনলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে জানায়, ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ গুম করতে সেটি ডোবাতে ফেলে দেওয়া হয়। পরে আসামির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতে মরদেহটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়।
এরপর শুক্রবার সকালে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে। পরে জুম্মার নামাজ শেষে স্থানীয় সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয় নিহত শিশু ফাতেমাকে। এসময় জানাজায় অংশ নিয়ে,নির্মম এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
নিহত ফাতেমা উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নের পূর্ব রশুনিয়া গ্রামের কুয়েত প্রবাসী শহিদুল ইসলামের মেয়ে এবং রশুনিয়া মাহমুদিয়া নুরানিয়া মাদরাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্রী।
এদিকে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা আজ শুক্রবার সকালে অভিযুক্ত আসামির বাড়িঘরে ভাঙচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে, দায়েরকৃত অপহরণ মামলাটি হত্যা মামলায় রুপান্তর হয়েছে বলে জানান, সিরাজদিখান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহেদ আল মামুন। তিনি বলেন, ৬ বছর বয়সী শিশু ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর গুমের উদ্দেশে মরদেহ ফেলে দেওয়া হয় ডোবাতে। আটকের পর রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। আর মামলার আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলার রশুনিয়া গ্রামের নুরানি মাদরাসার পাশের ডোবা থেকে মরদেহ উদ্ধার হয়।
প্রতিনিধি/এসএস